রুশ্মিতা ওরাওঁ। —নিজস্ব চিত্র।
বৈকুণ্ঠপুরের ঘন বনপথ পেরিয়ে যেতে হয় সরস্বতীপুর চা বাগানের শ্রমিক মহল্লায়। সেই বাগানে অ্যাম্বুল্যান্স চালান কালু ওরাওঁ। স্ত্রী সুমতি ওই চা বাগানের শ্রমিক। তাঁদের সেজ মেয়ে রুশ্মিতার হাত ধরেই এখন আলো গোটা বাগান। সম্প্রতি রুশ্মিতার নেতৃত্বে জাতীয় অনূর্ধ্ব ১৮ মহিলা রাগবি চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলা।
গজলডোবা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী রুশ্মিতার ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলোর খুব শখ। কিন্তু রাগবির মতো অপরিচিত খেলার সঙ্গে সে জুড়ে গেল কী ভাবে? স্থানীয়রা বলছেন, এর সব কৃতিত্ব ‘জঙ্গল ক্রো’ নামে ব্রিটিশ একটি সংস্থার। তারাই ২০১৩ সালে কলকাতায় রাগবি চর্চা শুরু করে। প্রতিভা খুঁজতে শিলিগুড়িতেও এসে শিবির করেছিল গজলডোবা উচ্চ বিদ্যালয়ে। তখন থেকেই রুশ্মিতাদের রাগবি-প্রীতি শুরু। তাদের আগ্রহ দেখে সরস্বতীপুর চা বাগানে পাকাপাকি প্রশিক্ষণ শিবির গড়ে তোলে সংস্থাটি। দু’বছর পরে প্রশিক্ষণ দিতে আসেন গ্রেট ব্রিটেন রয়্যাল এয়ারফোর্সের দলের খেলোয়াড়রাও।
রুশ্মিতার হাতেখড়ি এই প্রশিক্ষণ শিবিরেই। তার সঙ্গে শিবিরে যোগ দেয় ওই বাগানের নিকিতা ওরাওঁ, বর্ষা ওরাওঁ, আনিশা ওরাওঁরাও। তাদের হাত ধরেই এ বারে চণ্ডীগড়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলা।
এগারো ক্লাসে পড়া রুশ্মিতা জানায়, বাগানের দিদিরাই প্রথম পথটা খুলে দেন। জাতীয় রাগবি দলের অধিনায়ক হয়েছিলেন এই বাগানেরই মেয়ে সন্ধ্যা রাই। তিনি ২০১৭ সালে ফ্রান্সে একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে যোগও দেন। রুশ্মিতার কথায়, সেই ঘটনাই তাকে আরও বেশি করে টেনে আনে এই খেলায়। ২০১৬ সালে সে যোগ দেয় শিবিরে। এ বারে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে সে উচ্ছ্বসিত। এখন সামনে জাতীয় দলের ঢোকার লক্ষ্য। কিছু দিনের মধ্যে তার চূড়ান্ত বাছাইপর্ব হবে। তার জন্য পুরোদমে প্রস্তুতি চলছে। কোচ রোশন খাখা মেয়েদের আগলে রেখেছেন। বুঝিয়ে চলেছেন, এখন অন্য দিকে মন দেওয়া যাবে না। তবে তারই মধ্যে সময় করে এক বার বাড়ি ঘুরে গিয়েছে রুশ্মিতা।
দিন আনি দিন খাই পরিবারের মেয়ে রুশ্মিতার খাবার বলতে দু’বেলা ভাত। মাঝেমধ্যে আনাজ। এই খাবারে রাগবির মতো গায়েগতরে জোরদার খেলার উপযুক্ত পুষ্টি জোটে না। তার বাড়ির লোকেরা বলছেন, ‘‘আমাদের আর কতটুকু রোজগার!’’ তিন মেয়ে এক ছেলের পড়াশোনা, মুখের ভাত জোটাতে হয় কালু-সুমতিকে। মেয়ের খেলা দেখেছেন? কালু বলেন, “দেখেছি কখনও সখনও। খেলাটার নিয়ম এখনও সবটা বুঝে উঠতে পারিনি। তবে এই খেলার জন্যেই এখন আমাদের বাগানকে অনেকে চেনেন।”
গত বছরই জলপাইগুড়ির স্বপ্না বর্মণ এশিয়ান গেমসে হেপ্টাথলনে সোনা জেতেন। আর এ বার সরস্বতীপুর চা বাগান তাকিয়ে আছে ঘরের মেয়ে রুশ্মিতার দিকে।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।