water

Water project: প্রকল্প সত্ত্বেও জল-সমস্যা, রয়েছে ‘নির্মল’ আশাও

প্রকল্প সত্ত্বেও জল-সমস্যা, রয়েছে ‘নির্মল’ আশাও

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২২ ০৬:১৭
Share:

প্রতীকী ছবি

বাড়ি-বাড়ি পাইপে জলের সংযোগ মেলেনি। অভিযোগ, পাড়ার কলেও নিয়মিত জল মেলে না। জল-সমস্যা মেটানোর দাবিতে সম্প্রতি জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়েছে বাঁকুড়া ১ ব্লকে। এমন অভিযোগ রাজ্যের অন্যত্রও মেলে।

Advertisement

রাস্তা এবং বিদ্যুদয়নের মতোই, পরিকাঠামো প্রসঙ্গেই ওঠে বাড়ি-বাড়ি পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ এবং শৌচাগার গড়ার কথা। সে নিরিখে রাজ্যের পরিস্থিতি কী, তৃণমূলের তৃতীয় পর্বের প্রথম বছরের শেষে, প্রশ্ন আগ্রহী নাগরিকের। ঘটনাচক্রে, রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী পুলক রায় পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়ন দফতরেরও মন্ত্রী। গ্রামোন্নয়ন দফতর শৌচাগার করার কাজটি করে। মন্ত্রীর দাবি, ‘‘পানীয় জল ও শৌচাগার নিয়ে কোথাও, কোনও সমস্যা নেই। দু’টো প্রকল্পের কাজই খুব ভাল চলছে।’’

তাই কি? ২০২৪ সালের মধ্যে পশ্চিম বর্ধমানে বাড়ি-বাড়ি পানীয় জল সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ২,৫২,৮৭৭। ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত সংযোগ দেওয়া হয়েছে ৮১,০৮৮। পুরুলিয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ৫,৪৭,০০০। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ৬৮,৪১০টি পরিবার সংযোগ পেয়েছে। বাঁকুড়ায় প্রায় ৭,৪৯,০০০ বাড়ির মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশে জল-সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ঝাড়গ্রামে গত অর্থবর্ষে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ হাজার। সেখানে ১২,৭৩২টি পরিবার সংযোগ পেয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরে ৫০ শতাংশ, আলিপুরদুয়ার এবং দার্জিলিঙের পাহাড়ে ৪০ শতাংশ, মালদহে অন্তত ৩৫ শতাংশ, উত্তর দিনাজপুরে ২৫ শতাংশ এলাকায় এবং জলপাইগুড়ির গ্রামাঞ্চলে ৩৫ শতাংশ মানুষের কাছে পানীয় জল পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ।

Advertisement

মুর্শিদাবাদে ২৬টি ব্লকের মধ্যে ২৩টি আর্সেনিক দূষণপ্রবণ। সেখানে ৫,১৯,২০৭টি বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ৩,৩১,০৯৪টি বাড়িতে সংযোগ পৌঁছেছে । দুই ২৪ পরগনায় পরিস্রুত পানীয় জলের অভাবে, অবৈধ ভাবে মাটির নীচের জল তুলে জারবন্দি করে বিক্রির ব্যবসা চলছে নানা এলাকায়। তবে মন্ত্রীর প্রত্যয়, ‘‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই বাড়ি-বাড়ি পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া শেষ হবে।’’

জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রের দাবি, একটি জল প্রকল্প গড়তে অন্তত জন্য ২৪ কাঠা জমি প্রয়োজন। ২০ কাঠাতে উচ্চ জলাধার আর চার কাঠাতে গভীর নলকূপ বসানো হয়। সব জায়গায় ততটা খাস জমি মিলছে না। সে জন্য প্রকল্পের কাজ শ্লথ হচ্ছে।

তবে হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় ১,৪০০ কোটি টাকা এবং সাঁকরাইলে ৭০০ কোটি টাকা খরচে তৈরি হচ্ছে হুগলি নদীভিত্তিক পানীয় জল প্রকল্প। হুগলির গ্রামীণ এলাকার জন্য নতুন ১১৭টি প্রকল্প গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম-১ ও ২ ব্লক, নন্দকুমার ও চণ্ডীপুর ব্লকের প্রতিটি বাড়িতে রূপনারায়ণ নদ থেকে জল তুলে, পরিস্রুত করে সরবরাহের লক্ষ্যে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার জলপ্রকল্পের কাজ চলছে।

জলসঙ্কট মোকাবিলায় ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্যের কিছু পুরসভাও। কেউ চালু করেছে ‘হেল্পলাইন’, কেউ নিয়মিত পাঠাচ্ছে জলের ট্যাঙ্কার, গড়েছে ‘জল-চুরি’ রুখতে টাস্ক ফোর্স, কেউ এলাকার আবাসনগুলোকে পাম্প বসিয়ে মাটির নীচের জল তোলায় নিষেধ করেছে।

শৌচাগার পরিস্থিতি কেমন? পুরুলিয়া জেলা এখনও ‘নির্মল’ নয়। ‘মিশন নির্মল বাংলা’ প্রকল্পে জেলায় শৌচাগার নির্মাণে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫,০০,৫৫৮। এখন পর্যন্ত শৌচাগার হয়েছে ৪,৮৬,২১২। দক্ষিণ দিনাজপুরে ৭০ শতাংশ, উত্তর দিনাজপুরে ৮০ শতাংশ, দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ে ৮৫ শতাংশ, মালদহে ৯০ শতাংশ বাড়িতে শৌচাগার রয়েছে। ‘নির্মল’ উত্তর ২৪ পরগনায় ৫০ হাজার, পশ্চিম মেদিনীপুরে হাজার ষোলো, বাঁকুড়ায় প্রায় ১০ হাজার শৌচাগার গড়া বাকি। ধারাবাহিক ভাবে শৌচাগার তৈরি চলছে ‘নির্মল’ নদিয়াতেও।

কোথায় হচ্ছে সমস্যা? গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রের দাবি, বহু পরিবার ভাগ হয়ে যাওয়ায়, ‘নির্মল’ জেলায় নতুন করে শৌচাগার গড়ার প্রয়োজন হচ্ছে। আবার অনেক জেলায় ২০১১-র সমীক্ষা অনুয়ায়ী, যে সব পরিবারে শৌচাগার ছিল না, তা হয়েছে। কিন্তু নানা কারণে বহু পরিবার সমীক্ষায় বাদ পড়েছিল। এখন তাদের জন্য শৌচাগার গড়া হচ্ছে।
আশার কথা হল চার বছর আগে ‘নির্মল’ হওয়া পূর্ব বর্ধমানকে এক ধাপ এগিয়ে বর্জ্য-মুক্ত (ওডিএফ প্লাস) করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সে জন্য নতুন করে ১৯ হাজার শৌচাগার গড়া হবে। সেখানে নলের মাধ্যমে জলের ব্যবস্থা করা হবে। পূর্ব মেদিনীপুরেও বাড়ি-বাড়ি শৌচাগারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে, জনবহুল এলাকায় ‘কমিউনিটি’ শৌচাগার নির্মাণে জোর দেওয়া হয়েছে। (চলবে)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement