চণ্ডীতলা-১ ব্লকের রবীন কোলেও ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছিলেন। পরে তিনি সেই টাকা ফিরিয়ে দেন।—ফাইল চিত্র।
সরকারি অর্থ নিয়ে প্রতারণা করলে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া বা পদত্যাগে বাধ্য করানোই কি একমাত্র শাস্তি? এর প্রশাসনিক উত্তর, ‘‘না।’’
ঘূর্ণিঝড় আমপানের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নির্দিষ্ট সরকারি টাকা অসৎ উপায়ে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে অনেকের বিরুদ্ধে। কেউ কেউ ভয় পেয়ে সেই টাকা ফেরতও দিচ্ছেন। প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকের বক্তব্য, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বাদ দিয়ে ‘ভুয়ো’ ক্ষতিগ্রস্তের নাম সরকারি ক্ষতিপূরণের তালিকায় ঢোকানো যেমন আইনত অপরাধ, তেমনই প্রশাসনের কাছে সেই টাকা ফেরত দিতে আসা ব্যক্তিও আইনের চোখে সমান অপরাধী। ফলে উভয়ের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়ার সঙ্গত কারণ রয়েছে। কিন্তু এমন কোনও পদক্ষেপ করা হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না জেলা বা রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকেরা।
যাঁরা স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে টাকা ফেরত দিতে চাইছেন, তাঁদের অনেকের বক্তব্য, ‘ভুল’ করে তাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যাওয়ায় তাঁরা তা সরকারকে ফেরত দিতে চান। টাকা ফিরিয়েও নিচ্ছেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা। এখানেই প্রশ্ন তুলছেন অনেক প্রবীণ আমলা। তাঁদের বক্তব্য, কেউ নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে দাবি করলে তবেই সাধারণ ভাবে তাঁর নাম ক্ষতিপূরণের তালিকায় ওঠে। এখন টাকা ফেরত দেওয়ার অর্থ, সেই ব্যক্তি প্রথমে মিথ্যা দাবি করেছিলেন। সেই জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির তছরুপ, প্রতারণা, দলবদ্ধ ভাবে ষড়যন্ত্র করা এবং সরকারি আধিকারিককে মিথ্যা তথ্য দেওয়া বা বিভ্রান্ত করার ধারায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
আরও পড়ুন: আমপানের ক্ষতিপূরণ তালিকায় ৮০% ভুয়ো নাম, চিঠি দিলেন পাঁচলার প্রধান
ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করতে পারে স্থানীয় পঞ্চায়েতও। প্রশাসনিক ব্যাখ্যা, সেই তালিকার ভিত্তিতে সরকারি ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তের বদলে অন্য কেউ পেলে (সরকারের সর্বোচ্চ স্তর যা স্বীকারও করেছে) তার দায় পঞ্চায়েতের সংশ্লিষ্ট পদাধিকারীর। পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের ব্যাখ্যা, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনত পদক্ষেপ করা সম্ভব। সরকারি পদে থেকে বিশ্বাস ভঙ্গ করা, প্রতারণা, পদাধিকারী হয়ে সরকারের বিশ্বাস ভঙ্গ করার মতো ধারা প্রযোজ্য হতে পারে সংশ্লিষ্ট কর্তাদের বিরুদ্ধে।
প্রশ্ন উঠছে, ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক বা বিডিও-রা কি এই ‘ভুলের’ দায় এড়াতে পারেন? প্রবীণ আমলাদের বক্তব্য, দায় থেকেই যায়। তবে সাধারণ ভাবে পঞ্চায়েতের নথির উপরেই ভরসা রাখতে হয় বিডিওদের। স্বল্প সময়ে তাঁদের পক্ষে তালিকাভুক্ত প্রত্যেকের সম্পর্কে অনুসন্ধান করা সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন: দেড় ঘণ্টায় তৈরি তালিকায় নাম প্রধানের বহু আত্মীয়ের
বুধবার বঞ্চিত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা সাত দিনের মধ্যে তৈরির নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। আশাকর্মীদের মতো সরকারি সহায়কদের সেই কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।