গাড়ি-বাইকের বিক্রিতে ভাটা, কমছে যাত্রীও

পাঁচশো আর হাজার টাকার পুরনো নোট বাতিলের দু’সপ্তাহের মধ্যে কৃষি থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য সব ক্ষেত্রেই ত্রাহি ত্রাহি রব। নাভিশ্বাস উঠেছে রাজ্যের পরিবহণ ক্ষেত্রেও।

Advertisement

অত্রি মিত্র

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩১
Share:

এক শোরুম

পাঁচশো আর হাজার টাকার পুরনো নোট বাতিলের দু’সপ্তাহের মধ্যে কৃষি থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য সব ক্ষেত্রেই ত্রাহি ত্রাহি রব। নাভিশ্বাস উঠেছে রাজ্যের পরিবহণ ক্ষেত্রেও। গাড়ি ও মোটারবাইকের বিক্রি তলানিতে। কাজ হারিয়েছেন পরিবহণ ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত প্রায় আট লক্ষ শ্রমিক। বুধবার নবান্নে প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো প্রতিনিধি কৃষি মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব রাঘবেন্দ্র সিংহের সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকে এমনই রিপোর্ট দিয়েছে পরিবহণ দফতর।

Advertisement

ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, গাড়ি, মোটরবাইকের বিক্রি ইতিমধ্যেই ৫০ শতাংশ কমেছে। পুরনো গাড়ি কেনাবেচাতেও মন্দা চরমে। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, কেন্দ্রের কাছে রিপোর্ট পেশের আগে রাজ্যে গাড়ি ও মোটরবাইকের প্রায় সব বড় ডিলারের সঙ্গেই কথা বলেছেন পরিবহণ দফতরের কর্তারা। ডিলারদের কাছ থেকে গত দু’সপ্তাহের বিক্রির খতিয়ানও নিয়েছেন তাঁরা। দেখা গিয়েছে, ৮ নভেম্বর রাতে নোট বাতিলের ঘোষণার পরে মোটরবাইক বিক্রির হার প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গিয়েছে। গাড়ির বিক্রি কমেছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। পুরনো গাড়ির কেনাবেচাও ৪০ শতাংশ কমেছে।

এমনটা হল কেন?

Advertisement

‘‘নোট বাতিলের জেরে গ্রাহকেরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। ছোট ব্যবসায়ীদের ব্যবসাতেও মন্দা। এই অবস্থায় কোনও খদ্দেরই হুট করে এক লপ্তে মোটা টাকা খরচ করতে চাইছেন না,’’ বললেন মোটর ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান বিনায়ক নায়ার। শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, গোটা দেশেই মোটরবাইক ও গাড়ির কেনাকাটা ব্যাপক হারে কমেছে বলে জানাচ্ছেন ফেডারেশন অব অটোমোবাইল ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (ফাডা)-এর সাম্মানিক কোষাধ্যক্ষ সৌরভ কেডিয়া। তাঁর হিসেব, এই সময়ে যে-ডিলার সাধারণত ২০০ গাড়ি বিক্রি করেন, এখন ৮০টির বেশি বেচতে পারছেন না। তাই উৎপাদনে রাশ টানতে হচ্ছে। কেডিয়া বলেন, ‘‘গাড়ি ও বাইকের বিক্রিতে এই ভাটার প্রধান কারণ হঠাৎই টাকার সরবরাহ কমে যাওয়া। আমাদের সংগঠন সব গাড়ি ও মোটরবাইক উৎপাদক সংস্থাকে উৎপাদন কমাতে বলেছে।’’

পরিবহণ-কর্তারা জানান, নোট-কাণ্ডের প্রভাব পড়েছে পরিবহণে যুক্ত লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের উপরেও। সরকারি রিপোর্টে বলা হয়েছে, নগদের সমস্যায় শ্রমিকদের কাজ লাগানোর আগে দু’বার ভাবতে হচ্ছে বাস ও লরির মালিকদের। কেননা নগদে পারিশ্রমিক দেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। প্রতিদিন রাজ্যে কমবেশি ২.৮৬ লক্ষ লরি চলে। ওই সব লরির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ১৪ লক্ষেরও বেশি শ্রমিক যুক্ত। তাঁদের মধ্যে ছ’লক্ষের কাজ নেই। গণপরিবহণের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের মধ্যেও প্রায় দু’লক্ষ মানুষ কাজ পাচ্ছেন না।

শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানোর অসুবিধের পাশাপাশি বাসে-ট্যাক্সিতে যাত্রী-সংখ্যাও কমেছে বলে জানানো হয়েছে ওই রিপোর্টে। কেন?

‘‘নোটের অভাবে সার্বিক ভাবে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যাঁরা বিভিন্ন কেনাকাটা ও ব্যবসার কাজে কলকাতায় আসতেন, তাঁদের অনেকেই আসছেন না। এর জেরে বাসে যাত্রী কমছে। হতাশ হয়ে মালিকেরাও বাস রাস্তায় বার করছেন না,’’ বলেন এক পরিবহণকর্তা।

রাজ্য সরকারের দাবি, পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসনের তরফে কর বকেয়া পড়লেও জরিমানা না-নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর্থিক লেনদেন বন্ধ রাখা হয়েছে রাজ্যের সব চেকপোস্টে। সেই সঙ্গে পরিবহণ দফতরে কর এবং ফি নেওয়ার ক্ষেত্রে পুরনো নোট নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির তেমন কোনও উন্নতি হচ্ছে না বলেই জানাচ্ছেন রাজ্যের পরিবহণ-কর্তারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement