দুই বন্ধু: প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় সোমেন মিত্র। ফাইল চিত্র
সোমেনদার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকেই মন ভাল ছিল না। মঙ্গলবার বৌদিকে (সোমেনের স্ত্রী) ফোন করে খোঁজখবর নিয়েছিলাম। বৌদি বলেছিলেন, সোমেনদা ধীরে ধীরে ভাল হচ্ছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোরে ওঁর চলে যাওয়ার খবর পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছি। রাজ্য-রাজনীতিকে এক মহীরুহের পতন হল। এই ক্ষতি কোনওদিনও পূরণ হবে না। এ রাজ্যের কংগ্রেসের নেতা, কর্মী ও সমর্থকেরা রাজনৈতিক অভিভাবক হারালেন। প্রদেশ কংগ্রেস রাজনৈতিক পথ-প্রদর্শককে হারাল।
আমার স্বামী, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির সঙ্গে সোমেনদার অটুট বন্ধুত্ব ছিল। প্রিয়দা ও রাজনীতির সূত্রে সোমেনদার সঙ্গে আমারও সব সময় ভাল সম্পর্ক ছিল। রাজনীতি করতে গিয়ে অনেক সময়ে সোমেনদার সঙ্গে আমার ও প্রিয়দার মতের মিল হত না ঠিকই, তবে সেটা কখনও সোমেনদার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে প্রভাব ফেলেনি।
দল পরিচালনা করতে গিয়ে সোমেনদা সব সময় দ্বন্দ্ব ভুলে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলার কথা বলতেন। এটা ওঁর সব চেয়ে বড় গুণ ছিল। দলে ভুল বোঝাবুঝির জেরে এক সময়ে তিনি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। পরে ফের কংগ্রেসে ফিরে আসেন। সোমেনদা এক জন যোগ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তাই কংগ্রেসে ফেরার পরে দল তাঁকে প্রদেশে দলের সভাপতির দায়িত্ব দেয়। সোমেনদা যত দিন রাজ্যে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তত দিন দলের অন্দরে স্বাধীন ভাবে কাজ করা ও মতপ্রকাশের পরিবেশ ছিল। তিনি দলের নিচুতলার কোনও কর্মী থেকে শীর্ষস্তরের নেতার বক্তব্য ও পরামর্শকে প্রাধান্য দিতেন। তিনি নিজেকে সব সময় কংগ্রেস পরিবারের এক সদস্য মনে করতেন। সেই কারণে, তৃণমূলে গিয়েও তিনি ফিরে আসেন।
সোমেনদা এক সময়ে বামেদের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন। কিন্তু ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এ রাজ্য থেকে তৃণমূলকে হটাতে সোমেনদা বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের জোটকে শক্তিশালী করতে দলের অন্দরে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ ও নির্দেশ দিয়েছেন।
গত বছর নভেম্বর মাসে কালিয়াগঞ্জ বিধানসভার উপ-নির্বাচনের প্রচারে শেষ বার সোমেনদা ও আমি একসঙ্গে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সামিল হই। ওইদিনও সোমেনদা এ রাজ্যে দলকে আরও শক্তিশালী করতে ও সাধারণ মানুষের দুর্দশায় তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন।
(লেখক রায়গঞ্জের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ)