Cyclone amphan

১০ দিন পরও জল নামেনি অনেক গ্রামে, ভয় বাড়ছে অসুখেরও

অনেক জায়গায় মাটির বস্তা ইত্যাদি দিয়ে নদীর ভাঙা বাঁধে জোড়াতালি দেওয়া হলেও, অনেক জায়গাতে সেটুকুও হয়নি। ফলে নদীর সঙ্গে জোয়ার-ভাটা খেলে চলেছে গ্রামে গ্রামে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২০ ১৯:৪৭
Share:

উত্তর চব্বিশ পরগণার রূপমারি গ্রামে শনিবারের অবস্থা।

আমপানের পর ১০ দিন হয়ে গেল। আজও জল থইথই করছে দুই ২৪ পরগনার অনেক গ্রাম। দক্ষিণে গোসাবা থেকে শুরু করে উত্তরের চকপাটলি— বহু গ্রাম এখনও ভেসে আছে সেই ২১ তারিখ থেকে। অনেক জায়গায় মাটির বস্তা ইত্যাদি দিয়ে নদীর ভাঙা বাঁধে জোড়াতালি দেওয়া হলেও, অনেক জায়গাতে সেটুকুও হয়নি। ফলে নদীর সঙ্গে জোয়ার-ভাটা খেলে চলেছে গ্রামে গ্রামে।

Advertisement

দক্ষিণ ২৪ পরগনায় গোসাবা দ্বীপ ঘিরে আছে গোমুখী আর বিদ্যাধরী নদী। এমনিতেই এই দুই নদীর কাছাকাছি সরে আসার কারণে বড় সঙ্কট তৈরি হচ্ছে বেশ কয়েক বছর ধরে। তার উপর গোমুখীর বাঁধ ভাঙল আমপানের ধাক্কায়। বিদ্যাধরীর বাঁধের অবস্থাও সঙ্গীন। এই দ্বীপেরই অংশ রাঙাবেলিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়ে রয়েছে সেই দিন থেকে। পরিস্থিতি করুণ।

গোসাবার শম্ভুনগরে কামাখ্যাপুর গ্রামের বাসিন্দা শ্যামল গায়েন এখন কর্মসূত্রে থাকেন কলকাতার দিকে। বিপর্যয়ের পর, সাহায্যের জন্য পৌঁছে গিয়েছেন গ্রামে। শ্যামল জানালেন, “এই মুহূর্তে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা রাঙাবেলিয়া উত্তরপাড়ার। ২৭৪টা পরিবার খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছে। গোসাবা মন্মথনগরেও বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গিয়েছে।”

Advertisement

এই স্লাইডে আরও চারটে ছবি রয়েছে

দু’দিন আগে ওই এলাকা থেকে ঘুরে আসা আমপান রিলিফ নেটওয়ার্কের সদস্য অরিজিৎ চক্রবর্তী বলছেন, “এখন ভীষণ প্রয়োজন খাবারদাবার, জিওলিন, সাবান এ সবের। জামাকাপড় আর বাসনপত্রও লাগবে এর পর। যে পরিস্থিতি এত দিন ধরে গ্রামের পর গ্রামে রয়েছে তাতে মেডিক্যাল ক্যাম্পও ভীষণ দরকার। তবে জল সরার পর খুব দ্রুত আর একটা জিনিস দরকার। তা হল নোনা জল ঢুকে পড়া পুকুরগুলোর সংষ্কার।”

একই রকম বানভাসি হয়ে আছে উত্তর ২৪ পরগনার চকপাটলি, রূপমারি, যোগেশগঞ্জ, হাসনাবাদের বহু এলাকা। শুক্রবার চকপাটলিতে ত্রাণের কাজে গিয়েছিলেন দমদমের ইন্দ্রনাথ মারিক। তিনি জানাচ্ছেন, “চকপাটলি পঞ্চায়েতের পাটলিখানপুর, ঘেরিপাড়া, ঘুনি, মহিষপুকুর— এই সব গ্ৰামের চিত্রটা একই রকম থেকে গেছে। তিন দিন আগে এখানে এসেছিলাম। ছবিটা প্রায় বদলায়নি। ধানজমি এখনও নোনাজলের নীচে, মরাগণ থাকলে হাতদেড়েক জল কমছে মাত্র। পাট, তিল সব নষ্ট।”

পাটলিখানপুরে ত্রাণ বিলির কাজ চলছে

সরকারি বা বেসরকারি ত্রাণ কমবেশি চকপাটলির এই সব এলাকায় পৌঁছচ্ছে। কিন্তু বাঁধ সারানোর কোনও উদ‍্যোগ এখনও শুরু হয়নি। “এটা না হওয়া পর্যন্ত, বাঁধ মেরামত শেষ না হওয়া পর্যন্ত, গোটা এলাকার প্রাথমিক সমস্যাটাই মিটবে না। এর পর তো আরও অনেক সমস্যা পড়ে আছে”— বলছিলেন মহিষপুকুরের বাসিন্দা সুবল দাস, যিনি অনেকটা এলাকা জুড়ে ত্রাণকাজে বড় ভূমিকা নিয়ে চলেছেন গত কয়েক দিন ধরে। আগামী দু-তিন বছর এখানে জমিতে চাষের সম্ভবনা নেই বললেই চলে।

এলাকায় অল্পবিস্তর মাছচাষ হয় নোনা জলের ভেড়িতে। ১০০ দিনের কাজ ছাড়া অন্য কোনও কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। আপাতত অন্য রাজ‍্যে গিয়ে কাজের দরজাও বন্ধ। স্থানীয় মানুষদের অনেকেই মনে করেন, আগামী দিনে রোজগারের অনিশ্চয়তা বড় আতঙ্কের বিষয় হয়ে উঠছে এই সব এলাকায়।

এই স্লাইডে আরও চারটে ছবি রয়েছে

উত্তর ২৪ পরগনার রূপমারির ছবিটাও এক রকম। এখানকার কুমিরমারি, রূপমারি আর বাইনারা গ্রাম ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এখনও জল নামেনি। জোয়ারের সময় কুমিরমারির কোথাও কোথাও চার-পাঁচ ফুট পর্যন্ত জল থাকছে।

ছবি: শ্যামল গায়েন, ইন্দ্রনাথ মারিক, অরিজিৎ চক্রবর্তী, বিশ্বজিত্ হাজরা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement