হাসনাবাদ ব্লকের পাটলি খানপুর পঞ্চায়েতের টিলারচক গ্রামে ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু জোয়ারের জলের তোড়ে বুধবার ফের ধুয়ে গেল বাঁধের কিছু অংশের মাটি। ছবি: নবেন্দু ঘোষ
তাঁদের জীবনচর্চায় আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে নদী। আর্শীবাদের থেকে অভিশাপের পাল্লা ভারী তার। সেই মাত্রা আরও বাড়ায় মাছের ভেড়ি। সুন্দরবন ও লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাছের ভেড়ির স্বার্থে ‘অবৈধ’ ভাবে নদীবাঁধকে ব্যবহার করা হয়। যাতে নদীর জল মাছের ভেড়িতে ঢুকতে (স্থানীয় ভাষায় যার নাম পয়ান) এবং বেরোতে পারে (স্থানীয় ভাষায় যার নাম বক্স) সে জন্য নদী বাঁধের বিভিন্ন অংশ কাটা হয়। এই কাটাগুলির মধ্যে দূরত্ব কম হওয়ায় ক্রমেই দুর্বল হয় বাঁধ। স্থানীয়দের মতে, ‘‘মাছ ভেড়ির সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা প্রভাব খাটিয়ে রাতের অন্ধকারে পয়ান-বক্স তৈরি করেন। বাড়িতে বেশি দরজা থাকলে যেমন নিরাপত্তার সমস্যা হয়, তেমনই পয়ান-বক্স নদীবাঁধকে দুর্বল করে। আমপানে তারই খেসারত দিতে হয়েছে।’’
আমপানের সময় উত্তর ২৪ পরগনায় নদীবাঁধ ভাঙার জন্য পয়ান-বক্সকেই কাঠগড়ায় তুলছেন স্থানীয়েরা। তুলনায় কম হলেও একই সমস্যা দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও। মাছের ভেড়ি নিয়ে সমস্যার কথা মানছেন সুন্দরবন লাগোয়া এলাকার বিডিওদের অনেকে এবং সেচ দফতরের কর্তারা। তবে মাছের ভেড়ি বা নদী লাগোয়া ইটভাটার সঙ্গে গ্রামীণ অর্থনীতির সম্পর্ক রয়েছে। তাতে যাতে ধাক্কা না-লাগে, আবার নদীবাঁধও যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না-হয়, সে জন্য মধ্যপন্থা অবলম্বনই শ্রেয় বলে মত সেচ দফতরের কর্তাদের। আর বিডিওদের বক্তব্য, মাছের ভেড়ির জন্য নদীবাঁধ ব্যবহার হলেও রক্ষণাবেক্ষণে যাতে গাফিলতি না-থাকে, তা দেখার জন্য স্থানীয় স্তরে পুলিশের সাহায্য নেওয়া হতে পারে।
সেচের পাশাপাশি মৎস্য দফতর, ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর ও পঞ্চায়েত দফতরের ভূমিকা রয়েছে। সে কারণে যৌথ ভাবে নদীবাঁধ পর্যবেক্ষণের জন্য মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যসচিবের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হবে বলে জানান সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।
আরও পড়ুন: লকডাউন উঠছে, করোনার সংক্রমণ এড়াতে পথ দেখাচ্ছেন অটো চালক
আরও পড়ুন: করোনায় অভাব তীব্র, আড়াই মাসের শিশুকন্যা বিক্রির নালিশ ঘাটালে
আগামী পরশু, শনিবার ভরা কোটাল। মঙ্গলবার, একাদশী থেকেই ধীরে ধীরে জল বাড়তে শুরু করেছে। আমপানে বাঁধের ক্ষতি হওয়ায় ভরা কোটালে প্লাবন নিয়ে চিন্তায় রয়েছে প্রশাসন। আপাতত বাঁশ ব্যবহার করে বাঁধ মেরামতির কাজ চলছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সাধ্যমতো বাঁধ মেরামতির চেষ্টা করা হচ্ছে। এত দ্রুত সবটা সম্ভব নয়।’’ তবে ভরা কোটালের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান সেচমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ চলছে। পর্যবেক্ষণ এবং নজরদারিতে কোথাও ঘাটতি নেই।’’ ওই সব এলাকার পরিস্থিতি দেখতে আজ, বৃহস্পতিবার সন্দেশখালি এবং পাথরপ্রতিমায় যাওয়ার কথা শুভেন্দুবাবুর।