বিকাশের আক্রমণের জবাব দিলেন দেবাশিস কুমার। ফাইল চিত্র
‘চাকরি বিক্রি’ করা যাবে, কিন্তু ‘বই বিক্রি’ নিষিদ্ধ এই রাজ্যে! এই শিরোনাম দিয়ে একটি লেখা সমাজমাধ্যমে পোস্ট করলেন সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। এই পোস্টের নিশানা যে শাসকদল তৃণমূল, তা বুঝতে কারও অসুবিধা হয়নি। এমন অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে সিপিএম নেতাদের ‘মানসিক চিকিৎসা’র প্রয়োজন বলে আক্রমণ করেছেন তৃণমূল নেতা দেবাশিস কুমার। রাসবিহারীর প্রতাপাদিত্য রোডে সিপিএমের বিপণিতে সপ্তমীর রাতে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগের তির ছিল ‘তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী’দের দিকে। অভিযোগ, ওই বইয়ের বিপণিতে ‘চোর ধরো, জেল ভরো’র পোস্টার দেখেই শাসকদলের আপত্তির সূত্রপাত। কলকাতায় বইয়ের বিপণি ভাঙচুরের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে অষ্টমীর সন্ধ্যায় গ্রেফতার হলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন, পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় এবং সিপিএম নেতারা। পুলিশ জানিয়েছিল, বইয়ের বিপণি ও প্রতিবাদ সভা ঘিরে গন্ডগোল এড়াতেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এ বিষয়ে শাসকদল তৃণমূল প্রশ্ন তুলেছিল, পুজো কমিটির সুবিধা-অসুবিধা না দেখে বইয়ের স্টল খুলে বসতে হবে কেন?
পুলিশ প্রশাসনের অবস্থান ও শাসকদলের এ হেন প্রশ্নকে হাতিয়ার করেই সমাজমাধ্যমে সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ একটি পোস্ট করেছেন। সেই পোস্টের ছত্রে ছত্রে আক্রমণ শানিয়েছেন বিকাশ। তিনি লিখেছেন, ‘‘মমতার রাজ্যে বই বিক্রি করার অপরাধে বামপন্থী কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়। পুজোর নামে সমাজবিরোধীদের জমায়েতকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়। আমার বক্তৃতার পরই ওই একদল তৃণমূলই অশ্রাব্য গালিগালাজ করে আমার উদ্দেশ্যে। ওই সব গালিগালাজ সাধারণত ভদ্রলোকেরা করে না। গুন্ডামি করে অটোতে লাগানো মাইক ভাঙ্গার চেষ্টা করে। আমরাও প্রতিবাদে রুখে দাঁড়াই।’’ বিকাশ আরও লিখেছেন, ‘‘এই সময় আইপিএস আশিসের নেতৃত্বে পুলিশ বই স্টল বন্ধের হুমকি দেয়। আমার তোপের মুখে পিছু হঠতে বাধ্য হয়ে গ্রেফতারের হুমকি দিয়ে ধাক্কাধাক্কি করে প্রিজন ভ্যানে তোলার চেষ্টা করে। আমি গ্রেপ্তারের মেমো দাবি করলে থমকে গিয়ে বলে, প্রিভেন্টিভ গ্রেফতার। লিখিত কারণ দিতে বলি ও পুলিশের গাড়িতে উঠতে অস্বীকার করি। একটু ভয় পেয়ে গিয়ে আমাকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু ইতিমধ্যেই কমলেশ্বর-সহ কয়েকজনকে ভ্যানে তুলে নেয়। বইয়ের স্টল চলবে, এই প্রতিশ্রুতি পুলিশের তরফ থেকে দেবার পরই আমি ওই স্থান পরিত্যাগ করি। আমি থাকলেই নাকি তৃণমূলিরা ক্ষিপ্ত হচ্ছে।’’
বিকাশের এমন পোস্টে বেজায় চটেছে তৃণমূল। দক্ষিণ কলকাতা এলাকার রাসবিহারী বিধানসভা এলাকায় এই গোলমালের ঘটনাটি ঘটেছে। সেই এলাকার বিধায়ক দেবাশিস আবার দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূলের সভাপতিও বটে। জবাবে জেলা তিনি বলেন, ‘‘প্রথমত বিকাশবাবুরা দুর্গাপুজোয় বিশ্বাস করেন না। তাই যাঁরা পুজো করেন, তাঁরা পুজো উদ্যোক্তা না সমাজবিরোধী এই তফাতটুকুও বোঝেন না। তাই ওঁদের কোনও অভিযোগের জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করি না।’’ এর পর দেবাশিসের আরও সংযোজন, ‘‘ওঁরা যে ঘটনা ঘটিয়েছেন, তা পুজোর সময় কোনও সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ ঘটাতে পারেন না। এটা ওঁদের বিকৃত মানসিকতার পরিচয়, তাই আমার মনে হয় বিকাশবাবুদের মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন।’’