ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে মানুষের সচেতনতার অভাব রয়েছে বলে মত স্বাস্থ্য দফতরের। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যে ডেঙ্গি পরিস্থিতিতে আশঙ্কা জাগাচ্ছে হুগলি। জেলার স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান জানিয়েছে, গত ৫ বছরের মধ্যে চলতি বছর হুগলিতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫,৭২৪ জন। যে সব জায়গায় ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ছে, সেই এলাকার বাসিন্দাদের অতি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
স্বাস্থ্যকর্তাদের মতে, কোনও একটি জায়গা নয়, আদতে গোটা হুগলি জেলাই ডেঙ্গির হটস্পট। গত ৫ বছরের মধ্যে চলতি বছর এই জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের রেখচিত্র সবচেয়ে বেশি। কী কারণে হুগলিতে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী? জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, ডেঙ্গি পরীক্ষার জন্য হুগলিতে আগে মোটে ১টি ল্যাবরেটরি ছিল। তবে এখন সে পরিস্থিতি পাল্টেছে। স্বাভাবিক ভাবে পরীক্ষাও বেড়েছে। গত দু’বছর করোনার জন্য ডেঙ্গি পরীক্ষায় বিশেষ জোর দেওয়া হয়নি। সরকারি প্রচারের পাশাপাশি ডেঙ্গি নিয়ে আতঙ্কের জেরেও মানুষ সচেতন হয়েছে। জ্বর হলেই রক্তপরীক্ষা করাচ্ছেন জেলার বাসিন্দারা। তাতে ডেঙ্গি আক্রান্তও ধরা পড়ছেন। ফলে রোগীর সংখ্যা এতটা বেড়েছে।
জেলার ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা বেড়েছে স্বাস্থ্য দফতরেরও। হুগলির জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) রমা ভুঁইয়া বলেন, ‘‘আদতে হুগলি জেলার গোটাটাই হটস্পট। ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়তে থাকা এমন এলাকাকে হটস্পট হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।’’ সেগুলি কোন কোন এলাকা? সিএমওএইচ বলেন, ‘‘উত্তরপাড়ার ১৫, ১৯, শ্রীরামপুরের ১৪ ১৬, ১৭, ১৯, ২৫, রিষড়ার ১১, ১৪, ১৬, বৈদ্যবাটির ৫, ১১, ডানকুনিতে ১২, ভদ্রেশ্বর পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডকে অতি সতর্ক থাকতে হবে। গ্রামীণ এলাকায় চণ্ডীতলার মশাট, মগরার দেবানন্দপুর, পোলবার রাজহাট ও সুগন্ধা, বলাগড়ের শ্রীপুর ও জিরাট, শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকের কানাইপুর ও রিষড়া, খানাকুল ২-এর চিংড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে এলাকার বাসিন্দাদের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য।’’
গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
পরিস্থিতি সামলাতে হুগলির ৫টি বড় হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা ডেঙ্গি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। জ্বর নিয়ে যাঁরা হাসপাতালে যাচ্ছেন, তাঁদের ডেঙ্গি হলে বিশেষ কিছু চিকিৎসা নেই। জ্বর হলে ৩ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করাতে হবে বলে চিকিৎসকদের পরামর্শ। বিশ্রামে থাকা ছাড়াও রোগীদের বেশি করে জলপান এবং তরল খাবার খেতে হবে বলে জানান সিএমওএইচ। তিনি আরও বলেন, ‘‘শহরাঞ্চলের সঙ্গে গ্রামেও বাড়ছে ডেঙ্গি।’’
ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে মানুষের সচেতনতার অভাব রয়েছে বলে মত স্বাস্থ্য দফতরের। তারা জানিয়েছেন, বাড়িতে বা বাড়ির আশপাশে দিন কয়েক জল জমে থাকলেই সেখানে মশা ডিম পাড়ে। লার্ভা থেকে মশার বংশবৃদ্ধি আটকাতে হবে। কোনও ভাবেই জল জমিয়ে রাখা যাবে না বলে পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।