শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মধ্যে দিয়েই রাজনৈতিক উত্থান হয়েছিল এক সময় তৃণমূলে থাকা শুভেন্দু অধিকারীর। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে সেই পুরনো দলকে পরাস্ত করতে সিপিএম নেতাদেরও বিজেপির হয়ে লড়ানোর কথা বললেন বিরোধী দলনেতা! শনিবার খেজুরির সভা থেকে শুভেন্দু দাবি করেন, ‘‘লোকসভা ভোটে (পূর্ব মেদিনীপুরের) কাঁথি ও তমলুক আসন জিততে সিপিএম নেতাদেরও মাঠে নামাব।’’
সিপিএম ও বিজেপির মধ্যে ‘গোপন আঁতাঁতের’ অভিযোগ তুলে প্রায়ই সরব হতে দেখা যায় শাসক তৃণমূলকে। সেই দাবি বরাবরই খণ্ডন করে এসেছে সিপিএম। বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য একে ‘মানুষের জোট’ বলেই ব্যাখ্যা করেছেন অতীতে। শুভেন্দুর এই মন্তব্যের পরে ফের ‘আঁতাঁত-তত্ত্ব’ তুলে ধরতে শুরু করেছে তৃণমূল। পাল্টা সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা নেতৃত্বের দাবি, নিছক বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। খেজুরিতেই পাল্টা সভা করে বিরোধী দলনেতার মন্তব্যের জবাব দেওয়া হবে বলে জানালেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিপিএমের সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি।
খেজুরিতে শুভেন্দুর সভা নিয়ে একপ্রস্ত টানাপড়েন হয়েছে। পুলিশ অনুমতি না দেওয়ার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা। পরে কলকাতা হাই কোর্ট সভার অনুমতি দেয়। সেই সভা থেকে শুভেন্দু দাবি করেন, খেজুরিতে সিপিএমের অনেক প্রবীণ নেতা এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে বাড়িতে বসে। এক সময় তাঁরা জমিদার, জোতদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করতেন। তাঁদের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। সেই সব সিপিএম নেতাকে লোকসভা ভোটে বিজেপির হয়ে মাঠে নামানোর কথা বলেন শুভেন্দু। সিপিএম নেতাদের উদ্দেশে বিরোধী দলনেতার বার্তা, ‘‘আপনারা মাঠে নামুন। আমি আপনাদের একেবারে চৌকিদারের মতো পাহারা দেব। আপনাদের মাথা থেকে রক্ত পড়লে, আমি আপনাদের রক্ত মুছিয়ে দেব। অত্যাচার হলে, রাতেও পাবেন আমাকে।’’
তবে শর্তও বেঁধে দিয়েছেন শুভেন্দু। তাঁর বক্তব্য, লোকসভায় বিজেপিকে অন্তত ৫০ হাজার ভোটে জেতাতে হবে। বিরোধী দলনেতার কথায়, ‘‘আমি একটাই জিনিস চাই। আপনারা শান্তনু প্রামাণিককে যে ভাবে বিধানসভায় ১৯ হাজার ভোটে জিতিয়েছেন, বিজেপিকেও এই লোকসভায় ৫০ হাজার ভোটের লিড পাইয়ে দেবেন।’’ শুভেন্দু মনে করিয়ে দেন, ‘‘২০১০ সালে ২৪ নভেম্বর যখন হিমাংশু দাসের নেতৃত্বে সিপিএম খেজুরি দখল করেছিল, সে দিন আমি শুভেন্দু অধিকারী ওই বন্দুকের সামনে একা দাঁড়িয়েছিলাম কামারদাতে। সে দিন দুপুর ১২টা ২০ নাগাদ আমাকে দেখে ঠকঠক করে কাঁপছিল সিপিএম। এখন যেমন কাঁপে মমতা (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)। সে দিন ওই সিপিএম হার্মাদদের আমি শুনিয়াতে ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম। এ বার আপনারা আমার সঙ্গে আসুন, আমি সব রকম ভাবে আপনাদের পাশে থাকব।’’
পাল্টা সিপিএমের বক্তব্য, দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বিভ্রান্ত করতেই এই ধরনের কথা বলছেন শুভেন্দু। বিজেপির সঙ্গে সিপিএম কোনও রকম আপস করতে রাজি নয় বলেই ঘোষণা করেছেন নিরঞ্জন। তিনি বলেন, ‘‘উনি সিপিএমের নেতা-কর্মীদের বিভ্রান্ত করতেই এ ভাবে হাওয়ায় কথা ছড়াচ্ছেন। ওঁর সৎ সাহস থাকলে সেই সমস্ত সিপিএম নেতার নাম প্রকাশ্যে ঘোষণা করতেন, যারা তাঁর সঙ্গে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির পতাকা ধরতে যাবেন। কিন্তু তা না করে শুধুই কিছু ভুয়ো কথা হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়েছেন।’’ নিরঞ্জনের সংযোজন, ‘‘আমরা গোটা ঘটনাটা নজরে রেখেছি। প্রয়োজন হলে আমরা খেজুরিতে পাল্টা সভা করে সিপিএম নেতা-কর্মীদের বার্তা দেব, বিজেপির সঙ্গে আমরা কোনও আপসে যেতে রাজি নই। এর আগেও কিছু সমবায়ে এমন অবৈধ জোট করে লড়াইয়ের চেষ্টা হয়েছিল। এতে আসলে বামপন্থীদের শূন্য করে বিজেপির উত্থানের রাস্তা পাকা করার ছক ছিল। আমরা শক্ত হাতে সেই ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছি।”
এ নিয়ে দু’দলকেই কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা তো প্রথম থেকেই বসে আসছি, বামের ভোট রামে গিয়েছে। তাই তো বিজেপির এত বাড়বাড়ন্ত। সিপিএম নেতারাই তো মাঠে নেমে বিজেপিতে বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছে। এখন সিপিএম নেতারাই এর জবাব দিন।’’