প্রতীকী ছবি
রাজ্যে করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা প্রতি দিন লাফিয়ে বাড়ছে। তা সত্ত্বেও দূরত্ব-বিধির তোয়াক্কা না-করে শাসক-বিরোধী সব পক্ষই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে রাস্তায় নেমে পড়ায় সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, নেতারাই যদি এমন আচরণ করেন, তা হলে সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের দিয়ে কী ভাবে লকডাউন মানানো সম্ভব? রাজনৈতিক দলগুলির দায়িত্বজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে চিকিৎসকদের একাংশও।
এক দিকে, খুব জরুরি দরকার ছাড়া রাস্তায় না-বেরোতে এবং বেরোলেও দূরত্ব-বিধি মানতে আবেদন করছে রাজ্য সরকার। অন্য দিকে, শাসক দল তৃণমূল জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ-সহ কেন্দ্রের বেশ কিছু সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত রবিবার থেকে মিছিল-সভা শুরু করেছে। জেলা ও ব্লক স্তরে এই কর্মসূচিগুলিতে জমায়েত দেখে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরাও। আজ, বুধবার পাড়ায় পাড়ায় কেন্দ্র-বিরোধী কর্মসূচি ঘিরেও একই আশঙ্কা রয়েছে। সব রকম চেষ্টা সত্ত্বেও মিছিল, সভায় যে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মানা কঠিন, তা মেনে নিয়েছেন দলের নেতা, মন্ত্রী ও জনপ্রতিনিধিরা। ইতিমধ্যেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন শাসক-বিধায়ক তমোনাশ ঘোষ। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে দলের সাংসদ শান্তনু সেনকে দেখা গিয়েছে কর্মসূচিতে। সাধ্যমতো স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পথে নেমেছেন দাবি করে দলের তথা চিকিৎসক-নেতা শান্তনুর যুক্তি, ‘‘আমাদের জীবনের থেকে দেশের দাম অনেক বেশি। কেন্দ্রীয় সরকার দেশটা বিক্রি করে দিচ্ছে। তার প্রতিবাদ করতেই হবে।’’
করোনা আবহে বড় জমায়েত এড়াতে বিজেপি ‘ভার্চুয়াল সভা’র পথ নিলেও একই সঙ্গে বিক্ষোভ, জমায়েত করেছে জুন মাস জুড়ে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের যুক্তি, ‘‘আমরা প্রথমে আন্দোলনে নামিনি। রেশন এবং আমপানের ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতি না-হলে পরেও নামতাম না। তৃণমূল ওই দুর্নীতি করে আমাদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করেছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা হয়েছে অল্প লোক নিয়ে, যাতে দূরত্ব বিধি মানা যায়।’’ বাস্তবে বিজেপির অনেক বিক্ষোভেই ভিড় হয়েছে। ওই রকম কর্মসূচির পর করোনা আক্রান্ত হয়েছেন দলীয় সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। দিন দশেক হল, রাস্তার কর্মসূচিতে কিঞ্চিৎ রাশ টেনেছে বিজেপি। দলের রাজ্য দফতরেও যাতায়াত নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।
রাজ্য এবং কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দাবিতে সম্প্রতি রাস্তায় নেমেছে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসও। বাম-কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই যতটুকু কর্মসূচি করা যায়, তাঁরা তা-ই করেছেন। সেই কারণেই কলকাতায় রেড রোড বা হো চি মিন মূর্তির মতো ফাঁকা চত্বরে কর্মসূচি হয়েছে। রাজনৈতিক সমর্থনে আমপান-ত্রাণ এবং রেশন-বঞ্চনা নিয়ে বিক্ষোভও চলছে নানা জায়গায়। সেখানেও শিকেয় দূরত্ব-বিধি এবং তা কার্যত অসম্ভব বলে মত রাজনৈতিক মহলের।