Cyclone Amphan

হাজার হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত, বিদ্যুৎ নেই, বিধ্বস্ত গোবরডাঙা

বুধবার সন্ধ্যা থেকে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত আমপান দাপট চালিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অংশে।

Advertisement

উজ্জ্বল চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২০ ২১:৪০
Share:

প্রায় ১২ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে গোবরডাঙায়।—নিজস্ব চিত্র।

সবই দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে। কোথাও কোথাও গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি-তার একেবারে দলা পাকিয়ে।প্রায় ১৭ হাজার বাড়ির মধ্যে প্রায় ১২ হাজার কোনও না কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। বিদ্যুৎ নেই।কবে আসবে, কেউ বলতে পারছেন না। প্রায় ৪০০ বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গিয়েছে। দু’টি ট্রান্সফর্মার উড়ে গিয়ে পড়েছে। মোবাইল, ল্যান্ডলাইন, ইন্টারনেট— কার্যত সব স্তব্ধ। টিম টিম করে চলছে একটি মাত্র সংস্থারই মোবাইল পরিষেবা। তা-ও মাঝে মাঝে।এমনই অবস্থা উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙার। লকডাউনের মধ্যে এমনিতেই স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ছিল না। কিন্তু, আমপান (প্রকৃত উচ্চারণে উম পুন) সেই জীবনযাত্রায় শেষ পেরেকটা মনে হয়পুঁতেই দিয়েছে।

Advertisement

বুধবার সন্ধ্যা থেকে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত আমপান দাপট চালিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অংশে। সে দিন সকাল থেকেই এলাকায় রটে যায়, আমপানের যাত্রাপথে গোবরডাঙা রয়েছে।পেশায় কেবল ব্যবসায়ী বাবুপাড়ার বাসিন্দা তাপস দাস বলেন, ‘‘সকাল থেকেই শুনছিলাম এখান দিয়েই ঘূর্ণিঝড় যাবে। সন্ধেবেলা টের পেলাম, ঝড় কাকে বলে! এমন সোঁ-সোঁ শব্দ, মনে হচ্ছিল সমুদ্রের পাড়ে রয়েছি। ঘরের মধ্যে ছিলাম, তাও মনে হচ্ছিল, উড়িয়ে নিয়ে যাবে।’’ ঝড়ের রাত কাটিয়ে তাপসবাবু এখন আতঙ্কের রাত কাটাচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সকালে বেরিয়ে দেখলাম, গোটা এলাকায় বিদ্যুতের তার, গাছ, আমাদের কেবলের তার সব লন্ডভন্ড। কেবল সংযোগের তার অপেক্ষাকৃত সরু হয়। সবইছিঁড়ে গিয়েছে। উড়িয়েও নিয়ে গিয়েছে অনেক জায়গায়। কবে আবার স্বাভাবিক পরিষেবা দিতে পারব জানি না। প্রচুর টাকার ক্ষতি হয়ে গেল।’’

ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এলাকার দু’টি ট্রান্সফর্মার।

Advertisement

ক্ষতির কথা বলতে গিয়ে গোবরডাঙা পুর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি শঙ্কর দত্ত হিসাব দিলেন প্রায় ৭ কোটি ১০ লক্ষ টাকার। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে একটা হিসাব পুরসভার তরফে করা হয়েছে। এখনও আমরা সব জায়গায় পৌঁছতে পারিনি। যে সব জায়গায় পৌঁছনো গিয়েছে, সব তছনচ। সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে আম এবং চাষের খেতের।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘গোবরডাঙায় প্রায় ১৭ হাজার বাড়ি রয়েছে। তার মধ্যে অন্তত ১২ হাজার বাড়ি কোনও না কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। কোথাও চাল উড়েছে, তো কোনও বাড়িতে গাছ পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’’

গাছ পড়ে আটকে গিয়েছে রাস্তা।

পুরসভা এবং রাজ্য বিদ্যুৎবণ্টন সংস্থারতরফে আপাতত ভেঙে পড়া-উপড়ে যাওয়া গাছগুলো সরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিদ্যুতের খুঁটি সারানোর কাজ শুরু করা গেলেও কবে ফের বিদ্যুৎ সংযোগ আসবে এলাকায়, তা বলতে পারছেন না কোনও আধিকারিকই। বিদ্যুৎবণ্টন সংস্থার এক ঠিকে কর্মীঅনন্ত দাস বললেন, ‘‘গোবরডাঙা পুর এলাকাতেই প্রায় ৪০০ বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙেছে। কিছু মেরামত করা গেলেও বেশির ভাগই পাল্টাতে হবে। হাই টেনশন লাইনেরও খুঁটিও ভেঙেছে বহু। ট্রান্সফর্মার ভেঙে পড়েছে দু’জায়গায়। সব ঠিকঠাক করার পর পরিষেবা সব জায়গায় স্বাভাবিক হতে দিন সাতেক তো লাগবেই।’’

প্রায় ৪০০ বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গিয়েছে। হাই টেনশন লাইনেরও খুঁটিও ভেঙেছে বহু।

আগে যখন এলাকায় লোডশেডিং হত, তখন পাড়ায় পাড়ায় জেনারেটরের ব্যবসা ছিল। সন্ধ্যাবেলা থেকে রাত পর্যন্ত সেগুলি চালিয়ে লোডশেডিংয়ের সময়ে বাড়ি বাড়ি বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হত। কয়েক বছরে লোডশেডিং একেবারেই কমে যাওয়া, সে ব্যবসা এখন আর নেই। মূলত অনুষ্ঠান বাড়িতেই সেগুলো ইদানীং কাজে লাগানো হত। কিন্তু আমপানের কারণে বিদ্যুৎ পরিষেবা যখন একেবারে অনিশ্চিত, তখন অনেক পাড়াতেই জেনারেটর বসাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। অনেকে আবার বাড়ি বাড়ি জেনারেটর নিয়ে গিয়ে পাম্প চালিয়ে জল তোলা এবং ইনভার্টারে চার্জ দেওয়ার বন্দোবস্ত করছেন। এক বারের জন্য লাগছে ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা। তেমনই এক ব্যবসায়ী গৌরহরি সাহা বললেন, ‘‘আমাদের এমনিতে ডেকরেটর্স এবং লাইট-মাইক-জেনারেটরের ব্যবসা। এই সময় অনেকেই সমস্যা পড়েছেন। তাঁদের সাহায্য করতেই ভ্যানরিকশা করে বাড়ি বাড়ি জেনারেটর নিয়ে পৌঁছচ্ছি। তেলের দাম, মজুরি, ভ্যানভাড়া— সব মিলিয়ে খরচা ভালই। যার যেমন খরচ, সে তেমনটাই নিচ্ছে। ট্যাঙ্কে জল তোলার পাশাপাশি অনেকে আবার টর্চ-ইনভার্টারও চার্জ দিয়ে নিচ্ছেন।’’

আরও পড়ুন: জেলা দেখে হাজার কোটি ঘোষণা মোদীর, মমতা দেখালেন কলকাতার ছবিও

একটি বিশেষ সংস্থার মোবাইল পরিষেবাই গত তিন দিন ধরে চালু রয়েছে। বাকি সবই অকেজো। ফলে ওই সংস্থার সিম নেওয়ার জন্য দোকানে দোকানে ভিড় বেড়েছে। তেমনই একটি দোকানের মালিক বাপ্পাদিত্য ঘোষাল বললেন, ‘‘লকডাউনের মধ্যে সিম একেবারেই আসছিল না। কয়েক দিন আগে বেশ কয়েকটি সিম তুলেছিলাম। শুক্রবার সকাল থেকে একের পর এক খদ্দের আসছেন। ওই সংস্থার সিম চাই। কিন্তু সিম নিলেও মোবাইল চার্জ দেবেন কোথায়? তাই অনেকেই বলছেন মোবাইল চার্জের ব্যবস্থা করতে। কিন্তু আমার বাড়িতেও তো ইনভার্টারের চার্জ শেষ। প্রথমে দু’এক জনের করেও দিয়েছি। কিন্তু এখন আমার পক্ষেও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে, সিম নিয়েও মানুষের তা কোনও কাজে লাগছে না।’’

—নিজস্ব চিত্র।

আরও পড়ুন: আশ্রয়হীন, বিধ্বস্ত... আমপানের ধাক্কায় থমকে গিয়েছে জীবন

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement