আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল ও বিজেপির ‘বিকল্প’ হিসেবে নিজেদের বার্তা দিতে রাজ্যে প্রথম বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠার বর্যপূর্তির দিনটিকে কাজে লাগাল সিপিএম। শারীরিক কারণ এবং রাজনৈতিক অবসরের নীতি মেনে সেই কর্মসূচি থেকে দূরে থাকলেন বাম সরকারের দুই মুখ্যমন্ত্রীর অন্যতম বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তবে তাঁর দল বুঝিয়ে দিল, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শিল্পায়নের লাইনকে জরুরি বলেই তারা মনে করে।
রাজভবনে ৪৩ বছর আগে ২১ জুন প্রথম বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন জ্যোতি বসু। আগামী বছরের বিধানসভা ভোটের আগে এটাই শেষ ২১ জুন ধরে নিয়েই দিনভর সামাজিক মাধ্যমে ‘বেঙ্গল নিডস লেফ্ট’ শীর্ষক প্রচারে সক্রিয় ছিল গোটা সিপিএম। ভূমিসংস্কার, পঞ্চায়েত ব্যবস্থা, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি-সহ নানা কাজ এবং বিশেষত ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষায় বামফ্রন্ট সরকারের ‘রেকর্ডে’র কথা তুলে ধরেছেন দলের সর্বভারতীয় ও রাজ্য নেতারা। দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বাংলার মানুষ ও নিহত দলীয় কর্মী-সমর্থকদের প্রতি। জ্যোতিবাবুর প্রথম মন্ত্রিসভার সদস্য ও মুখ্যমন্ত্রী পদে তাঁর উত্তরসূরি বুদ্ধবাবুর কাছ থেকে এমন দিনে বার্তা পাওয়ার চেষ্টাও হয়েছিল দলের তরফে। মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে বিদায় নেওয়ার পরে দলের সিদ্ধান্ত মেনেই ৩৪ বছরের বাম সরকারের উপরে ‘ফিরে দেখা’ নামে দুই পর্বে বই লিখেছিলেন বুদ্ধবাবু। কিন্তু এখন তিনি স্বেচ্ছায় আর রাজনৈতিক কর্মসূচি ফিরে দেখতে চান না।
এমতাবস্থায় সিপিএম রবিবার সন্ধ্যায় তাদের ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠানে ব্যবহার করেছে টিভি চ্যানেলে দেওয়া বুদ্ধবাবুর পুরনো সাক্ষাৎকারের ঝলক। যেখানে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ব্যাখ্যা করেছিলেন শিল্পায়নের প্রয়োজনীয়তা। তার রেশ টেনেই দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, ‘‘শিল্পায়নের পথে না গেলে কৃষিতে বৃদ্ধির হার ধরে রাখা যেত না। সে সময়ে কৃষির সঙ্গে শিল্পের বিরোধ দেখানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু যাঁরা তা করেছিলেন, তাঁদের অনেকেও এখন বুঝছেন শিল্পায়ন জরুরি ছিল।’’
সূর্যবাবু এবং দলের বর্ষীয়ান নেতা শ্যামল চক্রবর্তী এ দিন লাইভ অনুষ্ঠানে বামফ্রন্ট সরকারের কাজের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেছেন। দলের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ী প্রশ্ন তোলেন, পুরনো চেহারায় বামফ্রন্টের কি ফিরে আসা সম্ভব? সূর্যবাবু বলেন, ‘‘কোনও কিছুই আর অবিকল আগের চেহারায় ফেরে না!’’ দুর্যোগের সময়ে বামপন্থী ভাবনার কার্যকারিতা ও বামেদের কাজ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে বলে সূর্যবাবুর দাবি।