উত্তর ২৪ পরগনার রূপমারি গ্রামে মঙ্গলবারের ছবি।
আমপান সব তছনছ করে চলে গিয়েছে এক সপ্তাহ হয়ে গেল। এখনও দুই ২৪ পরগনার বহু গ্রাম জলের তলাতেই রয়ে গিয়েছে। ভাঙা বাঁধ পেরিয়ে জোয়ার-ভাটা চলছে গ্রামগুলোর মধ্যেও। খাবার-ত্রিপল-পানীয় জলের চাহিদা তো আছেই, তার থেকেও বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে— জল কখন নামবে এই প্রশ্নটা।
উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদ, ট্যাংরামারি, চকপাটলি, রূপমারিতে ত্রাণের কাজে যাওয়া বহু জনের কাছ থেকেই পরিস্থিতির যে বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে তা খুব একটা স্বস্তির নয়। গত রবিবার চকপাটলি গ্রাম পঞ্চায়েতের মহিষপুকুর গ্রামে গিয়েছিলেন আমপান রিলিফ নেটওয়ার্কের সদস্যরা। তাঁদেরই একজন বিশ্বজিৎ হাজরা ছবি পাঠিয়েছিলেন এক ডুবে যাওয়া বাড়ির। মঙ্গলবার ঠিক সেখান থেকে তোলা ইন্দ্রনাথ মারিকের ছবি দেখলে বোঝা যায়, জল যেখানে ছিল, সেখানেই রয়েছে।
হাসনাবাদ ব্রিজ পেরিয়ে ডানদিকে প্রথমেই পড়ে ট্যাংরামারি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। এর মধ্যে টিয়ামারি আর ট্যাংরামারি গ্রামে ভেঙে গিয়েছে ডাঁসা নদীর বাঁধ। এই গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৭টি গ্রামসভার অর্ধ্বেক প্লাবিত। খাঁপুকুর, বকুলতলা, দক্ষিণ শিমুলিয়া, কালুতলা এখনও জলের তলায়।
আরও পড়ুন: এখনও জলে ডুবে হিঙ্গলগঞ্জ-সন্দেশখালি-হাসনাবাদ, কবে ফিরবে আগের জীবন?
এক গ্রাম। দুই দিন। এক ছবি। রবি আর মঙ্গলবার।
ট্যাংরামারি পেরিয়ে চকপাটলি গ্রাম পঞ্চায়েত। এর মহিষপুকুর, দক্ষিণ মহিষপুকুর, ঘুনি, ব্যানা, খড়ুলের গাঁ এখনও ডুবে আছে জলে। বালিয়াডাঙায় প্রায় দেড়শো পরিবার, আদিবাসী গ্রাম ঘোরিপাড়ায় দেড়শো থেকে পৌনে দুশো পরিবার ঘরবাড়ি ছাড়া। আমরুলগাছায় সব হারিয়েছে ৬০ থেকে ৭০টি পরিবার।
আরও পড়ুন: অ্যাডমিট কার্ড আগলে টুম্পা বলছে, পরীক্ষা দেবই
একই অবস্থা রূপমারি গ্রাম পঞ্চায়েতে। এই পঞ্চায়েতের হলদা, বাঁশতলি, কুমিরমারি, রূপমারি গ্রামেও এক ছবি। ডাঁসা আর গৌরেশ্বরের বাঁধ ভেঙেছে এখানে। জমিতে ৫-৬ ফুট জল। কুমিরমারি গ্রাম থেকে রিলিফ নিতে রূপমারিতে আসা শ্রীকৃষ্ণ গায়েন জানালেন, জোয়ারের সময় এক মানুষের উপর জল হচ্ছে কোথাও কোথাও। ভাটা এলে, জল কিছুটা কমলে, একসঙ্গে অনেকের জন্য রিলিফ নিয়ে গ্রামে ফিরবেন বলে অপেক্ষা করছিলেন শ্রীকৃষ্ণরা।
সরকারি ত্রাণ পৌঁছচ্ছে। কিন্তু অনেক জায়গাতেই তা যথেষ্ট নয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ত্রিপলের অভাবটাই সবচেয়ে বেশি। কোলের শিশুদের জন্য দুধের চাহিদাও রয়েছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, বিভিন্ন ধরণের সংগঠন নেমেছে ত্রাণের কাজে। বুধবার রাজ্য সরকারের দেওয়া হিসেবে, এই মুহূর্তে লাখ দুয়েক মানুষ ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন। এর বাইরেও কিন্তু বিশাল সংখ্যার মানুষ রয়েছেন খারাপ অবস্থার মধ্যে।
তবে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা এত দিন ধরে জমে থাকা জল। নোনা জলে কৃষিজমির অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠছে। ক’বছর চাষ করা যাবে না কে জানে। তার উপর মরা পশুপাখি পচতে শুরু করেছে। জল না সরলে সব পরিষ্কার করাও সম্ভব নয়। ফলে অসুখবিসুখের আশঙ্কা বাড়ছে ক্রমশ। বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু হয়নি প্রায় কোথাও। এটা যত দিন না হচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত গ্রাম থেকে গ্রামে এই জোয়ার-ভাটা থামবে না।
ভিডিয়ো এবং ছবি: ইন্দ্রনাথ মারিক।