Pathar Pratima

Cyclone yaas: মাটি ফেলে, বুক পেতে বাঁধ রক্ষা পাথরপ্রতিমায়

ইয়াসের দাপট কাটতে না-কাটতেই এ দিন সকালে ভরা কটালের জলোচ্ছ্বাসে ধসে যাচ্ছিল উত্তর সীতারামপুর লঞ্চঘাট সংলগ্ন নদীবাঁধ, বাঁধ লাগোয়া ধানজমি, জনবসতি।

Advertisement

বিতান ভট্টাচার্য

পাথরপ্রতিমা শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২১ ০৫:৫৩
Share:

বাঁধ রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা। বুধবার পাথরপ্রতিমার জি-প্লটে। নিজস্ব চিত্র।

বাঁধ ভেঙে জল ঢুকছে গ্রামে। ধানজমি, জনবসতি তলিয়ে যেতে পারে। আর অপেক্ষা করেননি কেউ। কেউ মাটি ফেলায় হাত লাগালেন। কেউ খড় বিছানো শুরু করলেন। অনেকে আবার জলে নেমে পেতে দিলেন বুক। এ ভাবেই বুধবার বাঁধ বাঁচালেন পাথরপ্রতিমার জি-প্লটের গ্রামবাসীরা।

Advertisement

‘দ্য লিটল হিরো অব হারলেম’ গল্পের হান্স ব্রিঙ্কারকে মনে আছে? নেদারল্যান্ডসের হারলেম শহরের আট বছরের হান্স বাড়ি ফেরার পথে বাঁধের গায়ের ছিদ্র দিয়ে জল গড়াতে দেখে বুঝতে পেরেছিল কী ঘটতে চলেছে। নিজের শহরকে প্লাবিত হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে উপায়ান্তর না-দেখে সারা রাত হাত দিয়ে সেই ছিদ্রের মুখ চেপে বসে থাকে সে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমার জি-প্লটের বাসিন্দারা এ দিন হান্সের গল্পটাই মনে পড়িয়ে দিলেন।

ইয়াসের দাপট কাটতে না-কাটতেই এ দিন সকালে ভরা কটালের জলোচ্ছ্বাসে ধসে যাচ্ছিল উত্তর সীতারামপুর লঞ্চঘাট সংলগ্ন নদীবাঁধ, বাঁধ লাগোয়া ধানজমি, জনবসতি। বাঁধ ধসছে দেখে কাছাকাছি থাকা বাসিন্দারা চিৎকার করে সকলকে সতর্ক করতে থাকেন। ততক্ষণে অবশ্য জল ঢুকতেও শুরু করে দিয়েছে খেতে। ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসেন লোকজন। কেউ ঘরের চাল বা উঠোনে খড়ের গাদা থেকে খড়ের আঁটি নিয়ে, কেউ প্লাস্টিক, কেউ ত্রিপল— হাতের কাছে যে যা পান তাই নিয়ে ছুটে যান বাঁধের কাছে। ধসতে থাকা অংশ আগলাতে। প্রথমে ২০-২৫ জন, তারপর এক এক করে সংখ্যাটা গিয়ে ঠেকে প্রায় সাতশোতে। কয়েকজন সমানে নিজেদের চাষের জমি থেকে মাটি কেটে বাঁধের উপর ফেলতে থাকেন।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দা দীপঙ্কর প্রধান বলন, ‘‘এ ভাবে বাঁধ রক্ষা করা কঠিন। কিন্তু সেই মুহূর্তে আমাদের অন্য কিছু ভাবার মতো সময় ছিল না। নদী যেন তখন প্রবল রোষে গিলতে আসছে গোটা গ্রাম। বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। কিন্তু প্লাবনের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছি আমরা এ ভাবে বাঁধ রক্ষা করে।’’ এ দিনের ঘটনা বলতে গিয়ে আতঙ্কের ছাপ চোখেমুখে স্পষ্ট স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান উপমিতা জানার। তিনি বলেন, ‘‘যে ভাবে সারাদিন না খেয়ে বৃষ্টিতে ভিজে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গ্রামবাসীরা বাঁধের ধস আটকালেন, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। সকলেই রাত জাগছেন, প্রয়োজনে আবারও একই ভাবে বাঁধের ধস আটকাবেন।’’

এমনিতেই জি-প্লটের গোবর্ধনপুর, সীতারামপুরের আরও কয়েকটি জায়গা এবং শতদাসপুরে বাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছে মঙ্গলবার রাত থেকে। বহু মানুষ স্থানীয় ফ্লাড
শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছেন। এ দিন যে লঞ্চঘাট সংলগ্ন নদীবাঁধও ধসতে পারে, তা ভাবতে পারেননি অনেকেই। তাঁরা মানছেন, ইয়াস ততটা ক্ষতি করতে পারেনি। যতটা করেছে জলোচ্ছ্বাস। পাথরপ্রতিমার বিডিও রথীনচন্দ্র দে জানান, ভাটা পড়ার পরে স্থানীয় পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু করা হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement