ফাইল চিত্র।
সমুদ্রের সেই তেজ আর নেই। তবে চিরচেনা সৈকত শহরের সর্বাঙ্গে শুধুই ক্ষতচিহ্ন।
শঙ্করপুর, মন্দারমণিতে বৃহস্পতিবারও জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। ঢেউয়ের তোড়ে ভেসেছে বাঁধ। জলের তলায় বহু গ্রাম। লোকজন সব ভিটেমাটি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছেন।
‘ইয়াসে’র ধাক্কায় দিঘা এখন ধ্বংসস্তূপ। ওল্ড দিঘার ব্লু ভিউ স্নানঘাটের কাছে পরপর যে শ’খানেক দোকানে পর্যটকেরা রকমারি জিনিসের খোঁজে ঢুঁ মারেন, তার দরজাটুকুও আর নেই। জিনিসপত্র নিশ্চিহ্ন। পাশেই বিশ্ববাংলা উদ্যান লন্ডভন্ড। লোহার রেলিং, ফুলের টব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। সৈকত বরাবর সৌন্দর্যায়নে যে বাহারি বাতিস্তম্ভ লাগানো হয়েছিল, সেগুলিও সব ধরাশায়ী। ব্লু ভিউ স্নানঘাটের কাছে যেতেই সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য। যত দূর চোখ যায় রাশি রাশি কালো পাথর পড়ে রয়েছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা ফাঁক গলে সাইকেল নিয়ে হেঁটে আসছিলেন। বললেন, ‘‘একেবারে নিউ দিঘা পর্যন্ত এ রকমই অবস্থা।’’
এ দিন সকালে দিঘা পরিদর্শনে যান রামনগরের বিধায়ক তথা মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি। তিনি বলেন, ‘‘যত দ্রুত সম্ভব দিঘাকে স্বাভাবিক রূপে ফেরানোই আমাদের লক্ষ্য। আশা করছি, এক মাসের মধ্যেই আমরা সেই কাজ করতে পারব।’’ তিনি আরও জোড়েন, ‘‘আমরা আমাদের মতো করে কাজ শুরু করে দিয়েছি। আজ, শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী আসবেন। তিনি সব দেখে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিলে সে ভাবে কাজ করব।’’ একমাসের মধ্যে দিঘাকে ছন্দে ফেরাতে একযোগে কাজ করছে পূর্ত, সেচ, বিপর্যয় মোকাবিলা, পর্যটন, মৎস্য দফতর। সব দফতরের সঙ্গে সমন্বয় করে চলেছে দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ। পর্ষদের চেয়ারম্যান জ্যোর্তিময় করও বলছেন, ‘‘এক একটি দফতর নিজের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করলে এই কাজে বেশি সময় লাগবে না।’’
বৃহস্পতিবার সকাল এগারোটা। জোয়ারের উথালপাথাল সবে থেমেছে, ধরেছে বৃষ্টি। জলোচ্ছ্বাসে তছনছ মেরিন ড্রাইভের ধার বরাবর হেঁটে আসছিলেন অনেকে। এগোচ্ছিলেন তাজপুরের দিকে। কারও হাতে মাদুর, বালিশ, বিছানা। কারও কোলে সন্তান। চাঁদপুর গ্রামের বায়া বেরা বললেন, ‘‘পাকা বাড়ির ভিতর থেকে ফ্রিজ, টিভি সব ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে সমুদ্র। আমি বুধবার রাতেও বাড়ি ছাড়িনি। কিন্তু পানীয় জল বলে কিছু নেই। তাই সকলে বেরিয়ে পড়েছি।’’
এ দিন তাজপুর থেকে শঙ্করপুর যাওয়ার পথে মেরিন ড্রাইভের ধারে নির্মীয়মাণ কংক্রিটের বাঁধ জলোচ্ছ্বাসে অনেকটাই ভেঙেছে। রাস্তারও দফারফা। পার্শ্ববর্তী চাঁদপুর, লছিমপুর, জলধায় অধিকাংশ বাড়ি এখনও জলমগ্ন। অনেকেই বড় বাঁধের পাশে দোকানে আশ্রয় নিয়েছেন। অসহায় সেই সব গ্রামবাসী জানাচ্ছেন, সরকারি ত্রাণ শিবিরে খাবার, পানীয় জল কিছুই নেই। তাছাড়া ত্রাণ শিবিরের ভবনও বিপজ্জনক। বালিসাই থেকে তাজপুর যাওয়ার রাস্তার দু’দিকের মাছের সব ভেড়িও ভেসে গিয়েছে।
বিধ্বস্ত মন্দারমণিও। সমুদ্রমুখো হোটেলগুলি বেশিরভাগই ভেঙেচুরে গিয়েছে। এ দিন সকালেও জলোচ্ছ্বাস হয়েছে মন্দারমণিতে। বুধবার দুপুর থেকে মন্দারমণি উপকূল থানার পাশের বড় বাঁধ জোয়ারের জলে ভেসে গিয়েছে। কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন সেখানকার বহু মানুষ। তাদের স্থানীয় একটি মৎস্য খটির পাশে সরকারি আয়লা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। আর দাদনপাত্রবাড়ে বেশ কিছু দোকানপাট এবং হোটেল এখনও জলের তলায়।