প্রতীকী ছবি
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ছ’টি শহরের সঙ্গে সরাসরি উড়ান যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু তাতে এ রাজ্যের কি আদৌ কোনও লাভ হবে? এই প্রশ্নই এ বার উঠতে শুরু করেছে। তার কারণ, সরাসরি উড়ান বন্ধ থাকায় অনেকেই ওই সমস্ত শহর থেকে ঘুরপথে পৌঁছে যাচ্ছেন কলকাতায়।
এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্ত, কলকাতা থেকে দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, আমদাবাদ, নাগপুর ও পুণের সরাসরি উড়ান বন্ধ রাখতে হবে। রাজ্যের অনুরোধ মেনে প্রথমে ৬ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত উড়ান বন্ধ রেখেছিল বিমান মন্ত্রক। এখন আবার রাজ্যেরই অনুরোধে ৩১ জুলাই পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে সরাসরি উড়ান।
এর ফলে কলকাতা থেকে ২৮টি উড়ান বন্ধ করে দিতে হয়েছে। লকডাউনের পরে, ২৮ মে কলকাতা থেকে উড়ান চালু হয়। ৬৬ থেকে ৬৮টি উড়ান চলছিল। এ বার তা আরও কমে ৪০ থেকে ৪২-এ দাঁড়িয়েছে।
মুম্বইয়ের উড়ান এখন এমনিতেই কম। যাত্রীও খুব কম। বাকি শহরেও যাত্রী তেমন নেই। কিন্তু বিভিন্ন প্রয়োজনে দিল্লি যাতায়াতটা চালু রয়েছে। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, যাঁদের দিল্লি থেকে জরুরি কাজে কলকাতায় আসতে হচ্ছে, তাঁরা পটনা, ভুবনেশ্বর, বারাণসী, গুয়াহাটি, বাগডোগরা ঘুরে এ শহরে আসছেন। এর ফলে সময় ও টাকা, দুটোই বেশি লাগছে। একটি উড়ান সংস্থার এক কর্তার কথায়, “যে উদ্দেশ্যে দিল্লির উড়ান বন্ধ করা হল, তা তো সফল হল না। দিল্লি থেকে কিন্তু নিয়মিত লোকজন আসছেন, তবে ঘুরপথে।”
এ বিষয়ে প্রশাসনের এক কর্তার ব্যাখ্যা, “বৃহত্তর পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। যাতে হটস্পটগুলি থেকে বেশি সংখ্যক মানুষের আসা আটকানো যায়। কিন্তু কেউ ঘুরপথে এলে তাঁকে আটকানো কার্যত অসম্ভব।” ওই কর্তার মতে, “এটা পুরোপুরি ব্যক্তি সচেতনতার উপরে নির্ভরশীল। এ লড়াই একা প্রশাসনের নয়। প্রত্যেকেই তার শরিক।“
সম্প্রতি জগদ্দলের বাসিন্দা এক যুবক দিল্লি থেকে গুয়াহাটি ঘুরে কলকাতায় নেমে কোভিড পজ়িটিভের সার্টিফিকেট দেখিয়েছেন। উড়ান সংস্থার ওই কর্তার যুক্তি, ‘‘দিল্লি থেকে যাত্রী আসা বন্ধ করতে হলে সারা দেশ থেকেই বিমান আসা বন্ধ করতে হবে।’’
এই প্রসঙ্গেই উঠেছে বাগডোগরার কথা। জুলাইয়ের গোড়ায় কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের আর্জি ছিল, পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত বিমানবন্দর থেকেই দিল্লি-সহ অন্য শহরের উড়ান বন্ধ করতে হবে। তার মধ্যে বাগডোগরা, অন্ডালও রয়েছে। অন্ডাল থেকে লকডাউনের আগে দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাইয়ের উড়ান চললেও লকডাউনের পরে তা চালু হয়নি। বাগডোগরা থেকেও চেন্নাইয়ের উড়ান বন্ধ রাখা হয়। সপ্তাহে তিন দিন মুম্বইয়ের উড়ান শুরু হয়। কিন্তু দিল্লির উড়ান নিয়মিত চলছিল।
রাজ্যের অনুরোধে কেন্দ্র যখন উড়ান বন্ধ করল, তখন বাগডোগরার উল্লেখ ছিল না। ফলে ৬ জুলাইয়ের পরে ছয় শহরের উড়ান বন্ধ হয়ে গেলেও বাগডোগরা থেকে দিনে তিনটি করে দিল্লির উড়ান আসা বন্ধ হল না। বাগডোগরা বিমানবন্দরের অধিকর্তা সুব্রহ্মণ্যম পি শনিবার বলেন, “গত ৬ তারিখ থেকে আজ পর্যন্ত মোট ৪১টি (দিনে তিনটি এবং সপ্তাহে আরও একটি করে অতিরিক্ত) উড়ান দিল্লি থেকে বাগডোগরায় এসে নেমেছে এবং গড়ে প্রতিটি উড়ানে ১৫০ জন করে যাত্রী এসেছেন।” ৩১ জুলাই পর্যন্ত কলকাতা থেকে ছ’টি শহরের সরাসরি উড়ান নিয়ে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়লেও তা বাগডোগরার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
এর ফলে প্রায় ছ’হাজার যাত্রী বাগডোগরায় নেমে ছড়িয়ে পড়েছেন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে। অনেকে উড়ানে এসেছেন কলকাতায়। যাঁরা দিল্লি থেকে বাগডোগরায় আসছেন, তাঁরা গাড়ি ভাড়া করেও কলকাতায় আসতে পারেন। তাই বজ্র আঁটুনির আড়ালে ফস্কা গেরো রয়েই গেল।