বাজি বিক্রি চলছে। প্রতীকী ছবি।
রাজ্যে বাজি বিক্রি এবং পোড়ানোর উপরে সার্বিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। তৎপর হতে বলেছে পুলিশ-প্রশাসনকেও। তার পরেও শনিবার রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে প্রকাশ্যে এবং চোরাগোপ্তা, বাজি বিক্রি চলেছে। মালদহে তো বাজির বাজারও বসেছে। ওই বাজারের ব্যবসায়ীদের দাবি, বাজার বন্ধের নির্দেশ আসেনি। আদালতের নির্দেশের পরেও প্রশাসন কেন সার্বিক ভাবে তৎপর হচ্ছে না, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশকর্মীরা। তাঁদের দাবি, শুধু বিক্রি বন্ধ নয়। কালীপুজো এবং দীপাবলির রাতে বাজি পোড়ানো রুখতেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বিভিন্ন জেলায় বাজির বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন নাগরিক আন্দোলনের কর্মীরাও।
তবে এরই মধ্যে একটি বাজি ব্যবসায়ী সংগঠন দাবি করেছে, তারা কলকাতা হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে। যদিও শহরের বিশিষ্ট বাজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরও কলকাতা হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছিল। শীর্ষ আদালত কিন্তু কলকাতা হাই কোর্টের রায়কেই স্বীকৃতি দিয়েছিল। কারণ, নাগরিকদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই রায় দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। গ্রিন বাজি বাজারে অমিল। তার বদলে বাজি ব্যবসায়ীদের একাংশ ভুয়ো পরিবেশবান্ধব বাজি বিক্রি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সার্বিক ভাবে তৎপরতা চোখে না-পড়লেও কলকাতা-সহ কিছু এলাকায় পুলিশি ধরপাকড় চোখে পড়েছে। বাজি আটক করার পাশাপাশি বহু লোককে গ্রেফতারও করা হয়েছে। কালীপুজো নিয়ে শনিবার বাহিনীর অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র। লালবাজার জানিয়েছে, আদালতের নির্দেশ পালনে সব রকমের প্রস্তুতি নিয়েছে তারা। কালীপুজোর রাতে শহরে অতিরিক্ত বাহিনীও মোতায়েন করা হবে বলে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিংহ সরকার জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত বছর হাই কোর্টের নিষেধ সত্ত্বেও কালীপুজো এবং দীপাবলিতে কিছু জায়গায় বাজি পোড়ানো হয়েছিল। এ বার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে বহুতল আবাসনগুলিতে বিশেষ ভাবে নজর দিচ্ছে লালবাজার।
কলকাতা এবং লাগোয়া এলাকায় মূলত বাজি আসে দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে। আদালতের নির্দেশের পরে চম্পাহাটি, নুঙ্গির মতো এলাকায় প্রকাশ্যে বাজি বিক্রি না-হলেও চোরাগোপ্তা কেনাবেচার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের দাবি, বাজি বিক্রি বন্ধে লাগাতার অভিযোগ চলছে। উত্তর ২৪ পরগনাতেও পুলিশ বাজি বিক্রি বন্ধের কথা ঘোষণা করেছে এবং মানুষকে সতর্কও করেছে। শুক্রবার রাতে হুগলির জাঙ্গিপাড়া থেকে ৬ কেজি এবং সিঙ্গুরের বাসুবাটি থেকে প্রায় ১২ কেজি বাজি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। তবে হুগলিতে বাজির বিরুদ্ধে নাগরিক আন্দোলনও সমান তালে চলছে।
হাওড়ার পাঁচলার জয়নগর বাজার থেকে শনিবার কিছু পরিমাণ বাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। নদিয়ায় গত কয়েক দিন আতশবাজি বিক্রি হতে দেখা গিয়েছিল। আদালতের রায়ের পরে এ দিন কোনও বাজির দোকান চোখে পড়েনি। কল্যাণী রথতলা থেকে প্রচুর বাজি-সহ এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বীরভূমের কিছু জায়গায় অবশ্য প্রকাশ্যেই বাজি বিক্রি হতে দেখা গিয়েছে। বোলপুরের চৌরাস্তা এবং শহরের দোকানগুলিতে বাজির পসরা সাজানো হয়েছে।
শুক্রবার রাতে বাঁকুড়ার খাতড়ায় প্রচুর নিষিদ্ধ বাজি উদ্ধার করেছে পুলিশ। পাত্রসায়রে শব্দবাজি তৈরির অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পূর্ব বর্ধমানে বর্ধমান শহর-সহ নানা জায়গায় ‘সবুজ বাজি’ বলে কিছু বাজি বিক্রি করতে দেখা গিয়েছে কয়েক জন বিক্রেতাকে। লুকিয়ে বাজি বিক্রি করার অভিযোগে এ দিন কাটোয়া শহরের চার যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পান তাঁরা।
আদালতের নির্দেশের পর উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির একাংশে কিছু পুলিশি অভিযান শুরু হলেও অনেক ক্ষেত্রে তৎপরতার অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ। শুক্রবার রাতে শিলিগুড়ির প্রধাননগর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাজি আটক করা হয়। কোচবিহারে ভবানীগঞ্জ বাজার থেকেও বাজি উদ্ধার হয়েছে। জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, মালদহ, দুই দিনাজপুরের মতো জেলাগুলিতে পুলিশি তৎপরতা দেখা যায়নি। মালদহে বাজির বাজারগুলি খোলা থাকতে দেখা গিয়েছে।