সুব্রতবাবুর মতো উচ্চ মেধাসম্পন্ন মানুষ আমি সত্যিই দেখিনি ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।
সুব্রত মুখোপাধ্যায়...
কলেজেই প্রথম সাক্ষাৎ। তার পর বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। পরবর্তী কালে আরও গভীর ভাবে আমার সঙ্গে সম্পর্কটা তৈরি হল, যখন ১৯৮০ সালে উনি পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ জাতীয় কংগ্রেসের ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি হন। সেই সময় আমি সামান্য এক জন এগজিকিউটিভ কমিটির সদস্য ছিলাম। তখন থেকে ট্রেড ইউনিয়ন করতে করতেই আমাদের সম্পর্কটা আরও গাঢ় হয়।
২০০৬ সাল পর্যন্ত ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন সুব্রতবাবু। শেষের দিকে আমি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ ছিলাম। ২০০০ সালে উনি কলকাতার মেয়র হলেন। ২০০৫ সাল পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন। সুব্রতবাবু যখন কলকাতার মেয়র হলেন, তখন আমি ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া-তে এক জন আধিকারিক হিসেবে কর্মরত। উনিই ডেকেছিলেন আমায়। ২০০১ সালে ওঁর কথাতেই ওই চাকরি ছেড়ে স্পেশাল এগজিকিউটিভ হিসেবে যোগ দিলাম কাজে। সেখান থেকেই যাত্রা শুরু। তার পর থেকে সুব্রতবাবুর সঙ্গেই রয়েছি আমি...
২০১১ সালে রাজ্যের মন্ত্রী হলেন সুব্রতবাবু। তখনও ওঁর সঙ্গেই রয়েছি। অত্যন্ত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মানুষ ছিলেন তিনি। অল্প কথাতেই সমস্ত কিছু বুঝে যেতেন। যে কোনও ফাইল দ্রুত দেখে ছে়ড়ে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল ওঁর। তার পর আমাদের নির্দেশ দিতেন কী করতে হবে, না-করতে হবে। কাজ কত দূর এগোল, সব খবরাখবর নিতেন। কোথাও কিছু বদলানোর থাকলে সঙ্গে সঙ্গেই বলে দিতেন।
সুব্রতবাবুর মতো উচ্চ মেধাসম্পন্ন মানুষ আমি সত্যিই দেখিনি। স্নাতকোত্তর পাশ করেছিলেন উনি। দু’বার। কিন্তু ওঁর বুদ্ধিমত্তা অনেক উচ্চ স্তরের। আমার মনে হয়, সুব্রতবাবুর আইকিউ এত বেশি ছিল বলেই ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে কখনও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাননি উনি। কংগ্রেসের সময়েও প্রাসঙ্গিক ছিলেন। আবার তৃণমূল জমানাতেও। দিদি (রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ওঁকে বরাবর শ্রদ্ধার চোখেই দেখেছেন। দিদির সঙ্গে খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। ছোট বোনের মতোই দেখতেন দিদিকে। আমি দেখেছি, প্রয়োজন মনে করলে দিদির থেকে বেশি কাজও চেয়ে নিতেন সুব্রতবাবু।
ওঁর এই প্রয়াণ মেনে নেওয়া সত্যিই ভীষণ কষ্টকর। হয়ত আসতে আসতে সবই মিলিয়ে যাবে কালের নিয়মে। কিন্তু এই শোক সামলে ওঠা খুব কঠিন। ওঁর চলে যাওয়ায় যে শূন্যতা তৈরি হল, তা ভরাট করা সত্যিই কঠিন হবে।
লেখক প্রয়াত রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আপ্ত-সহায়ক।