গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
পুরনো সাংগঠনিক কাঠামোয় ফিরতে চলেছে বঙ্গ সিপিএম। ফের দলে জ়োনাল কমিটির কাঠামো ফেরানোর রাস্তা খুলছে আলিমুদ্দিন। তবে এখনই তা বাস্তবায়িত হবে না। দলের সম্মেলন সংক্রান্ত নির্দেশিকা সম্বলিত দলিলে (পার্টি চিঠি) সিপিএম বলেছে, আগামী বছর পার্টি কংগ্রেসের পরে চার মাসের মধ্যে এ ব্যাপারে যা হওয়ার হবে। তবে জ়োনাল কমিটি হবে কি না, হলে কী ভাবে হবে, এ ব্যাপারে জেলা কমি়টিগুলিই মূলত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। উল্লেখ্য, আগামী বছর এপ্রিলের গোড়ায় তামিলনাড়ুর মাদুরাই শহরে সিপিএমের ২৪তম পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে।
দলীয় নথিতে সিপিএম লিখেছে, ‘‘পার্টি কংগ্রেসের পর চার মাসের মধ্যে প্রয়োজন মতো জেলাগুলি জ়োনাল কমিটি গঠন করবে। এই সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা পার্টি কংগ্রেসের অব্যবহিত পর আগামী রাজ্য কমিটি গ্রহণ করবে।’’ সিপিএমের এক প্রথম সারির নেতা বলেছেন, ‘‘কোন কোন জেলায় জ়োনাল কমিটির স্তর প্রয়োজন, তা জেলাগুলিই ঠিক করবে। এ ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত জেলা সম্মেলনেই নিতে বলা হয়েছে।’’
তবে বিভিন্ন জেলায় এ নিয়ে নানা মত রয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব বর্ধমানের মতো একাধিক জেলায় জ়োনাল স্তর ফেরানো হবে কি না, এ বিষয়ে বিভিন্ন নেতার ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। নিচুতলার একটা অংশ চায় জ়োনাল স্তর ফিরুক। আবার চলতি কাঠামোর পক্ষেও রয়েছেন অনেকে। দলের যে অংশ চায় জ়োনাল স্তর ফিরুক, তাদের যুক্তি, এর ফলে অনেক বেশি নেতৃত্ব তৈরি হবেন। যাঁরা চান না, তাঁদের যুক্তি, জ়োনাল স্তর ফিরিয়ে আনার অর্থ— দলে আমলাতন্ত্র বাড়বে। এই পরিস্থিতিতে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট পুরোটাই জেলা কমিটির উপর ছেড়ে দিয়েছে। তবে দলের আশঙ্কা, এ নিয়ে জেলা সম্মেলনে বিতর্ক বাড়বে বই কমবে না।
২০১৭ সালের আগে বঙ্গ সিপিএমে শাখা ও জেলা কমিটির মাঝে দু’টি কমিটি ছিল। লোকাল কমিটি (এলসি) এবং একাধিক লোকাল কমিটি নিয়ে জ়োনাল কমিটি (জ়েড সি)। ২০১৫ সালে কলকাতায় সিপিএমের প্লেনাম (সংগঠন সংক্রান্ত বিষয়ে সম্মেলন) অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৭৮ সালের পর সেটাই ছিল সিপিএমের প্রথম প্লেনাম। সেই প্লেনামের পরেই রাজ্যে লোকাল এবং জ়োনাল কমিটির অবলুপ্তি ঘটায় সিপিএম। শাখা ও জেলা কমিটির মধ্যবর্তী স্তরে একটিই কমিটি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্রেরা। সেই সময়ে দলের মনোভাব ছিল, একাধিক কমিটি থাকায় কাজের কাজ হচ্ছে না। দলের মধ্যে ‘আমলাতন্ত্র’ বাড়ছে। বর্তমানে সিপিএমে শাখা ও জেলা কমিটির মাঝে একটি কমিটিই রয়েছে— এরিয়া কমিটি। আলিমুদ্দিন জ়োনাল ফেরানোর রাস্তা খুলে দেওয়ার পর কোন কোন জেলায় সেই পুরনো কাঠামো ফেরে, সেটাই দেখার।
তবে এরিয়া কমিটি স্তরে তারুণ্য বৃদ্ধি করতে বয়সবিধিকে আরও দৃঢ় করতে চেয়েছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। দলের নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে, এরিয়া কমিটির সদস্যদের গড় বয়স বর্তমানের তুলনায় চার বছর হ্রাস করতে হবে। অর্থাৎ, যদি দেখা যায় কোনও এরিয়া কমিটির সদস্যদের গড় বয়স ৫০ বছর, তা হলে সম্মেলন থেকে যে নতুন এরিয়া কমিটি নির্বাচিত হবে, তার সদস্যদের গড় বয়স হতে হবে ৪৬ বছর। এরিয়া কমিটির সদস্যদের ২০ শতাংশের বয়স হতে হবে ৪০ বছরের নীচে। ৩০ শতাংশের বয়স হতে হবে ৫০ বছরের নীচে। ফলে দলের মধ্যে জাঁকিয়ে বসা বৃদ্ধতন্ত্র হটাতে এটি ফের একটি পদক্ষেপ বলেই দেখাতে চাইছেন সিপিএম নেতাদের অনেকে। তবে সব জায়গায় নেতৃত্ব স্তরে এত তরুণকে তুলে আনা যাবে কি না, তা নিয়েও ঘরোয়া আলোচনায় সংশয় প্রকাশ করছেন অনেকে।