এএফপির প্রতীকী ছবি।
হিসেব পাওয়া যাচ্ছে না ঝড়ে পড়া প্রায় ৭০ হাজার গাছের। সরকারি কোষাগারে গাছ বিক্রির কোনও টাকা জমাও পড়েনি। খোঁজ নেই মূল্যবান বহু গাছের। এ চিত্র হুগলি জেলার।
হুগলি জেলার হরিপাল ব্লকের আশুতোষ পঞ্চায়েতের প্রধান সুমিত সরকার এলাকার গ্রামীণ হাসপাতালে আমপানে ভেঙে পড়া মেহগনি, অর্জুন, শিরীষ-সহ ১৭টি গাছ বিক্রি করেছেন ৭৫ হাজার টাকায়। অথচ, বন দফতরের হিসেব, ৫০ বছরের পুরনো একটি মেহগনিরই বাজারদর অন্তত ৬০ হাজার টাকা। এই ঘটনার প্রতিবাদ করে এলাকার তৃণমূল নেতাদের হাতে হেনস্থা হতে হয় এলাকার বাসিন্দা জেলা পরিষদের সদস্য শম্পা দাসকে। এর পরেই গাছ বিক্রির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করার নির্দেশ দেওয়া হয় ওই প্রধানকে। সেই টাকা মঙ্গলবারেও জমা পড়েনি।
এই ঘটনাকে ‘হিমশৈলের চূড়া’ বলেই মনে করছেন আধিকারিকদের একাংশ। তাঁদের এক জনের কথায়, ‘‘জেলায় বেআইনি ভাবে কত কোটি টাকার গাছ বিক্রি হয়েছে তা ওই ঘটনা থেকে অনুমান করা যায়।’’
বন দফতরের প্রাথমিক হিসেবে, হুগলি জেলায় আমপানে ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় ৭০ হাজার গাছ পড়েছে। নিয়ম বলছে, সরকারি জমিতে পড়ে যাওয়া গাছগুলির মূল্য নির্ধারণের পরে টেন্ডার ডেকে বিক্রি করা হয়। সেই টাকা জমা পড়ে সরকারি কোষাগারে। কিন্তু, বিপর্যয়ের প্রায় দেড় মাস পরেও কোষাগারে গাছ বিক্রির কোনও টাকাই জমা পড়েনি টাকা। ঝড়ে পড়ে যাওয়া গাছগুলিও উধাও।
আরও পড়ুন: আবাস প্রকল্পেও ঘুষ! অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা
বন দফতরের আধিকারিকদের একাংশের আশঙ্কা, হাজার-হাজার গাছ বিক্রি হয়েছে প্রশাসনকে না জানিয়ে। কোটি-কোটি টাকা চুরি হয়েছে। বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘কিছু জায়গায় এই সব হয়েছে শুনেছি। নিয়ম মেনে বিক্রি হলে সরকারের কোষাগারে অনেক টাকা জমা পড়ে। ব্যক্তিগত স্বার্থে গাছ কেটে কেউ বিক্রি করলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত প্রশাসনের। জানালে আমরাও ব্যবস্থা নেব।’’
বন দফতরের করার কিছু নেই? বনমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘এই সব ক্ষেত্রে বন দফতরকে খবর দেওয়াই পঞ্চায়েত বা ব্লকের কাজ। তারা তা না করলে কী করব?’’
আরও পড়ুন: ‘গরিব কল্যাণ’ কী, জানেই না রাজ্য: মমতা
সিপিএম জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘রাজ্য সরকার বলে টাকা নেই। অথচ তৃণমূলের ডাকাবুকোরাই সরকারি গাছ কেটে বেচে দিল। এটা দলের লোকদের পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি।’’ শ্রীরামপুরের বিজেপির সাংগঠনিক সভাপতি শ্যামল বসুর অভিযোগ, ‘‘শাসকদলের লোকেরা সরকারি গাছ কেটে করাতকল মালিকদের বিক্রি করেছে।’’
জাঙ্গিপাড়া ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমপানের রাতেই গাছ কেটে নিয়ে চলে গিয়েছিলেন অনেকে।’’ জেলা বন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কত গাছ পড়েছে তার সমীক্ষা শুরু হয়েছে। হুগলি ও শ্রীরামপুর সংশোধনাগার চত্বরে এবং পূর্ত দফতরের জমিতে পড়ে যাওয়া কিছু গাছের মূল্য নির্ধারণের আবেদন করা হয়েছে। তবে পঞ্চায়েতগুলি থেকে এমন আবেদনের সংখ্যা সামান্য।’’