Birupaksha Biswas

‘রোজ ১০০ কাপ চা, দামি দামি সিগারেট’, ক্যান্টিনে ২৩,৮০০ টাকা বাকি রেখে বর্ধমান ছাড়লেন বিরূপাক্ষ!

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ থেকে চিকিৎসক বিরূপাক্ষ বিশ্বাসকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে। তাঁর বিরুদ্ধে নানা বিতর্কের মাঝে এল ক্যান্টিন-কাহিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫১
Share:

(বাঁ দিকে) চিকিৎসক বিরূপাক্ষ বিশ্বাস। (ডান দিকে) ক্যান্টিনের বিল। —নিজস্ব চিত্র।

আরজি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে উঠে এসেছে প্রভাবশালী তত্ত্ব। প্রভাবশালীর তালিকায় থাকা চিকিৎসক বিরূপাক্ষ বিশ্বাসকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ থেকে কাকদ্বীপে বদলি করা হয়েছে বুধবারই। স্বাস্থ্য দফতরের ওই নির্দেশ পাঁচকান হতেই মাথায় হাত পড়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের জয়হিন্দ ক্যান্টিনের মালিক শেখ মাখনের। বার বার ফোন করে গিয়েছেন। কিন্তু ও পার থেকে সাড়া নেই। ক্যান্টিনে বসে মাখন বললেন, ‘‘আরে ২৩,৮০০ টাকা বাকি রেখে গেলেন উনি!’’

Advertisement

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ক্যান্টিন মালিক মাখনের দাবি, চা আর সিগারেটের নেশা ডাক্তারবাবুর (বিরূপাক্ষ)। তাঁর কথায়, ‘‘রোজ ১০০ কাপ চায়ের অর্ডার আসত। বড় বড়, দামি সিগারেট খেতেন। মিনারেল ওয়াটার কিনতেন।’’ কিন্তু টাকা? মাখন বললেন, ‘‘বলতেন পরে দেবেন।’’ মাখনের দাবি, চিকিৎসকের বরাত মতো কখনও তাঁর ঘরে খাবার পাঠিয়েছেন। ক্যান্টিনে এসেও খাবারদাবার খেতেন। কখনও ডিউটির ফাঁকে এসে ঝটপট করে কিছু খেয়ে আবার রোগী দেখতে গিয়েছেন। কিন্তু সে সব খাবারও খেতেন বাকিতেই।

তাই বলে প্রায় ২৪ হাজার টাকা ধার রাখলেন কেন? মাখনের দাবি, প্রাপ্য টাকার জন্য চিকিৎসকের কাছে বার বার গিয়েছেন। কিন্তু শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। ক্যান্টিন মালিক বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে আমাকে ঘুরিয়েছেন। ফোন করলে ধরেও কেটে দিতেন। অন্য নম্বর থেকে ফোন করেছি। তা-ও পাইনি।’’ শেষমেশ নাকি ভিডিয়ো কলে বিরূপাক্ষকে ধরার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু চিকিৎসক ধরা দেননি। মাখন বলেন, ‘‘মাঝে এক বার দেখা হয়েছিল। বলেছিলেন, ‘সব মিটিয়ে যাব।’ তার পর আর পাত্তা পাওয়া যায়নি।’’

Advertisement

আরজি কর-কাণ্ডের মধ্যে দিন কয়েক আগে সামজমাধ্যমে একটি অডিয়ো ভাইরাল হয়। সেই অডিয়োর সূত্র ধরেই উঠে আসে চিকিৎসক বিরূপাক্ষের নাম। দাবি করা হয়, সেই অডিয়োর কণ্ঠস্বর বিরূপাক্ষের। সন্দীপ ঘোষ-ঘনিষ্ঠকে সেই অডিয়োয় ‘হুমকি’ দিতে শোনা গিয়েছিল। অভিযোগ, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে চলত বিরূপাক্ষের ‘দাদাগিরি’। কথা না-শুনলে তিনি হুমকিও দিতেন বলে অভিযোগ। সেই অভিযোগকে কেন্দ্র করে শোরগোল পড়ে যায়। বিরূপাক্ষ যদিও এই অডিয়োটি সাজানো বলে সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দেন।

তার মধ্যেই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের সেমিনার হলের একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসে। সেই ভিডিয়োটি চিকিৎসক খুনের পরের বলেও দাবি করা হয়। সেখানে অনেককে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল। অভিযোগ, খুনের ঘটনাস্থলে ঢুকে পড়েছিলেন বহিরাগতেরা। যা নিয়ে পুলিশ পরে ব্যাখ্যাও দেয়। তবে সেই ভিডিয়োয় নাকি বিরূপাক্ষকে দেখা গিয়েছিল। তিনি কেন সেখানে গিয়েছিলেন, সে প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা (যদিও ভাইরাল হওয়া অডিয়ো বা ভিডিয়ো— কোনওটারই সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)। অডিয়ো, ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই বিরূপাক্ষকে সরানোর দাবি ওঠে। সেই আবহেই স্বাস্থ্য দফতর বিজ্ঞপ্তি জারি করে ওই চিকিৎসকের বদলির নির্দেশ দিয়েছে। জানানো হয়েছে, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের প্যাথোলজি বিভাগের সিনিয়র আবাসিক চিকিৎসক বিরূপাক্ষকে বদলি করা হচ্ছে কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে। সেখানে তিনি সিনিয়র আবাসিক চিকিৎসক হিসাবে কাজ করবেন। ওই নির্দেশের পর দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের (সিএমওএইচ) অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখান জুনিয়র চিকিৎসকেরা। অন্য দিকে, মাখন জানাচ্ছেন, দরকারে তিনি বিরূপাক্ষের বাড়িতে যাবেন। টাকা আদায় করবেনই। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়ির ঠিকানা জোগাড় হয়ে গিয়েছে। তার পরেও টাকা না পেলে আইনের দ্বারস্থ হব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement