আমপান।
সুন্দরবনে ঘূর্ণিঝড় ঢোকার পরে মুখ ঘুরিয়ে তার বাংলাদেশে চলে যাওয়া দেখতেই অভ্যস্ত পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু আমপান কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা হয়ে নদিয়া, মুর্শিদাবাদ গেল কেন? আবহবিজ্ঞানীদের একাংশ বলছেন, মায়ানমার লাগোয়া বাংলাদেশ উপকূলে দাঁড়িয়ে থাকা উচ্চচাপ বলয়ের ধাক্কাতেই আমপান বাংলাদেশের দিকে বাঁক নিতে পারেনি। উল্টে সোজা উঠে এসেছে কলকাতার দিকে। তাতেই এমন বিধ্বংসী হামলা হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ের।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলছেন, পশ্চিমবঙ্গের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের জন্য দেখা গিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় পারাদ্বীপ পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গের দিকে এলে তা উপকূল ঘেঁষে বাংলাদেশের দিকে চলে যায়। এর আগে ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর কিংবা ২০১৯ সালে বুলবুলের সময় তা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু গত বুধবার মায়ানমার লাগোয়া বাংলাদেশ উপকূলের কাছে একটি শক্তিশালী উচ্চচাপ বলয় ছিল। তার ধাক্কাতেই সুন্দরবন থেকে বাঁক নিতে পারেনি আমপান। আবহবিদেরা জানান, স্থলভূমিতে ঢোকার পরেই কলকাতার উত্তর-পূর্ব দিক থেকে কোনাকুনি ভাবে উঠে নদিয়া-মুর্শিদাবাদ হয়ে বাংলাদেশে গিয়েছে আমপান। সাধারণত, উপকূলের কাছে এলেই ঘূর্ণিঝড় শক্তি খোয়াতে শুরু করে। গোকুলবাবু বলছেন, ‘‘এ বার পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের কাছেও সাগরের জলের উষ্ণতা স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি ছিল। তার ফলে জল বাষ্পীভূত হয়ে স্থলভূমিতে আছড়ে পড়ার আগে পর্যন্ত আমপানকে শক্তি জুগিয়েছে।’’
আরও পড়ুন: ‘অতিবিরল ঝড়’ তকমা চায় রাজ্য
কলকাতা-সহ বঙ্গের একাংশে দমকা হাওয়া বইছে। আবহবিদেরা জানান,বঙ্গের বায়ুচাপের ভারসাম্যে কিছু ‘অস্বাভাবিকতা’ রয়েছে। উত্তর-পূর্ব ও উত্তরবঙ্গের একাংশে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষা আসতে দেরি থাকলেও আমপানের প্রভাবে সাগর থেকে হাওয়া ঢুকছে। সব মিলিয়েই এই পরিস্থিতি। তবে এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফের ঘূর্ণিঝড় নিয়ে নানান গুজব শুরু হয়েছে। আবহবিজ্ঞানীরা জানান, আপাতত কোনও ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা নেই। ‘নিসর্গ’ বলে একটি ঘূর্ণিঝড়ের নাম ছড়িয়েছে। মৌসম ভবনের যে ঘূর্ণিঝড় নামকরণের তালিকা রয়েছে তাতে প্রথম নাম নিসর্গ। পরবর্তী কালে উত্তর ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় হলে সেই নাম দেওয়া হবে। কিন্তু সেটা এখনই হবে এমন কোনও ঘোষণা আবহাওয়া দফতর করেনি।