মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আমজনতার নালিশ জানানোর জায়গাটা তিনিই তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই নালিশ যে দিদি শুধু শুনছেন না, তার বিহিতে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছেন এ বার সেই বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায় প্রশাসনিক বৈঠকে এত দিনের চেনা ছবিটা দেখা যায়নি। আগে এমন বৈঠকে জনপ্রতিনিধিদের কাছে সমস্যা জানতে চাইতেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন তিনি নিজেই মানুষের সমস্যা তুলে ধরেছেন। ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শ মতো চালু হওয়া ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি থেকে পাওয়া বিভিন্ন অভাব-অভিযোগের তালিকা ধরে ধরে খতিয়ান চেয়েছেন প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে।
এ দিন গোড়ায় জেলাশাসক রশ্মি কমল গতানুগতিক ভাবে উন্নয়ন পরিসংখ্যান দিতে শুরু করেছিলেন। তাঁকে থামিয়ে মুখ্যমন্ত্রীই নিজেই বলে ওঠেন, ‘‘আজ আমি রুটিন মিটিং করব না। একটু চেঞ্জ করব।’’ কী ভাবে সেই বদল হবে, তা-ও বুঝিয়ে দেন মমতা। বলেন, ‘‘যে রিপোর্ট আমরা পাই, জেলা থেকে, জেলা আমাদের রিপোর্ট দেয়, সেই রিপোর্ট দেখে আমরা কাজও করি। কিন্তু আমি নিজস্ব একটা পরিকাঠামো তৈরি করেছি। জেলার ডেটাব্যাঙ্কের বাইরে আমি নিজস্ব একটা ডেটাব্যাঙ্ক তৈরি করেছি। কী কাজ হচ্ছে, কী হচ্ছে না, কোথায় কী সমস্যা, জেলার এ সব তথ্যও আমার কাছে আছে। এটা দিয়েই আজকের মিটিংটা শুরু করব।’’
নড়েচড়ে বসেন প্রশাসনিক আধিকারিক, জনপ্রতিনিধিরা। এর পরে পরিসংখ্যান দিয়ে দিয়ে মমতা বুঝিয়ে দেন যে তৃণমূল স্তরের খবরও সরাসরি তাঁর কাছে পৌঁছচ্ছে। কাগজে চোখ বুলিয়ে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘বিনপুর-১ (লালগড়)-এ আইসিডিএস সেন্টারের জন্য যে জমিটা দেওয়া হয়েছে, নির্মাণের জন্য, পরে সেটা ব্যবহার হচ্ছে না? কেন হচ্ছে না?’’ স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্য জানান, ‘‘বিষয়টি দেখছি।’’ এর পরেই মমতাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘তার মানে আমার তথ্য একশো ভাগ ঠিক।’’ ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েশা রানিকে তাঁর নির্দেশ, ‘‘এটা গিয়ে দেখতে হবে।’’
তাঁর নিজস্ব পরিকাঠামোয় জেলা থেকে কোন দফতরের নামে কত অভিযোগ জমা পড়েছে, এ দিন সেই খতিয়ানও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, ‘‘জেলা থেকে সরকারি
কাজ সংক্রান্ত ৩,৫৭৮টি অভিযোগ এসেছে। একটা জেলা থেকে যদি এতগুলি অভিযোগ আসে, তা হলে নিশ্চয়ই ধরে নিতে হবে কেউ কেউ কাজ করছেন না। কেন কাজগুলি না করে ফেলে রাখা হবে?’’ পর ক্ষণেই মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘পশ্চিম মেদিনীপুরে ৭০৬ জন আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। কোন বিডিও-র কাছে, কোন আইসি-র কাছে কী অভিযোগ হচ্ছে, সেটা কিন্তু আমার কাছে আসছে।’’
পরে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমলকে তাঁর নির্দেশ, ‘‘ডেবরা, ঘাটাল, মেদিনীপুর, কেশপুর, সবং— এই পাঁচটি জায়গা থেকেই বেশি অভিযোগ এসেছে। লোকজনের অনেক অভিযোগ আছে। প্রত্যেকটা ফাইল চেয়ে পাঠাও। বিডিওদের সঙ্গে কথা বলো।’’
‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি চালুর পরে জেলা সফরে গিয়ে মমতাকে প্রত্যন্ত এলাকায় চলে যেতে দেখা গিয়েছে। মানুষের কাছে পৌঁছে তাঁদের অভাব-অভিযোগ শুনেছেন তিনি। এ দিনও রাস্তায় নেমে জনসংযোগ সারতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। প্রশাসনিক বৈঠক শেষে ডেবরা অডিটোরিয়াম থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় কিছুটা এগনোর পরেই গাড়ি থেকে নেমে পড়েন মমতা। ভিড় জমে। কেউ বাড়ি তৈরির, কেউ বেতন না মেলা, কেউ আবার কন্যাশ্রীর টাকা না পাওয়ার অভিযোগ জানান। বিষয়গুলি জেলাশাসককে দেখার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।