রামপুরহাট গণহত্যার প্রতিবাদে হাওড়ার রানিহাটে মিছিলে বামফ্রন্টের নেতারা নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যে হিংসা ও খুনোখুনির তাণ্ডব রুখতে গণ-প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের ডাক দিল সিপিএম। রামপুরহাটে ‘গণহত্যা’র বিচার চেয়ে মঙ্গলবার বিকালে হাওড়ার পাঁচলায় মিছিল করে রাতেই বীরভূম রওনা হয়ে গিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু-সহ বাম নেতারা। রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে আজ, বুধবার মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন তাঁরা।
রামপুরহাটের ঘটনার পরে বিজেপি বা কংগ্রেসের মতো কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি তোলেনি সিপিএম। দলের রাজ্য সম্পাদক সেলিম বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীশূন্য রাজ্য চেয়েছিলেন। এই বীরভূমেই তৃণমূল এবং পুলিশ-প্রশাসন একাকার হয়ে বিরোধীদের নিকেশ করা হয়েছে। এখন তৃণমূলও আর তৃণমূলের হাতে নিরাপদ নেই।’’ একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘যাঁরা মারা গিয়েছেন, আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা তৃণমূলের সমর্থক করতেন বা সংখ্যালঘু, এগুলো বড় কথা নয়। তাঁরা বাংলার মানুষ। রাতভর গ্রাম জুড়ে তাণ্ডব চলল আর মানুষগুলো পুলিশ-প্রশাসনের কোনও সহায়তা পেলেন না!’’ শাসক দলের সন্ত্রাসের মুখেও পুরভোটে রামপুরহাটের একটি ওয়ার্ডে সিপিএম জিতেছে এবং তার পরে তৃণমূলে সন্দেহ ও রেষারেষি শুরু হয়েছে বলেও সেলিমের অভিযোগ। শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব অবশ্য গোটা ঘটনায় ‘বৃহত্র রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের’ গন্ধ পাচ্ছেন।
ছাত্র-নেতা আনিস খানের মৃত্যুর বিচারের দাবিতে হাওড়ার রানিহাটে এ দিন বামফ্রন্টের সমাবেশ নির্ধারিত ছিল। তার আগে আনিসের বাড়ি যাওয়ার পথে সিপিএমের নবনির্বাচিত রাজ্য সম্পাদক খবর পান, রামপুরহাটের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। বিদ্যাসাগর সেতু থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে সেলিম ফেরত আসেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে। বামফ্রন্ট যে ভাবে দিনক্ষণ মেপে কর্মসূচি ঠিক করে, সেই ছক ভেঙে তৎক্ষণাৎ রাজ্য সম্পাদক ঘোষণা করেন, তাঁরা বীরভূম যাবেন। দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা সেরে সেলিম তার পরে যান আনিসের বাড়ি। রানিহাটের সমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে বিমানবাবুদের কিঞ্চিৎ ধাক্কাধাক্কিও হয়। মিছিল শেষ করে বীরভূমের দিকে রওনা দেন বিমান, সেলিমেরা। প্রসঙ্গত, পার্টি কংগ্রেসের আগে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে আজই দিল্লি রওনা হওয়ার কথা সিপিএমের শীর্ষ নেতাদের।
আনিসের বাবার মতোই বগটুই গ্রামের মানুষও ঠিক সময়ে পুলিশের সাহায্য পাননি অভিযোগ করে সেলিম এ দিন বলেছেন, ‘‘একের পর এক ঘটনা ঘটবে আর তাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলবে। বীরভূম এবং গোটা রাজ্যের মানুষের কাছে হাতজোড় করে অনুরোধ করছি, এই হিংসা বন্ধ করতে এগিয়ে আসুন। সকলে মিলে ঘাতক বাহিনীকে রুখে দিতে হবে।’’
প্রতিবাদে সরব হয়েছে বামপন্থী সব দলই। আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক বিশ্ব্নাথ চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘রাজ্যে ২০১১ সালে শাসনভার গ্রহণের পর থেকে এখনও অবধি তৃণমূলের আশ্রিত গুন্ডাবাহিনীর দ্বারা যতগুলি নৃশংস ঘটনা ঘটেছে, রামপুরহাটের ঘটনা অতীতের সকল কুকীর্তিকে ছাপিয়ে গিয়েছে। বাংলায় এ হেন জঙ্গল-রাজের অবস্থা সৃষ্টির জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে যারা দায়ী, তাদের এমন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে কেউ এই ধরনের পৈশাচিক ঘটনা ঘটানোর স্পর্ধা দেখাতে না পারে। মুখ্যমন্ত্রী সেই কাজে ব্যর্থ হলে বলতে হবে, তিনিও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নন!’’ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন এবং পিডিএস। মৌলালিতে আজ প্রতিবাদ-সভার ডাক দিয়েছে লিবারেশন। রামপুরহাটে তৃণমূলের উপ-প্রধান খুন এবং বগটুইয়ের হত্যাকাণ্ড, দুই ঘটনারই নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য।