ফাইল চিত্র।
পুলিশের তালিকাতেও ‘জল’!
আমপানের ক্ষতিপূরণ বিলি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ আসতে পুলিশকে সক্রিয় করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশকেও প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হাওড়ায় দেখা যাচ্ছে, পুলিশের তালিকাতেও ‘জল’ রয়েছে।
কেমন ‘জল’? জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু উলুবেড়িয়া-১ ব্লকেই বিডিওর নেতৃত্বের গড়া টাস্ক ফোর্সের হাতে পঞ্চায়েতগুলির করা ২২৫০ জন ক্ষতিগ্রস্তের নামের তালিকা (যা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ) এসেছিল। পুলিশ জমা দেয় ৫৮১ জনের তালিকা। মেলাতে গিয়ে দেখা যায়, দুই তালিকায় মাত্র ৬২ জনের নামের মিল রয়েছে। টাস্ক ফোর্স পুলিশের তালিকাই বেশি বিশ্বাসযোগ্য ধরে নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে। কিন্তু দেখা যায়, পুলিশের তালিকায় এমন ৩৫০ জনকে ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ দেখানো হয়েছে, যাঁরা দোতলা-তিনতলা পাকা বাড়ির মালিক। তাঁদের বাড়ির কোনও ক্ষতিই হয়নি। ওই সব নাম অবশ্য তালিকা থেকে খারিজ করে দেয় টাস্ক ফোর্স।
পুলিশের তালিকায় এমন অসঙ্গতি জেলার অন্যান্য ব্লকেও রয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘পুলিশের তালিকা সরেজমিনে খতিয়ে দেখে কী ফল পাওয়া গেল সেই রিপোর্টও আলাদা করে রাজ্য সরকারকে জানানোর জন্য টাস্ক ফোর্সগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সৌম্য রায় অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘এখানে পুলিশ কোনও তালিকা করেনি। তালিকা করেছে টাস্ক ফোর্স। পুলিশ তদন্তে টাস্ক ফোর্সকে সাহায্য করেছে মাত্র।’’ কিন্তু বিভিন্ন থানার ওসি এবং জেলা পুলিশ কর্তাদের একাংশের পাল্টা দাবি, পুলিশ সুপারের নির্দেশেই তালিকা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আমপান দুর্নীতি: বিক্ষোভে ‘লাঠিচার্জ’, আক্রান্ত পুলিশ
তালিকায় ‘জল’ এল কী ভাবে?
জেলা পুলিশ কর্তাদের একাংশ মানছেন, দায়িত্ব চাপানো হলেও তা পালন করার মতো পরিকাঠামো পুলিশের হাতে ছিল না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সিভিক ভলান্টিয়ার বা গ্রামীণ পুলিশকে দিয়ে দায়সারা ভাবে সমীক্ষার কাজটি হয়। তাঁরা অনেকেই নিজেদের পরিচিতদের নাম তালিকায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের মতো পুলিশকেও বলা হয়েছিল, দ্রুত তালিকা করতে। ফলে, সব ক্ষতিগ্রস্তকে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।’’
আরও পড়ুন: তালিকা-‘স্বচ্ছতা’র দাবি রাজ্যের, বিরোধী সুর ভিন্নই
পুলিশের তালিকাতেও ভুয়ো নাম থাকায় বিরোধীরা মাঠে নেমেছেন। আমতার কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্রের প্রশ্ন, ‘‘তালিকা বানানো কি পুলিশের কাজ? আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করবে কে?’’ বিজেপির জেলা (গ্রামীণ) জেলা সভাপতি শিবশঙ্কর বেজের অভিযোগ, ‘‘এ রাজ্যে পুলিশ সব ক্ষেত্রেই শাসকদলের অঙ্গুলিহেলনে চলে। তালিকা করার সময়েও তারা একই কাজ করেছে।’’ একই মন্তব্য ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা ফরিদ মোল্লারও।
পক্ষান্তরে, জেলা (গ্রামীণ) ত্ণমূল সভাপতি পুলক রায়ের দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছিলেন একজন ক্ষতিগ্রস্তও যেন তালিকায় বাদ না যান। তাই পুলিশকেও তালিকা করতে বলা হয়। পুলিশ তার মতো করে তালিকা করেছে। টাস্ক ফোর্স সব তালিকা দেখে ক্ষতিগ্রস্তদের নাম চূড়ান্ত করেছে।’’