অধীর, বিমান এবং বিকাশ।
বোতলের ‘ভূত’কে আবার বোতলে পুরতে সচেষ্ট হল সিপিএম এবং কংগ্রেস! দু’পক্ষেরই শীর্ষ স্তর থেকে জানিয়ে দেওয়া হল, পঞ্চাশ বছরেরও বেশি আগে ঘটে যাওয়া সাঁইবাড়ি এবং তার পরে বর্ধমানের আহ্লাদিপুর গ্রামের হত্যাকাণ্ড নিয়ে এখন আর বিতর্কের অবকাশ নেই। সামাজিক মাধ্যমে দলের রাজ্য কমিটির দুই সদস্য মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় ও বিকাশ ভট্টাচার্যের নামে যে পোস্ট ঘিরে সাঁইবাড়ি বিতর্ক আবার সামনে এসে পড়েছিল, তা এখনকার ‘দলীয় অবস্থান’ নয় বলেও ব্যাখ্যা দেওয়া হল সিপিএমের তরফে। তবে শীর্ষ স্তর থেকে বিতর্ক সামাল দেওয়ার এই প্রয়াসের মধ্যেই নতুন বিতর্ক বাধিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেসের নামে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রকে পাঠানো ‘কড়া’ চিঠি। যা প্রদেশ কংগ্রেসের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নয় বলে পরে আবার ব্যাখ্যা করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।
প্রদেশ সভাপতি অধীরবাবু সোমবার বলেছেন, ‘‘বিকাশবাবু দক্ষ আইনজীবী, সজ্জন ব্যক্তি। তবে ব্যক্তিগত ভাবে তিনি মাঝেমাঝে কিছু বাহাদুরি দেখিয়ে ফেলেন! সামাজিক মাধ্যমে তিনি যা বলেছেন, তা সিপিএমের দলীয় বক্তব্য বলে মনে করি না। তা ছাড়া, একটা প্রাগৈতিহাসিক একটা সমস্যা নিয়ে এখন বিতর্কে কোনও বাহাদুরি আছে বলেও মনে করি না।’’ এই বিতর্কের সঙ্গে বর্তমান রাজনীতিতে জোটের কোনও সম্পর্ক নেই বলেও স্পষ্ট করে দিয়েছেন অধীরবাবু।
পরে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুও বলেন, ‘‘মীনাক্ষীর সঙ্গে কথা হয়েছে। ও নিজে কিছু করেনি, ওর নামে কেউ পোস্ট করেছে। বিকাশ ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা হয়নি, তবে ওঁর বক্তব্য শুনেছি। এটা বলতে পারি, এখন দলের অবস্থান এটা নয়। এগুলো দলের বক্তব্য নয়।’’ মীনাক্ষী বা বিকাশবাবু সামাজিক মাধ্যমে যা বলেছিলেন, সেই বিতর্কে দল জড়াতে চায় না বলে আগেই জানিয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবু। বিমানবাবু এ দিন দলের অবস্থান আরও স্পষ্ট করে দিয়েছেন। অন্য দিকে, বিকাশবাবুরও ব্যাখ্যা, ‘‘সাঁইবাড়ির কংগ্রেসের সঙ্গে এখনকার কংগ্রেসের কোনও সম্পর্ক নেই। অতীতের ঘটনা জেনেও কংগ্রসের সঙ্গে সিপিএমের জোটের ব্যাপারে আমি নিজে তৎপর হয়েছিলাম। রাজনীতি এবং জোট পিছনের দিকে তাকিয়ে হয় না, সামনের দিকে তাকাতে হয়!’’
সেই চিঠি। নিজস্ব চিত্র।
তবে এরই মধ্যে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির ‘বিড়ম্বনা’ বাড়িয়েছে দলের আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন কমিটির চেয়ারম্যান সৌম্য আইচ রায় ও আহ্বায়ক নিলয় প্রামাণিকের লেখা সূর্যবাবুকে পাঠানো চিঠি। সে চিঠির বয়ানে বিকাশবাবুর পোস্টের জন্য সমগ্র কংগ্রেস পরিবারের ‘অপমানিত’ হওয়ার কথা বলে এমন ‘অবমাননাকর’ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সূর্যবাবুর ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে! যার জেরে স্বভাবতই ক্ষুব্ধ সিপিএম শিবির। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘আমাদের রাজ্য সম্পাদককে এমন চিঠি দিলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বা সমমর্যাদার কেউ দিতে পারেন। অন্য কেউ এমন করলে তাঁদের মান-মর্যাদা এবং ভারসাম্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয় না!’’ অধীরবাবু অবশ্য এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘ওটা প্রদেশ কংগ্রেসের আনুষ্ঠানিক চিঠি নয়। আবেগতাড়িত কেউ ওঁদের দৃষ্টি আকষর্ণের জন্য এটা করেছে।’’