(বাঁ দিকে) সীতারাম ইয়েচুরি। মহম্মদ সেলিম (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজনৈতিক আক্রমণ করতে গিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম যতটা ‘গরম’, ঠিক ততটাই ‘নরম’ দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। শনিবার দুই সুরে বাজল সিপিএম। রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী রাজনীতির বাধ্যবাধকতার কারণেই ইয়েচুরি খুব একটা চড়া সুরে আক্রমণ শানাননি তৃণমূলের বিরুদ্ধে। আবার রাজ্য রাজনীতির বাস্তবতা মেনে সেলিম চাঁছাছোলা আক্রমণ শানিয়েছেন।
শুক্রবার থেকে হাওড়া জেলা দফতরে শুরু হয়েছে সিপিএমের রাজ্য কমিটির বর্ধিত অধিবেশন। রবিবার পর্যন্ত তা চলবে। শনিবার অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে সাংবাদিক বৈঠক করেন ইয়েচুরি ও সেলিম। রাজ্য সম্পাদক সেই বৈঠকে মমতাকে চড়া সুরে আক্রমণ করেন। সেখানে ইয়েচুরি কোনও ভাবেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি আক্রমণ শানাননি। শুধু এটুকু বলেছেন, ‘‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে। ব্যস, ওইটুকুই।
প্রসঙ্গত, যে কোনও দুর্নীতি ইস্যুতে তৃণমূলের নেতাদের নাম জড়ালেই রাজ্য সিপিএমের নেতারা সরাসরি নিশানা করেন মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কিন্তু ইয়েচুরি সে পথে হাঁটলেন না। রেশন দুর্নীতির অভিযোগে ধৃত রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক শুক্রবার বলেছেন, ‘‘বিজেপি আমাকে ফাঁসিয়েছে। মমতাদি, অভিষেক সব জানেন।’’ তার পর থেকেই সুজন চক্রবর্তীরা বলতে শুরু করেছেন, ‘‘মন্ত্রীই তো বলে দিচ্ছেন কোন দু’জন সব জানেন। আমরা তো গোড়া থেকেই বলছি মাথা ধরতে হবে।’’ কিন্তু ইয়েচুরি কী মনে করেন? জবাবে সিপিএম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘আমি ইডি নই। আমি তদন্ত করছি না। আমার মত এখানে প্রাসঙ্গিক নয়।’’ এর কিছু ক্ষণ পরে সেলিমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক যখন নাম বলছেন তখন পিসি-ভাইপোকে জেরা করতে হবে।’’
বর্ধিত অধিবেশনের সূচনা পর্বে ইয়েচুরি শুক্রবার বলেছিলেন, ‘‘ইডি কি আদৌ দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করছে? না। তারা রাজনৈতিক স্বার্থে কাজ করছে। বিজেপি সরাসরি রাজনৈতিক যন্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে।’’ সিপিএম সাধারণ সম্পাদক এ-ও বলেছিলেন, ‘‘তার মানে কি দুর্নীতি হয়নি? হয়েছে। বাংলায় কী দুর্নীতি হয়েছে আপনারা জানেন। কিন্তু ইডি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছে না। পাঁচ হাজারের বেশি মামলার তদন্ত করছে। মাত্র ২৩টির নিষ্পত্তি হচ্ছে। তদন্ত সঠিক ভাবে করে মামলার নিষ্পত্তি করুক। তা না করে হেনস্থা করা হচ্ছে।’’
বঙ্গ সিপিএম যখন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার আরও তৎপরতার দাবিতে সিজিও কমপ্লেক্স ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি নিচ্ছে, তখন ইয়েচুরির কথা আলিমুদ্দিন স্ট্রিটকে অস্বস্তিতে ফেলেছিল বলেই মত অনেকের। শনিবার ইয়েচুরি বলেন, ‘‘ইডির অপব্যবহার হচ্ছে। তারা দর কষাকষি করছে। কিন্তু দুর্নীতি হলে কাউকে যদি জেলে পাঠানো হয় তাতে ঈআমাদের তো কিছু বলার নেই।’’ সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতে হালকা মেজাজেই সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘শুনছি এই রকম প্রচার চলছে, আমি নরম (সফ্ট) আর সেলিম চরম (হার্ড)। আজ আমরা দু’জনে পাশাপাশি বসেছি।’’ আর গোটা সাংবাদিক বৈঠকে দুই নেতা বাজলেন দুই সুরে।