গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ
মাত্রই ৫৬ মিনিটের ব্যবধান। তাতেই ঠিক হয়ে গেল দেনাপাওনা। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-এর জন্য ক্ষয়ক্ষতির নথিপত্র দিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য সফররত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে দাবি করেছিলেন ২০ হাজার কোটি টাকা। মোদী দিলেন কত? প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০০ কোটি। তা-ও বাংলা এবং ঝাড়খন্ড মিলিয়ে। অর্থাৎ, হরেদরে একেকটি রাজ্যের ভাগে ২৫০ কোটি করে। তবে পাশাপাশিই জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় দল এসে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও খতিয়ে দেখে পরবর্তী পর্যায়ে অর্থবরাদ্দের প্রস্তাব করবে।
দিঘায় যাওয়ার তাড়া থাকায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রী মোদীর পর্যালোচনা বৈঠকে থাকতে পারেননি। তবে বৈঠকের আগেই তিনি মোদীর সঙ্গে দেখা করে তাঁর হাতে ক্ষয়ক্ষতির নথিপত্র তুলে দেন। সূত্রের খবর, মমতা মোদীকে বলেন, ওই নথিতে সমস্ত ক্ষতির বিষয় দেওয়া আছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর যেন বিষয়টি দেখে নেয়। সংক্ষিপ্ত ওই সাক্ষাৎ সেরে বেরনোর আগে মমতা মোদীকে বলেন, দিঘায় তাঁর বৈঠক করার কথা। সে জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে তিনি বেরিয়ে যাচ্ছেন। তখন বাজে ৩টে ৪৭ মিনিট।
মোদীর বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী না থাকলেও ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ওই বৈঠক সেরে মোদী নয়াদিল্লি ফিরে যান। তার পর কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয় বাংলা এবং ঝাড়খণন্ডের জন্য প্রাথমিক ভাবে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ওড়িশার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে আরও ৫০০ কোটি। অর্থাৎ, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-এর ক্ষয়ক্ষতি পূরণে তিনটি রাজ্যের জন্য মোট এক হাজার কোটি টাকা প্রাথমিক ভাবে বরাদ্দ করা হয়েছে। তখন সময় ৪টে ৪৩ মিনিট। ঘটনাচক্রে, বাংলায় ভোটে বিজেপি-র ভরাডুবির পর এই প্রথম সাক্ষাৎ হল মোদী-মমতার। তা-ও খুব দীর্ঘস্থায়ী হল না।
ব্যবধান ৫৬ মিনিট।
শুক্রবার দুপুর ৩টে ৪৭ মিনিটে টুইটে মমতা লেখেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ওঁকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-এর ক্ষয়ক্ষতির হিসেব বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি’। রাজ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সে কথা উল্লেখ করে মমতা জানিয়েছিলেন, দিঘা-সুন্দরবনের উন্নয়নের জন্য ২০ হাজার কোটির প্যাকেজ চেয়েছেন তিনি। তবে দিঘার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেই ফেলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে ২০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ চেয়েছি। দিঘার জন্য ১০ হাজার কোটি আর সুন্দরবনের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ। তবে জানি না পাবে কি না।’’
মমতার দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর তরফে জবাব এল ১ ঘণ্টারও কম সময়ে। বিকেল ৪টে ৪৩ মিনিটে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ঘোষণা করা হল এক হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণের কথা। আর টুইটারে মোদী বাংলা হরফে লিখলেন, ‘আজ আমি নিজে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছি। গোটা দেশ পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশার পাশে আছে’।