দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের সাংবাদিক বৈঠক। ছবি: সংগৃহীত।
রাজ্যে বিনা চিকিৎসায় যাঁদের মৃত্যু হচ্ছে বলে অভিযোগ, তাঁদের পরিবারের লোকজনকে এক জায়গায় এনে শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করল দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ। কলকাতা প্রেস ক্লাবে সেই সাংবাদিক বৈঠকের প্রেক্ষাপটে যে ব্যানার ঝোলানো ছিল, তাতে লেখা ছিল, ‘বিচার চাই, নৈরাজ্য নয়’। দুপুরে সাংবাদিক বৈঠকের সময়ে দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের তরফে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা পূর্ণেন্দু বসু বলেছিলেন, রাজ্যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বিনা চিকিৎসায়। বিকালে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ২৯। এই ২৯ জনের পরিবারকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলেও ঘোষণা করেছেন মমতা। সাংবাদিক বৈঠক থেকে দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে যোগ দেওয়ার আর্জি জানিয়েছে। পাশাপাশি, জুনিয়র ডাক্তারেরা যে পরিসংখ্যান দিয়েছেন, তাকেও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে শুক্রবারের সাংবাদিক বৈঠক থেকে।
দেগঙ্গার ১৪ বছরের মেয়ে সঙ্গীতা আচার্যের পরিবার অভিযোগ করেছিল, বারাসত হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় নবম শ্রেণির এই পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে। সঙ্গীতার বাবা সুজিত গোটা ঘটনার বিবরণ দেন। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়েটার পেটে-বুকে ব্যথা করছিল। দেগঙ্গা থেকে বারাসত নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু তিন ঘণ্টা ধরে কোনও চিকিৎসক পাইনি। তার পর মেয়েকে ছটফট করতে দেখে যখন ওখান থেকে বার করে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাই, তত ক্ষণে আমার মেয়েটা শেষ হয়ে গিয়েছিল।’’ জুনিয়র ডাক্তারদের উদ্দেশে আর্জি জানিয়ে সুজিত বলেন, ‘‘দয়া করে আপনারা কাজে ফিরে আসুন। আমি চাই না, আর কোনও বাবার কোল খালি হোক।’’
কোন্নগরের বাসিন্দা বিক্রম ভট্টাচার্যের পরিবার অভিযোগ করেছিল, আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বিক্রমের মা কবিতা দাসও ছিলেন শুক্রবারের সাংবাদিক বৈঠকে। তিনিও সে দিনের গোটা ঘটনার বিবরণ দেন।
জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে বলা হয়েছিল, রাজ্যে ৯৩ হাজার চিকিৎসক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত। সেখানে জুনিয়র ডাক্তারদের সংখ্যা মাত্র সাত হাজার। তা দিয়ে সামগ্রিক ভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে না। তা যদি হয়েই থাকে, তবে তা হয়েছে রাজ্য সরকারের অপদার্থতার জন্য। দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের তরফে চিকিৎসক সিদ্ধার্থ গুপ্ত এই পরিসংখ্যানকে ‘অর্ধসত্য’ বলে দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যে নথিভুক্ত চিকিৎসক ৯৩ হাজার। তাঁদের মধ্যে ১৫-২০ হাজার চিকিৎসক মারা গিয়েছেন। বাকি যাঁরা আছেন, তাঁদের একটা বড় অংশ বেসরকারি ক্ষেত্রে জড়িত। রাজ্য সরকারের হাতে ডাক্তার আছে ১৬-১৮ হাজার। তাঁদের মধ্যে আবার পাঁচ হাজার শিক্ষক ডাক্তার। ক্লিনিকাল ডাক্তার রয়েছেন ১২-১৩ হাজার।’’
পূর্ণেন্দু, সিদ্ধার্থ ছাড়াও ছিলেন পিডিএস নেতা সমীর পুততুণ্ড, শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান অনন্যা চক্রবর্তী-সহ অনেকে। সকলেই বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনা থামাতে জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে যোগ দেওয়ার আর্জি জানান।