জলমগ্ন কলকাতা বিমানবন্দর। ছবি: এএফপি।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আমপান (প্রকৃত উচ্চারণ উম পুন)-এর ছোবলে বিধ্বস্ত গোটা কলকাতা-সহ রাজ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। লন্ডভন্ড কলকাতা বিমানবন্দরও। বুধবার বিকেল থেকে টানা কয়েক ঘণ্টার অতিবৃষ্টির জেরে জলের তলায় বিমানবন্দরের রানওয়ে এবং হ্যাঙার। প্রবল ঝড়ের দাপটে ভেঙে গিয়েছে টার্মিনালের বহু কাচ।
বৃহস্পতিবার সকালে দেখা যায়, আমপানের জেরে অতিবৃষ্টির ফলে জলে আধডোবা কলকাতা বিমানবন্দরের হ্যাঙারে থাকা বিমানগুলি। ক্ষতিগ্রস্ত বিমানবন্দরের একাংশের ছাদও। বিমানবন্দরের এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, দু’টি হ্যাঙারের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। তবে ওগুলি ব্যবহার করা হত না বলে জানিয়েছেন তিনি।
আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, আমপানের দাপটে গত কাল সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে কলকাতা বিমানবন্দর এলাকায় প্রতি ঘণ্টায় ১৩৩ কিলোমিটার গতিবেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে টানা কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে প্রবল বৃষ্টি। তার জেরেই বিমানবন্দরে জল জমে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় হ্যাঙারও। সেখানে থাকা সব বিমানের অনেকাংশই জলের তলায় ডুবে যায়। দু’টি হ্যাঙারে এতটাই ক্ষতি হয়েছ যে তা আর মেরামত করা যাবে না বলে বিমানবন্দর সূত্রে খবর।
আমপানের জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে গত কাল থেকে আজ, বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা পর্যন্ত কলকাতা বিমানবন্দর থেকে সমস্ত উড়ান বন্ধ রাখা হয়েছিল। এ দিন সকাল হতেই দেখা যায়, বিমানবন্দরের রানওয়েতে জল থইথই করছে। ফলে রানওয়ে এবং হ্যাঙারের জমা জল না সরলে আপাতত ব্যাহত হবে বিমান পরিষেবা। তবে আমপানের জেরে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা পরিমাপ করা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষে এখনও সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন: গাছে-তারে এখনও অবরুদ্ধ শহর, পর পর মৃত্যুর খবর আসছে জেলা থেকে
আরও পড়ুন: আমপানের তাণ্ডবে কোন জায়গার কী হাল, দেখে নিন ছবিতে
কলকাতা বিমানবন্দরের বিমান পরিষেবা আপাতত ব্যাহত হলেও আগামী সোমবার, ২৫ মে থেকে শুরু হচ্ছে দেশীয় উড়ান পরিষেবা। সে জন্য আগে থেকে কলকাতা-সহ দেশের সমস্ত বিমানবন্দরকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। গতকাল কেন্দ্রীয় বিমানমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী টুইট করে এ কথা জানিয়েছেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৪ মার্চ রাত ১২টার পর দেশ জুড়ে যাত্রিবাহী বিমান পরিষেবার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। তবে দেশের মধ্যে এবং কিছু আন্তর্জাতিক রুটে পণ্যবাহী বিমান চালু ছিল।
আরও পড়ুন: ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে আছি: কেন্দ্রের সহযোগিতা চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় নিম্নচাপ হয়ে বাংলাদেশে, আজ বৃষ্টিতে ভাসবে উত্তরবঙ্গ
আগামী সোমবার থেকে দেশীয় উড়ান পরিষেবা চালুর আগে এ দিন সকালে সেই সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক। তাতে বলা হয়েছে, উড়ানের নির্ধারিত সময়ের দু’ঘণ্টা আগে যাত্রীকে বিমানবন্দরে পৌঁছতে হবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে প্রতি যাত্রীকেই বাধ্যতামূলক ভাবে মাস্ক পরতে হবে। কেবলমাত্র অনলাইনে চেক-ইন করতে পারবেন যাত্রীরা। তবে সোমবার থেকে বিমান পরিষেবা চালু হলেও কনটেনমেন্ট জোনের কোনও যাত্রীকেই বিমানবন্দরে ঢুকতে দেওয়া হবে না। প্রত্যেক যাত্রীরই থার্মাল স্ক্রিনিং করা হবে। উড়ানে প্রতি যাত্রীর আসনে জলের ব্যবস্থা থাকলেও কোনও যাত্রীকেই খাবার পরিবেশন করা হবে না। এমনকি, যাত্রীরা বাইরে থেকে খাবার নিয়েও বিমানে উঠতে পারবেন না বলে ওই নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে। বিমানবন্দরের ভিতরে এবং উড়ানে সব যাত্রীকেই শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার কথাও বলা হয়েছে।