কংগ্রেসকে সঙ্গে রেখেই গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির ঐক্য গড়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই হবে। দলের এই চালু রাজনৈতিক লাইনই ফের অনুমোদিত হল পার্টি কংগ্রেসের আগে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে। তবে নির্বাচনী সমঝোতা কোথায় কার সঙ্গে হবে, তা রাজ্যভিত্তিক পরিস্থিতির উপরেই নির্ভর করবে বলে ফের জানিয়ে রেখেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। আসন্ন পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে যেমন উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে সমঝোতা করতে চান ওই রাজ্যের সিপিএম নেতৃত্ব।
গোটা দেশের নিরিখে বিজেপিই এখন প্রধান শত্রু এবং তার মোকাবিলায় বৃহত্তম ঐক্য দরকার, এই মর্মেই আসন্ন পার্টি কংগ্রেসের জন্য দলের রাজনৈতিক ও কৌশলগত রিপোর্টের খসড়া তৈরি করেছিল সিপিএমের পলিটবুরো। বিগত পার্টি কংগ্রেসের লাইনে কোনও পরিবর্তন না আনার পক্ষেই গত মাসে পলিটবুরোয় ভোট দিয়েছিলেন অধিকাংশ সদস্য। পলিটবুরোর পেশ করা ওই খসড়া রিপোর্টই হায়দরাবাদে তিন দিনের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে অনুমোদিত হয়েছে। এ বার আর ভোটাভুটিরও প্রয়োজন পড়েনি। তবে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কংগ্রেসের অবস্থান বেশ কিছু ক্ষেত্রে ‘নরম’ হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করে কংগ্রেসকে বাদ রেখেই বিজেপি-বিরোধী ঐক্যের কথা খসড়া রিপোর্টে রাখার দাবি তুলেছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির একাংশ। কিন্তু রবিবার বৈঠকের জবাবি ভাষণে এই দাবি সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। দলীয় সূত্রের খবর, ইয়েচুরি বৈঠকে ব্যাখ্যা দেন, জাতীয় স্তরে সংসদের ভিতরে ও বাইরে একগুচ্ছ বিরোধী দল সমন্বয় করে বিজেপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। সেখানে কংগ্রেস নিয়ে বাছ-বিচার করতে যাওয়া অর্থহীন।
তৃণমূল কংগ্রেস এখন যে ভাবে কংগ্রেসকে প্রায় বাদ দিয়েই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে চাইছে, সেই উদাহরণ তুলেছিলেন দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলির নেতাদের একাংশ। কিন্তু বৈঠকে পাল্টা যুক্তি দেওয়া হয়েছে, এই ‘রেষারেষি’ করতে গিয়ে বিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরিয়ে এবং বিজেপির আখেরে সুবিধা করে দিয়ে কী লাভ? তা ছাড়া, কোথায় কার সঙ্গে ভোটে সমঝোতা হবে, কোনও রাজ্য নেতৃত্বের উপরেই দল তা চাপিয়ে দেয়নি এবং দেবে না বলেও উল্লেখ করেছেন ইয়েচুরি। বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে বামেদের সমঝোতা হওয়ার কোনও পরিস্থিতি নেই কিন্তু সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী সমন্বয়ে সিপিএম, তৃণমূল-সহ নানা দলই রয়েছে। উত্তরপ্রদেশে সিপিএম চায় সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে বোঝাপড়া হোক। আবার ত্রিপুরা বামফ্রন্টের মঞ্চ থেকেই লড়তে চায়।
কেরলের কান্নুরের ই কে নায়নার অ্যাকাডেমিতে আগামী ৬ থেকে ১০ এপ্রিল সিপিএমের ২৩তম পার্টি কংগ্রেস হবে বলে ঠিক হয়েছে। কোভিড পরিস্থিতির কারণে বাংলা, মহারাষ্ট্রের মতো বড় রাজ্যে দলের রাজ্য সম্মেলন এখনই হচ্ছে না। তাই পার্টি কংগ্রেসের দিনক্ষণ প্রয়োজনে রদবদলের পক্ষপাতী দলের একাংশ। তবে উদ্যোক্তা রাজ্য কেরল জানিয়েছে, ১৫ এপ্রিল থেকে ‘বিশু’ ঘিরে উৎসবের মররসুম থাকে। এ বার বর্ষার পূর্বাভাসও জোরালো। তাই খুব বেশি রদবদল না করাই ভাল।