মহম্মদ সেলিমের সঙ্গে বর্ষীয়ান সিপিএম নেত্রী দেবলীনা হেমব্রম। —ফাইল চিত্র।
বঙ্গ সিপিএমের ৬১ বছরের ইতিহাস বদলে গেল! বাঁকুড়ায় দলের জেলা সম্পাদক করা হল কোনও মহিলাকে। দায়িত্ব পেলেন দলের দীর্ঘ দিনের নেত্রী দেবলীনা হেমব্রম। ১৯৬৪ সালে সিপিআই ভেঙে সিপিএম আত্মপ্রকাশ করেছিল। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত দলে কোনও মহিলাকে জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। দেবলীনাকে দিয়ে সেই ইতিহাস বদলাল। নারী হিসাবে তো বটেই, আদিবাসী হিসাবেও দলে নজির গড়লেন তিনি। সম্প্রতি বাঁকুড়ায় সিপিএমের জেলা সম্মেলন শেষ হয়েছে। দেবলীনাকে জেলার দায়িত্ব দেওয়ার কথা ওই সম্মেলনেই স্থির হয়।
সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরে দেবলীনা হেমব্রমের সঙ্গে পরিচয় করাচ্ছেন রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।
১৯৯৬ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত রানিবাঁধের বিধায়ক ছিলেন দেবলীনা। ২০০৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারে তিনি ছিলেন অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ উন্নয়নমন্ত্রী। বর্তমানে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তিনি। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও বটে। এ বার সেই দেবলীনাকেই দেওয়া হল বাঁকুড়া জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব।
সিপিএমের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কেন্দ্র, রাজ্য এবং জেলা স্তরে তিনটি দায়িত্বে একসঙ্গে কোনও এক জন থাকতে পারেন না। বাঁকুড়ার দায়িত্ব গ্রহণে দেবলীনার ক্ষেত্রে সেই নিয়মেরও ‘ব্যতিক্রম’ হল। এখনও পর্যন্ত সিপিএম নেতৃত্ব একে ‘ব্যতিক্রম’ বলেই উল্লেখ করছেন। ২০২২ সালে কেরলের কুন্নুরে সিপিএমের শেষ পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দেবলীনাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যও করা হয় তাঁকে।
এক সময়ে বাঁকুড়া ছিল সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি। কিন্তু ২০১১ সালের পর থেকেই সেই ‘শক্তি’ ক্ষয়িষ্ণু। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকে দেখা যায়, পশ্চিমাঞ্চলের অন্যান্য জেলা এবং রাজ্যের অন্য অংশের মতো বাঁকুড়াতেও সিপিএমের সঙ্গে থাকা ভোট বিজেপির দিকে চলে গিয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে যে আদিবাসী অংশের ভোট সিপিএমের ‘পুঁজি’তে পরিণত হয়েছিল, সেই জনসমর্থনও তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে ভাগ হয়ে গিয়েছে। বাঁকুড়ায় এখন সিপিএমের জনসমর্থন নেই। ভোটেও তার প্রতিফলন ঘটছে বার বার। কিছু দিন আগে তালড্যাংরার উপনির্বাচনে সিপিএম জামানত রক্ষা করতেও পারেনি। সেই বাঁকুড়ায় আদিবাসী নেত্রীকে জেলা সম্পাদক করে সিপিএম ভোটের খরা কাটাতে চাইল বলে মনে করা হচ্ছে।
কিন্তু খরা কি কাটবে? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এর আগে ঝাড়গ্রামে দলের প্রাক্তন সাংসদ পুলিনবিহারী বাস্কেকে জেলা সম্পাদক করেছিল সিপিএম। বীরভূমে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মনসা হাঁসদাকে। কিন্তু তার পরেও আদিবাসী ভোট টানা যায়নি। তবে দেবলীনার মতো আদিবাসী সম্প্রদায়ের মহিলাকে জেলা সম্পাদক করে সিপিএম সাংগঠনিক স্তরে সাহসী বার্তা দিল বলে মনে করছেন অনেকে।