আমপানের তাণ্ডবে তছনছ হয়ে গিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার গ্রামের পর গ্রাম। ছবি: পিটিআই।
আমপান ঘূর্ণিঝড়কে কী নামে ডাকা হবে? কোন পর্যায়ে তাকে ফেললে রাজনীতির ক্ষীরটুকু খেয়ে যেতে পারবে না কেন্দ্রের শাসক দল? হিসেবনিকেশ করে এই নিয়ে প্রথম বার মুখ খুলল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।
তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন আজ এক ভিডিয়ো বার্তায় বলেছেন, আমপানকে ‘লেভেল থ্রি’ শ্রেণির অর্থাৎ ‘অত্যন্ত বিরল’ বা ‘অভূতপূর্ব’ প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘোষণা করা হোক। ডেরেকের বক্তব্য, ২০০৫-এর জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে বলা জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা নীতি ও তার পরিকল্পনার কাঠামো— উভয় দিক থেকেই আমপান ‘লেভেল থ্রি’-র বিপর্যয়। কোনও রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ বিপর্যস্ত হলে তাকে এই পর্যায়ে পর্যায়ে ফেলা যায়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হিসেব, রাজ্যের ৭০ শতাংশ ভূখণ্ডই তছনছ হয়েছে আমপানে। তাই এই ঘূর্ণিঝড় লেভেল থ্রি বা এল-থ্রি পর্যায়ে পড়বে বলে দাবি তৃণমূলের।
নিয়ম অনুযায়ী ‘লেভেল থ্রি’-র বিপর্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের জন্য ত্রাণ তহবিল গড়তে কেন্দ্র বাধ্য। ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করে কত টাকার তহবিল প্রয়োজন, সেটা কেন্দ্রকে বুঝিয়ে মেমোরান্ডাম পেশ করা ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যের দায়িত্ব। সেই তহবিলের বড় অংশ দেওয়াটা কেন্দ্রের দায়িত্ব। তৃণমূল সূত্রের দাবি, এটা হলে কেন্দ্রের কাছে বকেয়া টাকা পাওয়ার ব্যাপারেও চাপ তৈরি করতে পারবে রাজ্য। ডেরেক বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে ক্ষতির পরিমাণ প্রাথমিক হিসেবেই এক লক্ষ কোটি টাকার কাছাকাছি। এ দিকে রাজ্যের ৫৩ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে কেন্দ্রের কাছে। এই দুঃসময়ে তার বদলে ১ হাজার কোটি টাকা দেখিয়ে রাজনৈতিক লাভ কুড়োতে চাইছে বিজেপি।” রাজনীতিকদের মতে, বিরল দুর্যোগের ত্রাণ তহবিল গড়া হলেও তা নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ থাকবে বিজেপির। কিন্তু সে ক্ষেত্রে বিষয়টি আইনানুগ প্রক্রিয়ায় হবে।
আরও পড়ুন: আলো-জলের দেখা নেই, বিভীষিকার দিন রিজেন্ট এস্টেটে
কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রের খবর, কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগকে ‘জাতীয় বিপর্যয়’ তকমা দেওয়ার কোনও আইন বা বিধি নেই। তবে সাম্প্রতিক অতীতে উত্তরাখণ্ডের হড়পা বান বা অন্ধ্রের হুদহুদ-কে বিরল দুর্যোগ আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। এমন ক্ষেত্রে একটি ত্রাণ তহবিল তৈরি করা হয়। সাধারণত যার ৭৫% অর্থই দেয় কেন্দ্র। রাজ্য বাকিটা। তহবিলে টান পড়লে বাকি অর্থ কেন্দ্রই জোগায়। বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের দাবি, কেন্দ্র যে টাকা দেবে, তা যেন ক্ষতিগ্রস্তের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি যায়। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তারা বলছেন, এমন কোনও নিয়মই নেই। জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা তহবিল থেকে টাকা গেলে তা রাজ্যের কাছেই যাবে। পশ্চিমবঙ্গকে ২০১৯-এর বন্যার জন্য ১০৯০.৬৮ কোটি টাকা অর্থসাহায্য দেওয়া হয়েছে বলে কেন্দ্রের দাবি। তবে তা মঞ্জুর হয়েছে এ বছর মার্চে।