Cyclone Amphan

দিঘার সৈকত জুড়ে ধ্বংসস্তূপ

সময় যত গড়িয়েছে, ততই তাণ্ডব বেড়েছে আমপানের।

Advertisement

কেশব মান্না

দিঘা শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২০ ০৩:৩২
Share:

দিঘার সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস। নিজস্ব চিত্র, সুদীপ্ত ভৌমিক

বুধবার সকাল থেকেই ঢেউ যেন ফুঁসছে৷ সাতসকালেই গার্ডওয়াল টপকে সমুদ্রের জল ঢুকে পড়ল সৈকত শহরে। শঙ্করপুরে বোল্ডারের বাঁধ ভেঙে ভাসল বসতি এলাকা। আর বিপর্যয়ের মাহেন্দ্রক্ষণ এল বেলা আড়াইটেয় |

Advertisement

বাকি সাংবাদিক বন্ধুদের সঙ্গে আমি তখন দিঘার সৈকতাবাসের কাছে৷ আচমকাই হাওয়ার দমক বাড়ল । পাগলপারা সেই হাওয়ায় নারকেল গাছ, তালগাছগুলো যেন মাটিতে নুইয়ে পড়ছে। হাওয়ার ঘূর্ণিপাকে বৃষ্টিও তখন এলোপাথাড়ি। চোখের সামনে দেখলাম সাজানো ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ উপড়ে গেল, ছিন্নভিন্ন হয়ে উড়ে এসে পড়ল বিজ্ঞাপনী ফ্লেক্স। আর ক্রমাগত কানে আসছে সমুদ্রের গর্জন। বুঝতে পারছি দিঘার এই সমুদ্র অচেনা, বিধ্বংসী। ভাগ্যিস ধারে-কাছে মানুষজন নেই!

মঙ্গলবার রাত থেকেই দিঘার সেচ ভবনে থেকে গোটা পরিস্থিতি তদারক করছেন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা

Advertisement

পাথরপ্রতিমায় ভেঙে পড়েছে টাওয়ার। নিজস্ব চিত্র, সুদীপ্ত ভৌমিক

বাহিনীর সদস্যরা দিনভর চেষ্টা করে গিয়েছেন, যাতে এক জনও সমুদ্রের কাছে না যান। প্রাণহানির খবর

নেই। তবে ঝড় আছড়ে পড়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই বাড়ি ভাঙা,

গাছ উপড়ানোর মতো একের পর এক খবর আসতে শুরু করল। আর তো বসে থাকা যায় না। দুর্যোগ

মাথায় করেই বেরিয়ে পড়লাম একটা গাড়ি নিয়ে, ঘড়িতে তখন বিকেল সাড়ে তিনটে।

কিন্তু যাব কোন দিকে! দিঘা হাসপাতাল পর্যন্ত যেতেই দেখলাম রাস্তা জুড়ে পড়ে রয়েছে একের পর এক উপড়ানো গাছ। দিঘা স্টেশনের সামনেও এক দৃশ্য। ফলে ওড়িশা সীমানার দিকে আর এগনোর জো

নেই। নন্দকুমার-দিঘা ১১৬ বি

জাতীয় সড়কেও জায়গায় জায়গায় একাধিক গাছ পড়ে পথ রুদ্ধ হয়ে গিয়েছে| আটকে পড়েছে জরুরি পরিষেবার গাড়ি। আর বিপদের আশঙ্কায় সকাল ১১টা থেকেই বিদ্যুৎহীন দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুর-সহ পুরো সৈকত|

সময় যত গড়িয়েছে, ততই তাণ্ডব বেড়েছে আমপানের। প্রবল বেগে ওলট-পালট হাওয়া আর বৃষ্টির দাপটে বিকেলের মধ্যেই দিঘা তছনছ। ওল্ড দিঘার একাধিক জায়গায় গার্ডওয়াল টপকে সমুদ্রের জল ঢুকে ভাসিয়ে দিয়েছে সৈকত শহরকে। প্রশাসনের তরফে লাগানো সতর্কীকরণ সাইনবোর্ডও তলিয়ে গিয়েছে সমুদ্রগর্ভে। আমরা কোনওমতে শঙ্করপুরের দিকে এগনোর চেষ্টা করেছিলাম, পারিনি| গাছ আর বিদ্যুতের তার পড়ে

গোটা রাস্তাই বন্ধ। শেষমেশ রামনগর ২ ব্লকের সতিলাপুরে একটা স্কুল বাড়ির দেয়ালের পাশে আশ্রয় নিয়েছি। চারপাশে উপড়ানো গাছ, ভাঙা বিদ্যুতের খুঁটি, উড়ে আসা টিনের চাল।

রাত সাড়ে সাতটা পর্যন্ত সেই ধ্বংসস্তূপের মাঝে গাড়ির ভিতরেই আটকে ছিলাম৷ তার পর ঘুরপথে বেরনোর চেষ্টা করছি। এখনও হাওয়া বইছে সোঁ সোঁ। বৃষ্টির দমকও বাড়ছে। প্রলয়ঙ্কর দুর্যোগের মধ্যে আতঙ্কের প্রহর আরও দীর্ঘ ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement