Cyclone Amphan

দোকানপাট বন্ধ রাখার পরামর্শ, রাজ্যে সরানো হল ৪ লক্ষাধিক মানুষকে

ঘূর্ণিঝড় এবং প্রবল বৃষ্টির বিপদ থেকে বাঁচতে বুধবার কলকাতায় দোকানপাট বন্ধ রাখার জন্য রাজ্য সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২০ ০৪:৩৪
Share:

ছবি: এএফপি।

ঘূর্ণিঝড় আমপানের দাপটে জানপ্রাণ বাঁচাতে আজ, বুধবার দুপুর থেকে কলকাতা-সহ উপকূলবর্তী জেলার বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে বেরোতে বারণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে নিজের বাড়িঘর মজবুত না-হলে প্রশাসনের নির্দেশ মেনে প্রত্যেককে দু’দিনের জন্য সরকারি শিবিরে আশ্রয় নিতেও অনুরোধ করেছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী জানান, বুধবার, ঝড়ের রাতে তিনি নিজে নবান্নে উপস্থিত থাকবেন।

Advertisement

‘‘কোভিডের কারণে সরকারি শিবিরে যতটা সম্ভব পারস্পরিক দূরত্বের বিধি বজায় রাখার এবং প্রত্যেককে মাস্ক দেওয়ার ব্যবস্থা করবে প্রশাসন। খাওয়ারও ব্যবস্থা হবে। ঝড় চলে গেলে বাসিন্দারা বাড়ি ফিরতে পারবেন,’’ বলেন মমতা।

মঙ্গলবার আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ঘূর্ণিঝড় এবং প্রবল বৃষ্টির বিপদ থেকে বাঁচতে বুধবার কলকাতায় দোকানপাট বন্ধ রাখার জন্য রাজ্য সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কলকাতা পুলিশ মাইকে প্রচার করছে, বাসিন্দারা যেন বাড়ি থেকে না-বেরোন। দোকান খুলতে বারণ করা হচ্ছে দোকানিদের।

Advertisement

কন্ট্রোল রুম

• বিপর্যয় মোকাবিলা ১০৭০
• রাজ্য পুলিশ ১০০
• কলকাতা পুলিশ ১০০, ২২১৪৩২৩০
• দমকল ১০১
• রাজ্য পুলিশ ০৩৩-২২১৪-৫৪১২, ০৩৩-২২১৪-৫৪১৩
• আমপানে কলকাতা পুলিশের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর ৯৪৩২৬২৪৩৬৫

মুখ্যমন্ত্রী জানান, আমপানের মোকাবিলায় সরকার সব দিক থেকে প্রস্তুত। আশ্রয় শিবির খোলা হয়েছে। পাঠানো হয়েছে জাতীয় ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। খাবার, পানীয় জলের ব্যবস্থা হয়েছে। ঝড়ের পরে পরিস্থিতি সামলাতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ, পূর্ত, দমকল বাহিনীকে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এ দিন মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘উনি ফোন করেছিলেন। জানতে চেয়েছিলেন, সব ব্যবস্থা হয়েছে কি না। জানিয়ে দিয়েছি, সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’

আরও পড়ুন: ওড়িশার ট্রেন বন্ধ, আসছে পশ্চিমের শ্রমিক স্পেশাল

আরও পড়ুন: কিছুটা ক্ষমতা হ্রাস, আমপান তবুও ‘মারাত্মক’, অভিমুখ সুন্দরবনের দিকে

মুখ্যমন্ত্রী জানান, এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত যা ইঙ্গিত, তাতে ঘূর্ণিঝড় প্রবল শক্তি নিয়ে ধেয়ে আসছে। এটি একটি গভীর ঝড়। অনেকে বলছে বুলবুল, আয়লার চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে। ঝড় তিনটি ধাপে ধাক্কা মারতে পারে উপকূলের গ্রামে। ঝড়ের ‘মাথা, চোখ এবং লেজ’ থাকবে। তিন দফায় ধাক্কা মারতে পারে। তাই এক বার ঝড় হয়ে গেলেই কেউ যাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে না-আসেন, সেই জন্য বাসিন্দাদের অনুরোধ জানান মমতা। তিনি বলেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড় ফণীর লেজের ধাক্কায় ওড়িশায় সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছিল। তাই এ বার আমাদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে।’’

মুখ্যমন্ত্রী জানান, ঘূর্ণিঝড়ের যা গতিপ্রকৃতি, বুধবার বেলা ২টো নাগাদ দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আছড়ে পড়তে পারে সে। তার পরে কয়েক ঘণ্টা তার দাপট চলবে। সারা রাত সতর্ক থাকতে হবে। বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে ঝড় বাংলাদেশে চলে যেতে পারে। ‘‘ঝড়ে জীবন বাঁচাতে হবে। চাষের জমি, পানের বরজ, বাড়িঘরের ক্ষতি হলে সরকার পাশে থাকবে। আগে জীবন বাঁচুক,’’ সম্ভাব্য উপদ্রুত এলাকার বাসিন্দাদের উদ্দেশে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর, ঘোড়ামারা দ্বীপ, গোসাবা, নামখানা, বাসন্তী, ক্যানিং, পাথরপ্রতিমা, পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগর, কাঁথি, খেজুরি, সুতাহাটা সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা এবং দুই মেদিনীপুর থেকে অন্তত চার লক্ষ মানুষকে আশ্রয় শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। কোনও প্রয়োজন হলে নবান্নের কন্ট্রোল রুমে (তিনটি নম্বর: ১০৭০, ২২১৪-৩৫২৬, ২২১৪-১৯৯৫) ফোন করে সরকারকে জানাতে অনুরোধ করেন তিনি।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নবান্নের খবর, পূর্বাভাস অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ হতে পারে ১৬৫ কিলোমিটার। তার জেরে জলোচ্ছ্বাস হতে পারে চার থেকে ছয় মিটার। সেচ দফতর জানায়, সুন্দরবনে সেচবাঁধের সর্বাধিক উচ্চতা ৫.৮ মিটার। ফলে জলোচ্ছ্বাস ছয় মিটার পর্যন্ত হলে সুন্দরবন ও পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে। যা প্রশাসনকে আরও বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে। ঝড় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ভিডিয়ো-বৈঠকে ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী, ফিরহাদ হাকিম-সহ বেশ কয়েক জন মন্ত্রী। জেলাশাসক-পুলিশ সুপারদেরও তৎপর থাকার কথা নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসককে বসিরহাটে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসককে কাকদ্বীপে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কলকাতার প্রশাসক ফিরহাদ জানান, তিনি সারা রাত কলকাতা পুরভবনে থাকবেন। শুভেন্দুবাবু জানান, তিনি দিঘায় থেকে পরিস্থিতির উপরে নজর রাখবেন। এ দিনই তিনি দিঘা সেচ বাংলোয় দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং বিপর্যয় মোকাবিলার বন্দোবস্ত ঘুরে দেখেন।

ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচাতে বিপজ্জনক এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরানোর জন্য কর্মীদের আহ্বান জানান বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে জানান, আয়লার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় সাহায্য করতে তিনি প্রস্তুত। বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ জানান, তাঁদের রাজ্য দফতরে কন্ট্রোল রুম এবং হেল্পলাইন খোলা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement