Menstruation

‘পিরিয়ডসের জন্য ছুটি চাইতে সঙ্কোচের দিন শেষ’

দেড় বছর আগে কলকাতার একটি ডিজিটাল মার্কেটিং সংস্থাও মাসে একটি করে ‘মেনস্ট্রুয়াল লিভ’ ঘোষণা করে।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২০ ০৫:১১
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

কাজের পৃথিবীতে মেয়েদের চলার পথে আর একটি কাঁটা দূর করার পদক্ষেপ এই ঋতুকালীন ছুটি! না কি, তাঁদের ঘুরিয়ে একঘরে করা বা বিপাকে ফেলার ছক?

Advertisement

দানা বাঁধছে এমনই আশঙ্কা! টরন্টোয় কর্মরত, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার দূর্বা মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘মাসে একটা দিন বা বছরে অন্তত ১০টা দিন ছুটি কর্পোরেট জগতে মেয়েদের প্রতি বিদ্বেষ বাড়িয়ে তুলতে পারে। হয়তো কোনও গুরুতর অসুস্থতার জন্য ছুটিতেও টান পড়তে পারে।’’

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাসহ বিভিন্ন সমীক্ষায় প্রকাশ, ভারতে মেরেকেটে সিকি ভাগ মেয়ে রোজগার করেন। পিরিয়ড বা ঋতুকালীন ছুটি কি তাঁদের প্রতি বিরুপ দৃষ্টিভঙ্গিই পোক্ত করবে? জোম্যাটো সংস্থার তরফে এ দেশে মেয়েদের বছরে ১০ দিন পর্যন্ত ঋতুকালীন ছুটি ঘোষণার পরে এ সব জল্পনা উঠে আসছে। ইতিমধ্যে সাংবাদিক বরখা দত্তের টুইট,‘পিরিয়ডের ছুটি আর যুদ্ধক্ষেত্রে মেয়েদের কাজ বা মহাকাশযাত্রা এক সঙ্গে খাপ খায় না’ নিয়েও তুমুল বিতর্ক। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ক্ষেত্রের ন্যাসকম বা বণিকসভাগুলিও বিষয়টি নিয়ে কার্যত নীরব। ন্যাসকমের এক কর্তা এবং কলকাতার একটি বণিকসভার কর্তা কিছু বলতে চাননি।

Advertisement

আরও পড়ুন: করোনার সঙ্গে লড়তে একজোট পঁচিশ বছর আগের সহপাঠীরা

শতকরা ৩৫ জন মহিলা কর্মীর সংস্থা জোম্যাটোর সিইও দীপিন্দর গোয়েলের সাম্প্রতিক বিবৃতিটি বলছে, ‘‘পিরিয়ডসের জন্য ছুটি চাইতে সঙ্কোচের দিন শেষ। ঋতুপর্ব মেয়েদের জীবনের স্বাভাবিক দিক বোঝাতেই এই পদক্ষেপ।’’

দেড় বছর আগে কলকাতার একটি ডিজিটাল মার্কেটিং সংস্থাও মাসে একটি করে ‘মেনস্ট্রুয়াল লিভ’ ঘোষণা করে। তাঁদের কর্তা সাম্য দত্তের অভিজ্ঞতা , ‘‘এর ফলে কর্মসংস্কৃতি উন্নত হচ্ছে। গুটিকয়েক মেয়ে হয়তো এ ছুটি ফাঁকিবাজির ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন, তা বলে যাঁদের সত্যিকারের দরকার, তাঁদের বঞ্চিত কেন করা হবে?’’

আরও পড়ুন: মসজিদ সরাতে খুলতে চলেছে আলোচনার দরজা

রাজ্যসভার সাংসদ তথা তৃণমূলের ট্রেড ইউনিয়ন নেত্রী দোলা সেন বা তাদের শিক্ষক সংগঠনের নেত্রী কৃষ্ণকলি বসুর কিন্তু এই ছুটিতে সায় নেই। তবে দোলা বলছেন, ‘‘যাঁদের পেটে ব্যথা বা রক্তপাত বেশি হয়, তাঁদের ছুটি দেওয়া উচিত। সে তো বরাদ্দ ছুটির ভাগ থেকেও পাওয়া যায়।’’ বহুজাতিক কর্পোরেট সংস্থার কর্ত্রী পরমা রায়চৌধুরীও আলাদা ভাবে পিরিয়ড লিভ চালুর পক্ষপাতী নন। তবে তিনি বলছেন, ‘‘লিঙ্গ নির্বিশেষে কোনও অতিরিক্ত ছুটির আওতায় ঋতুকালীন সমস্যার পর্বও ধরা যায়।’’ দূর্বার কাছে ছুটির থেকেও কাজের জায়গার শৌচাগারের পরিচ্ছন্নতা, জল বা দরকারে স্যানিটারি ন্যাপকিনের জোগান বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

এ দেশের কাজের জগতে এই দাবিগুলি এখনও অনেকাংশে সূদূরের স্বপ্ন। ট্রেড ইউনিয়নের স্বীকৃতি ছিনিয়ে নেওয়া গৃহপরিচারিকা সমিতির সম্পাদক মিঠু সাহা বলছেন, ‘‘এখনও মাসে চারটে ছুটির জন্য লড়তেই হিমশিম খাচ্ছি। পিরিয়ডের কষ্ট নিয়ে ঘর মোছা, কাপড় কাচার যন্ত্রণার কথা কে ভাবে!’’

সাহিত্যিক তথা কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিক যশোধরা রায়চৌধুরী সতর্ক, ‘‘পিরিয়ডসের ছুটির পিছনে ঋতুচলাকালীন মেয়েরা অশুচিগোছের ধর্মীয় ধারণা যেন না-থাকে।’’ মেয়েদের স্বাস্থ্যগত দিক বিচার করলে ঋতুকালীন ছুটি ইতিবাচক বলে তাঁর অভিমত। তবে ভারী কাজ বা কায়িক পরিশ্রম করা মেয়েরা এর আওতায় না-আসা পর্যন্ত বৈষম্যই বহাল থাকবে বলে তিনি মনে করেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement