বক্তা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রয়েছেন আর এক মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রও। শনিবার সবং কলেজে। নিজস্ব চিত্র
কিছু লোক রাজনৈতিক যোগসূত্রে চাকরির সুপারিশ করছেন, আর যোগ্য অনেকে কাজের সুযোগ পাচ্ছেন না— প্রকাশ্য মঞ্চেই এ কথা কবুল করলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
শনিবার সবং কলেজের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে এসেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। মঞ্চে বক্তব্য রাখতে উঠে তিনি জানান, সবংয়ে আসার পথে চা-দোকানে দেখা হওয়া এক যুবতীর কথা। ঘাটালের বাসিন্দা স্নাতকোত্তর ওই যুবতী এ দিন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা দিতে স্বামীর সঙ্গে এসেছিলেন। বহু চাকরির পরীক্ষা দিয়েও সুযোগ পাননি বলে তিনি শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আক্ষেপ করেন। বাড়িতে বৃদ্ধ মা আছেন, দুই ভাই কম বয়সেই সোনার কাজে মহারাষ্ট্রে গিয়েছেন, স্বামীর রোজগারও সামান্য বলে জানিয়েছেন ওই যুবতী।
এই ঘটনা জানিয়েই পার্থ বলেন, “আমরা যাঁরা এখানে জিন্দাবাদ-জিন্দাবাদ করি তাঁদের একটা অভ্যাস রয়েছে যে গ্রুপ-ডিতে ঢুকিয়ে দাও। মামা, ভাই, ভাইপো সবাইকে ঢুকিয়ে দাও। কিন্তু এই যে বিপন্ন মানুষ, যাঁদের যোগ্যতা রয়েছে, অনেক সময় তাঁরা সুযোগ পান না।” এ দিন পথে দেখা হওয়া যুবতীকে অবশ্য ঘাটালের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরে এডুকেশন সুপারভাইজারের অস্থায়ী পদে নিয়োগের আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
আরও পড়ুন: প্রজাতন্ত্র দিবসের বার্তায় ধনখড়ের নিশানায় মমতাই
খোদ শিক্ষামন্ত্রীর এমন স্বীকারোক্তিতে শোরগোল পড়েছে। প্রশ্ন উঠেছে উচ্চশিক্ষিত, যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি পেতে হলে কি তাহলে এ ভাবেই শিক্ষামন্ত্রীর দ্বারস্থ হতে হবে?
এ প্রসঙ্গে পরে পার্থর প্রতিক্রিয়া, ‘‘সব যোগ্যকে আমি চাকরি দিতে পারি না। কিন্তু মেয়েটি সত্যি অসহায়। তাই অস্থায়ী একটা বন্দোবস্ত করে দেওয়ার কথা বলেছি।’’ আর সত্যি যে অনেক যোগ্য প্রার্থী চাকরি পাচ্ছেন না, পরে তা-ও স্বীকার করেছেন শিক্ষামন্ত্রী।
এ দিন সবং কলেজের অনুষ্ঠানে শিক্ষার মানোন্নয়নে নানা পরামর্শ দেন মন্ত্রী। অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ না করে অতিথি শিক্ষকদের যোগ্যতা বুঝে পারিশ্রমিক দেওয়ার কথা বলেন তিনি। শিক্ষকের হাহাকার নেই, এমনকি বহু স্কুলে পড়ুয়ার অনুপাতে অতিরিক্ত শিক্ষক রয়েছে বলেও দাবি করেন শিক্ষামন্ত্রী। পাশাপাশি বাম-সরকাকে বিঁধে মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের আগের সরকার তো পড়াশোনা নয়, ক্যাডার তৈরি করে গিয়েছে। তারা সকালে পড়াবে, বিকেলে পার্টি করবে। আমরা বলছি, পার্টি পরে হবে, আগে শিক্ষাটা দেখুন।” বহু শিক্ষক পড়ানোর কাজটা যথাযথ ভাবে করছেন না বলেও আক্ষেপ করেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “অভিভাবকেরা এসে যখন এসে বলেন, শিক্ষকদের বেতন বাড়িয়ে দিচ্ছেন পড়ুয়াদের জন্য কী করছেন? আমি উত্তর দিতে পারি না।”