আমপান পরবর্তী পরিস্থিতিতে কলকাতার যে দুর্ভোগ, তা ফিরহাদ হাকিমের উপরে চাপালেন সাধন পাণ্ডে। ফাইল চিত্র।
এর আগে আক্রমণ করেছিলেন দল ছেড়ে যাওয়া বিধায়ক তথা কলকাতার প্রাক্তন মেয়র। এ বার অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে আক্রমণে নামলেন দলে এবং সরকারে স্বমহিমায় বিরাজ করা মন্ত্রী। আমপান (প্রকৃত উচ্চারণে উম পুন) পরবর্তী পরিস্থিতিতে কলকাতার যে দুর্ভোগ, তার পুরো দায়টাই কলকাতা পুরসভার প্রশাসক ফিরহাদ হাকিমের উপরে চাপালেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা মানিকতলার বিধায়ক সাধন পাণ্ডে। পরিস্থিতি মোকাবিলার বিষয়ে বিধায়কদের সঙ্গে কোনও আলোচনাই করেননি প্রশাসক, অভিযোগ মন্ত্রীর। সাধন নিজে কেন আসেননি আলোচনা করতে? পাল্টা প্রশ্ন ফিরহাদের।
ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবের পরে কলকাতায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরানোর জন্য পুরসভা কোনও কাজ করেনি বলে রাজ্যের ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে মঙ্গলবার অভিযোগ করেছেন। নিজের নির্বাচনী এলাকাতেই এ দিন পথে নেমেছিলেন সাধন। ওই এলাকায় স্বাভাবিকতা ফেরানোর কাজ তাঁকেই দেখভাল করতে হচ্ছে বলে সাধনের দাবি। সেই ‘দেখভালের’ ফাঁকেই এ দিন পুরসভা তথা প্রশাসকের ভূমিকা নিয়ে মুখ খোলেন সাধন। সংবাদমাধ্যমের সামনে বিস্ফোরক অভিযোগ তোলেন তিনি। কলকাতা পুরসভা কিছুই করতে পারেনি এবং পুরসভার উপরে তিনি আর ভরসাও করছেন না বলে সাধন পাণ্ডে এ দিন মন্তব্য করেছেন।
সাঙ্ঘাতিক ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও কলকাতা পুরসভা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়নি বলে সাধন পাণ্ডে এ দিন মন্তব্য করেছেন। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতির মোকাবিলা কী ভাবে করা হবে, সে বিষয়ে প্রশাসক ফিরহাদ কোনও পরিকল্পনাই তৈরি করতে পারেননি বলে সাধন পাণ্ডের অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘‘এটা মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নয়। এটা প্রশাসকের দায়িত্ব।’’ কিন্তু প্রশাসক ফিরহাদ কারও সঙ্গে আলোচনাই করেননি বলে সাধন তোপ দেগেছেন এ দিন।
আরও পড়ুন- বিধ্বস্ত বহু মানুষকে কন্যাশ্রীর টাকায় খাওয়াচ্ছেন রিনা
রাজ্যের ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী তথা কলকাতার প্রবীণতম বিধায়কদের অন্যতম সাধন পাণ্ডে মনে করছেন— বিধায়কদের ডেকে আলোচনায় বসা উচিত ছিল ফিরহাদ হাকিমের। শুধু নিজের কথা নয়, বেহালা পূর্বের বিধায়ক তথা কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কথাও এ দিন উল্লেখ করেছেন সাধন। শোভন যে হেতু এখনও একজন বিধায়ক, সে হেতু শোভনের সঙ্গেও পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলা উচিত ছিল ফিরহাদের, মত ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রীর। কোনও বিষয়েই ফিরহাদ কোনও আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করেন না বলে সাধন এ দিন অভিযোগ করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি নিজে অনেক বিষয় ফিরহাদকে জানিয়েও কোনও ফল পাননি বলে সাধন এ দিন দাবি করেছেন। কলকাতার পুর কমিশনার পদ থেকে খলিল আহমেদকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও এ দিন মুখ খুলেছেন সাধন। খলিল অত্যন্ত দক্ষ আধিকারিক ছিলেন, ফিরহাদের ব্যর্থতা ঢাকতেই খলিলকে সরানো হয়েছে— এ দিন এমনই দাবি করেছেন সাধন।
কলকাতা পুরসভার প্রশাসক তথা রাজ্যের পুরমন্ত্রী কিন্তু চুপ করে থাকেননি আক্রমণের মুখে। ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রীকে তিনি পাল্টা আক্রমণ করেছেন এ দিন। কলকাতায় এখন যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে তাঁর পক্ষে সাধন পাণ্ডের কাছে গিয়ে কথা বলে আসার সম্ভব নয় বলে ফিরহাদ মন্তব্য করেছেন। সাধনের কিছু বলার থাকলে তিনি নিজে এসে কেন বলে যাননি? প্রশ্ন তুলেছেন কলকাতা পুরসভার প্রশাসক।
আরও পড়ুন- ক্ষতের চেহারাটা সামনে আসছে, হাসনাবাদ থেকে যোগেশগঞ্জের সোম-মঙ্গলবারের ছবি
ভেঙে পড়া গাছ সরানো বা অন্যান্য পুর পরিষেবা স্বাভাবিক করা, কোনও কিছুই পুরসভা করেনি বলে যে অভিযোগ সাধন পাণ্ডে তুলেছেন, তা সম্পূর্ণ নস্যাৎ করেছেন ফিরহাদ হাকিম। করোনা এবং ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে, দুটো পরিস্থিতির বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়তে হচ্ছে তাঁকে— মনে করিয়ে দিয়েছেন ফিরহাদ। সাধন পাণ্ডের দিকে কটাক্ষ ছুড়ে ফিরহাদের মন্তব্য, ‘‘আমি রাস্তায় নেমে কাজ করছি। আর যাঁরা সমালোচনা করছেন, তাঁরা করোনার ভয়ে ঘরে বসে রয়েছেন।’’
ফিরহাদের ভূমিকা নিয়ে কয়েক দিন আগে মুখ খুলেছিলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়। দুর্যোগের সব রকম পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও কলকাতা পুরসভা কোনও রকম প্রস্তুতি নিতে পারেনি এবং দুর্যোগ মোকাবিলার কোনও পরিকল্পনাই তৈরি করতে পারেনি বলে শোভন তোপ দেগেছিলেন সে দিন। কলকাতার পরিস্থিতি দেখে তাঁর ‘যন্ত্রণা’ হচ্ছে বলে শোভন মন্তব্য করেছিলেন। এ বার ফিরহাদের অস্বস্তি আরও বাড়ালেন সাধন। শোভন এখন তৃণমূলে নেই, ২০১৯-এর অগস্টেই তিনি তৃণমূল ছেড়ে দিয়েছেন। তাই শোভনের সমালোচনাকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যা দেওয়ার সুযোগ ছিল ফিরহাদের সামনে। কিন্তু সাধন পাণ্ডে দলে তো রয়েছেনই, রাজ্যের মন্ত্রিসভাতেও রয়েছেন। দলের ভিতর থেকেই এই তোপ ফিরহাদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলল বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন।