দলে মহিলার সংখ্যা ভারী করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সিপিএমকে!
দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী এই রাজ্যে। সেই রাজ্যেই দলে মহিলার সংখ্যা ভারী করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সিপিএমকে!
সম্মেলন-পর্ব চলাকালীন বিশেষ নির্দেশিকা জারি করে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট থেকে প্রতি জেলা কমিটিকে বার্তা দেওয়া হয়েছে, এরিয়া ও জেলা স্তরে নির্দিষ্ট সংখ্যক মহিলা রাখতেই হবে। দলের উচ্চতর নেতৃত্বের সুপারিশ করা কমিটির বদলে যেখানে সম্মেলনের ভোটাভুটির পরিস্থিতি হবে, সেখানেও নির্বাচিত প্যানেলে মহিলার সংখ্যা শিথিল করা চলবে না। সম্মেলনের সময়ে উপযুক্ত মহিলা ও তরুণ মুখ না পাওয়া গেলেও সেই জায়গা ফাঁকা রেখেই আপাতত কমিটি গড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য সিপিএমের তরফে।
সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি নির্বাচনের ফলাফলের পর্যালোচনা থেকে বামেদের মত, মহিলাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের সমর্থনই থাকছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে। বিজেপিকে হারিয়ে ৬ মাস আগে তৃণমূল রাজ্যে তৃতীয় বার ক্ষমতায় ফেরার সময়ে সেই প্রবণতা আরও বেড়েছে। এমতাবস্থায় সংগঠনে এবং আন্দোলনে মহিলাদের সংখ্যা বাড়ানোর উপরে বিশেষ নজর দিতে চাইছেন সিপিএম নেতৃত্ব। তাঁদের মতে, শাসকের নীতি ও নানা কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ঘরে ঘরে জনমত গড়ে তুলতে হলে মহিলাদের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আগের দু’টি সম্মেলনেও কমিটিতে মহিলার সংখ্যা বৃদ্ধির কথা বলেছিল সিপিএম। তবে এ বার বিষয়টির উপরে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে এরিয়া কমিটির সম্মেলনের রিপোর্ট পাওয়ার পরে ফের সংশোধিত ‘নোট’ তৈরি করে জেলায় পাঠাতে হয়েছে দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীকে। প্রসঙ্গত, পলিটবুরোয় কোনও মহিলা সদস্য না থাকায় প্রায় দু’দশক আগে হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেসের আসরেই প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন বৃন্দা কারাট।
জেলায় জেলায় সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্মেলন এখন গুটিয়ে আসার পথে। কলকাতা ও হাওড়া শহরে পুরভোটের কারণে কয়েকটি এরিয়া কমিটির সম্মেলনের দিনক্ষণ পরিবর্তিত হতে পারে। দলীয় সূত্রের খবর, এরিয়া কমিটির সম্মেলন যেমন ভাবে চলেছে, তার রিপোর্ট নিতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে মহিলা এবং কিছু ক্ষেত্রে তরুণ সদস্যদের কমিটিতে জায়গা দেওয়া সংক্রান্ত নির্দেশিকা মানা হচ্ছে না। সেই জন্যই নতুন করে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। যেখানে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে, ‘পূর্বেও বলা হয়েছে, পুনরায় উল্লেখ করা হচ্ছে যে, জেলা কমিটিতে মহিলা এবং এরিয়া কমিটিতে ৩১ বছরের কমবয়স্ক সদস্য রাখার ব্যাপারে যদি উপযুক্ত কেউ না থাকে, তা হলে বর্তমানে ওই স্থানগুলি শূন্য থাকবে। পরবর্তী সময়ে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তা পূরণ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। পরবর্তী কালে এরিয়া কমিটি স্তরে পৃথক মহিলা ও ছাত্র শাখা গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে সিপিএমের। এরিয়া সম্মেলন থেকেই সেই ভাবনা মাথায় রেখে এগোনোর কাজে জেলা কমিটিতে তদারকি করতে বলেছে আলিমুদ্দিন।
সম্মেলনের নির্দেশিকায় বলে দেওয়া হয়েছে, নতুন অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বয়ঃসীমা হবে জেলা কমিটি স্তরে ৫৫ এবং এরিয়া কমিটিতে ৫০ বছর। কমিটিতে ৩১ বছরের কম বয়সীদের নেওয়ার আলাদা সংস্থান রয়েছে। তার বাইরে বাকিদের ক্ষেত্রে ওই বয়সের সূত্র কার্যকর হবে। জেলা কমিটির গড় বয়স আগের বারের চেয়ে সামান্য হলেও কমাতেই হবে, এমন বার্তাই দেওয়া হয়েছে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘সংগঠনকে আরও গতিশীল ও কার্যকর করতে কী ভাবে কোন অংশের প্রতিনিধিত্ব কমিটিতে রাখতে হবে, বারবার আলোচনা করেই তা ঠিক হয়েছে। সম্মেলনে সেই সিদ্ধান্তই সকলকে মেনে চলতে বলা হচ্ছে।’’