ফাইল চিত্র।
আমপানের ত্রাণ বিলি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ আসতে পুলিশকে সক্রিয় করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশকে ক্ষতিপূরণের যোগ্য ‘প্রকৃত’ ব্যক্তিদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রের দাবি, আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ত্রাণের টাকা পাননি বলে অভিযোগ করে প্রায় ৪০ হাজার আবেদন পুলিশের কাছে জমা পড়েছে। সেই তালিকা বিডিও-রা মিলিয়ে দেখেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, অন্তত ৩৪ হাজার অভিযোগের সত্যতা রয়েছে। ঠিক হয়েছে, জেলা থেকে এই সব প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের নাম ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর এসে পৌঁছলে ২০ হাজার টাকা করে সরাসরি তাঁদের অ্যাকাউন্টে জমা করে দেবে নবান্ন।
প্রকৃত উপভোক্তাদের আবেদন গ্রহণ অবশ্য এখনই বন্ধ হচ্ছে না। পুলিশ বা বিডিও অফিসে আবেদন জমা নেওয়া চলবে বলে জানাচ্ছেন নবান্নের কর্তারা। নবান্ন জানিয়েছে, ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করলেই তা যাচাই করা হবে। সবাইকে অন্তত আংশিক বাড়ি ভাঙার ক্ষতিপূরণ বাবদ পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবারই সরকার এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশ জারি করেছে।
অন্য দিকে, বিভিন্ন জেলায় যে সব পঞ্চায়েত প্রতিনিধি বা তাঁদের আত্মীয়দের অ্যাকাউন্টে ত্রাণের টাকা জমা পড়েছে, তাঁদের তা ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছে শাসক দল। জানা গিয়েছে, নদিয়ার জেলাশাসক বিভু গয়াল ১০০ জন পঞ্চায়েত প্রতিনিধির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ করে দিয়েছেন। যত ক্ষণ না তাঁরা ২০ হাজার টাকা ফেরাচ্ছেন, তাঁদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। অন্য জেলাগুলিও সেই পথই নিতে পারে বলে জানা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: ক্ষতিপূরণের আর্জি দিতে এসে পদপিষ্ট, হাসপাতালে দুই
তবে যে ১৬টি জেলায় আমপানের ক্ষতিপূরণ বিলি হয়েছে, তার মধ্যে সব চেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে পূর্ব মেদিনীপুর থেকে। নবান্নের খবর, শুধু পূর্ব মেদিনীপুর থেকেই সাত হাজারের বেশি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য মানুষ আবেদন করেছেন। হাওড়া থেকে ৬০০০, দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে ৪৫০০ এবং উত্তর ২৪ পরগনা থেকে ২৫০০ অভিযোগ জমা পড়েছে। অধিকাংশ জেলা উপভোক্তাদের তালিকা ব্লক অফিসগুলিতে টাঙিয়ে দিলেও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এখনও পঞ্চায়েত ধরে ধরে তালিকা টাঙানো হয়নি বলে নবান্ন জেনেছে।
রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের তরফে অবশ্য আমপানের ত্রাণ বিলি নিয়ে নবান্নে বিশেষ রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সরকারকে জানিয়েছে, ক্ষতিপূরণের টাকা চেয়ে প্রতিদিনই ব্লক অফিসে ভিড় বাড়ছে। বেশ কিছু পঞ্চায়েত সদস্যের নামে ত্রাণের টাকা ‘আত্মসাতের’ অভিযোগ ওঠায় তৃণমূল স্তরে শাসক দলের নেতাদের দেখা যাচ্ছে না। ফলে বিজেপির স্থানীয় নেতারাই গ্রামের মানুষকে সংগঠিত করে ব্লক অফিসে আবেদন জমা দিচ্ছেন। রাজ্যের গোয়েন্দারা সরকারকে জানিয়েছেন, ত্রাণের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠায় বহু জায়গায় শাসক দলের গ্রামপ্রধান বা পঞ্চায়েত সদস্যদের দেখলেই মানুষের একাংশ ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন।
আরও পড়ুন: মিলিজুলি পঞ্চায়েতে ক্ষতিপূরণের টাকা বহু সদস্যের নামেই
নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘প্রায় ১০ লক্ষ মানুষকে ত্রাণের টাকা দেওয়া হয়েছে। সেই তুলনায় যে সংখ্যক অভিযোগ এসেছে, তা নগণ্য। তবুও পুলিশ ও বিডিও-রা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছেন। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তেরা কেউ বঞ্চিত হবেন না।’’