পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের ইতিহাসে প্রতি দশটি বিধ্বংসীতম ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের আটটি সৃষ্টি হয় বঙ্গোপসাগরে। নথিবদ্ধ ইতিহাসে ৩৬ টি ভয়াবহ ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে ২৬ টিরই জন্মস্থান এই সমুদ্রভাগ।
ক্রমাগত সমুদ্রমন্থনে ‘ভোলা’, ‘সুপার সাইক্লোন ১৯৯৯’, ‘আমপান’ (প্রকৃত নাম উম পুন)-সহ অসংখ্য ঘূর্ণিঝড় উঠে এসেছে বঙ্গোপসাগর থেকে।
বঙ্গোপসাগরে জন্ম নেওয়া এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। গত দু’শো বছরে পৃথিবীর ৪২ শতাংশ ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় তাণ্ডব চালিয়েছে বাংলাদেশে। প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২০ লক্ষ মানুষ।
ক্ষয়ক্ষতি বা ঘূর্ণিঝড়ের প্রলয়লীলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তুলনায় বেশি পিছিয়ে নেই ভারতও। ভারতের দক্ষিণ অংশকে তার পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ, তিন দিক থেকেই সামুদ্রিক ঝড়ের তাণ্ডব সহ্য করতে হয়।
তবে তুলনামূলক ভাবে আরবসাগর, ভারত মহাসাগরের তুলনায় বঙ্গোপসাগর থেকে অনেক বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ধেয়ে আসে ভারতের স্থলভাগে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপে ভারতের যে রাজ্যগুলি নিয়মিত ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার মধ্যে অন্যতম হল পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু।
বিশ্বের সার্বিক মহাসাগরীয় অঞ্চলের মাত্র ০.৬% স্থান অধিকার করে আছে বঙ্গোপসাগর।
ভূতাত্ত্বিকদের মত, বঙ্গোপসাগরের ত্রিভুজাকৃতি এবং এর অগভীর তলদেশই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার আঁতুড়ঘর।
আরবসাগরের তুলনায় বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ঘনীভূত হওয়ার হার অন্তত পাঁচগুণ বেশি। বঙ্গোপসাগরের জলতলের তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতাও ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতক্ষেত্র হিসেবে আদর্শ।
বছরভর বঙ্গোপসাগরের জলতলের তাপমাত্রা থাকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাশাপাশি ক্রমাগত বৃষ্টিপাত এই অংশের আর্দ্রতাকে ধরে রাখে। ফলে নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় এবং ঘূর্ণিঝড় থেকে মহাঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে সময় লাগে না।
পাশাপাশি, বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রকোপে ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতক্ষেত্র আরও উর্বর হয়েছে উত্তাল বঙ্গোপসাগরের বুকে।