ফাইল চিত্র।
যে প্রশ্নে বিরোধের মুখে পড়তে হচ্ছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে, ঠিক সেই প্রশ্নটাই এ বার বিজেপির দিকে ঘুরিয়ে দিল তৃণমূল কংগ্রেস। ডেথ অডিট কমিটি ও কো-মর্বিডিটি— এই দুই বিষয়েই অন্য রাজ্যগুলো এখন পশ্চিমবঙ্গের পথেই হাঁটছে, এই কথা বলে দলের নেতারা বলতে শুরু করেছেন, প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে, রাজ্য সরকার যে পথে হেঁটেছিল, সে পথটাই ছিল ঠিক।
কেন ‘ডেথ অডিট কমিটি’? কেনই বা ‘কো-মর্বিডিটি’ তত্ত্ব? বার বার প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। প্রশ্ন তোলা হচ্ছিল কেন্দ্রের তরফ থেকে। করোনার সংক্রমণ এবং তাতে মৃত্যুর হিসেব চাপা দিতেই রাজ্য সরকার এ সব করছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছিল। এ বার পঞ্জাব, দিল্লি, গুজরাত, কর্নাটক-সহ একগুচ্ছ রাজ্য সেই একই পথে। যে পদক্ষেপের জন্য তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছিল বাংলাকে, ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এ বার সেই পদক্ষেপই কেন? পাল্টা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে তৃণমূল।
করোনার উপসর্গে যে সব মৃত্যু, সেগুলির তালিকা তৈরির জন্য ‘ডেথ অডিট কমিটি’ সর্বাগ্রে গঠন করে পশ্চিমবঙ্গই। কাদের মৃত্যুর মূল কারণ করোনা আর কাদের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ সংক্রমণ থাকলেও মৃত্যুর মূল কারণ আনুষঙ্গিক অসুস্থতা, সেই হিসেব রাখছিল ওই কমিটি। গোড়া থেকেই ওই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তকে আক্রমণ করতে শুরু করে বিজেপি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও কটাক্ষ করেন রাজ্য সরকারকে। অবশেষে কেন্দ্রের পাঠানো পরিদর্শক দলও ওই একই বিষয় নিয়ে রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করায়।
আরও পড়ুন: বাড়ি ফিরতে চাওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু ঠেকাতে হবে সংক্রমণও: মোদী
বিতর্ক বাড়তে থাকায় রাজ্য সরকার একটা সময় আনুষঙ্গিক অসুস্থতা বা কো-মর্বিডিটি চিহ্নিত করা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঘোষণা না হলেও ডেথ অডিট কমিটির কাজও প্রায় বন্ধই হয়ে যায়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দেখানো সেই পথেই এ বার হাঁটতে শুরু করেছে অন্য বেশ কয়েকটা রাজ্য। পঞ্জাব এবং দিল্লির সরকারও এ বার ‘ডেথ অডিট কমিটি’ গঠন করেছে। এই দুই রাজ্যের একটি কংগ্রেস শাসিত, অন্যটি আম আদমি পার্টির দখলে। তাতেই শেষ নয়। বিজেপি শাসিত গুজরাত এবং কর্নাটকও ওই একই পথ নিয়েছে।
ফাইল চিত্র।
গুজরাতের স্বাস্থ্য দফতরের হেল্থ বুলেটিনেও ‘কো-মর্বিডিটি’ শব্দটি ঠাঁই পাচ্ছে গত কয়েক দিন ধরে। শুধুমাত্র কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে কোন রোগীদের মৃত্যু হয়েছে এবং কোন কোভিড আক্রান্তদের মৃত্যু হয়েছে আনুষঙ্গিক অসুস্থতার কারণে, গুজরাতের সরকার তা আলাদা করে দেখাতে শুরু করেছে।
একই পদক্ষেপ করেছে কর্নাটকও। তাদের হেল্থ বুলেটিনে ‘কো-মর্বিডিটি’ শব্দটি নেই। তারা লিখছে, ‘ডেথ ডিউ টু আদার রিজনস’। অর্থাৎ ‘আনুষঙ্গিক কারণে মৃত্যু’।
পঞ্জাব, দিল্লি, গুজরাত, কর্নাটকের এই পদক্ষেপের কথা জেনেই বিজেপি ও কেন্দ্রকে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে তৃণমূল। যে ভাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সমালোচনা করা হচ্ছিল, এখন অন্য রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে তা অনুপস্থিত কেন? তৃণমূল এই প্রশ্নই তুলতে শুরু করেছে। কেন্দ্রের বুলেটিনেও যে ঠাঁই পেয়ে গিয়েছে ‘কো-মর্বিডিটি’ শব্দটি, সে কথাও তৃণমূল নেতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: তেলিনিপাড়ায় দোযীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করেছে পুলিশ, জানাল নবান্ন
রাজ্যসভার তৃণমূল দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের কথায়, ‘‘বাংলা করোনার বিরুদ্ধে লড়ছে এবং করোনা রোখাই আমাদের অগ্রাধিকার। কিন্তু মোদী-শাহের কাছে অগ্রাধিকার বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে যুদ্ধ করা।’’ ডেরেক আরও বলেন, ‘‘গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী। গুজরাতের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই গুজরাতে মৃত্যুর সংখ্যাটা দেখুন। ৫০০-র কাছাকাছি। পশ্চিমবঙ্গে সেই সংখ্যা অনেক কম। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার গুজরাতে ডাক্তার পাঠাচ্ছে, আর পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় দল পাঠাচ্ছে রাজ্য সরকারকে বিরক্ত করার জন্য। ওঁদের মনটা এখনও খুব ছোট। শুধু ভোট চাইতে আসে আর রাজনীতি করতে আসে।’’
তৃণমূলের আর এক রাজ্যসভা সাংসদ তথা চিকিৎসক নেতা শান্তনু সেনও আক্রমণ করেছেন কেন্দ্রকে। তাঁর কথায়, ‘‘এখন নিশ্চয়ই সবাই বুঝতে পারছেন যে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারই ঠিক পদক্ষেপ করেছিল। সবার আগে পশ্চিমবঙ্গের বিশেষজ্ঞরাই বুঝতে পেরেছিলেন যে, করোনা পজিটিভ রোগীর মৃত্যু হলে, তাঁদের মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে শ্রেণি বিভাজন দরকার।’’ কো-মর্বিডিটি না থাকলে আরও কত মানুষকে বাঁচানো সম্ভবত হত, মূলত তা বুঝে নেওয়ার জন্যই অডিট কমিটি গঠন করা হয়েছিল বলে শান্তনুর দাবি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সেই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছিল বলে তাঁর অভিযোগ।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানা ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের সঙ্গে। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা, তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি প্রকাশযোগ্য বলে বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)