পথে: সারদা কেলেঙ্কারি-সহ সব ভুয়ো অর্থ লগ্নি সংস্থার দুর্নীতির দ্রুত তদন্তের দাবিতে বামেদের মিছিল। সোমবার মৌলালিতে। ছবি: সুদীপ ঘোষ
দল ক্ষমতায় নেই। অদূর ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। তবু সিপিএমের ডাকে ব্রিগেড সমাবেশে উপচে পড়েছিল ভিড়। যার মধ্যে বড় অংশই বয়সে তরুণ। ব্রিগেডের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার প্রতারণা মামলায় অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে কলকাতায় মিছিলও চোখ টানল কলেবরে।
রাজ্য এবং জাতীয় রাজনীতির পরিসরে যখন সম্মুখ সমর চলছে বিজেপি ও তৃণমূলের, সেই সময়ে বামেদের কর্মসূচিতে এমন ভিড়ের রহস্য কী? সিপিএম নেতাদের মতে, লোক আসার কারণ দু’টো। প্রথমত, কৃষক, শ্রমিকদের দুর্দশা এবং তরুণদের কর্মসংস্থানের দাবি নিয়ে সাম্প্রতিক কালে বামেদের ধারাবাহিক আন্দোলনের কিছু ফল মিলছে। আর দ্বিতীয়ত, রাজ্যে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার যে পরিসর ক্রমাগত বিজেপির দিকে যাচ্ছিল, গেরুয়া শিবিরের কাজকর্মের জেরেই তাতে ভাঁটা পড়ছে। বামেদের সংগঠন ভেঙে যে অংশ বিজেপিতে মিশছিল তৃণমূল-বিরোধিতা করতে চেয়ে, তাদের একাংশ এখন লাল পতাকা নিয়েই মাঠে নামছে বলে বাম নেতাদের দাবি। তবে চূড়ান্ত পরীক্ষা যাতে ভোটেই হবে, তা মানছেন তাঁরা।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের দাবি, ‘‘আমরা ক্ষমতায় থাকার সময়েও এমন ব্রিগেড ক’টা হয়েছে, বলতে পারব না! এখন তো আমাদের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার নেই। তবু আবেগের টানে, স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এত মানুষ এসেছেন!’’
ব্রিগেড সমাবেশের জন্য এ বার যেমন জেলা থেকে বাস ভাড়া করে সংগঠিত ভাবে লোক এনেছিল সিপিএম, তেমনই আবার নিজেদের উদ্যোগে দলবদ্ধ ভাবে ট্রেনে বা ছোট গাড়িতে এসেছিলেন অনেকে। পঞ্চায়েত নির্বাচনেবহু জায়গাতেই তাঁদের ভোট দিতে দেওয়া হয়নি, এই ক্ষোভ ধরা পড়েছে ব্রিগেডে আগত বহু বাম কর্মী-সমর্থকের গলাতেই। লোকসভা নির্বাচনে তাঁরা ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে চান, এই দাবিই তাঁরা নিয়ে এসেছিলেন ব্রিগেডে। তাঁদের কথা মাথায় রেখেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র ওই সমাবেশেই বার্তা দিয়েছেন, ‘‘সাহস করে এ বার গ্রামে গ্রামে দাঁড়াতে হবে। ভোট দিতে বাধা পেলে মানুষকে নিয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে।’’
ভিড়ে ঠাসা ব্রিগেডের রেশ থাকতে থাকতেই সোমবার সন্ধ্যায় মৌলালির রামলীলা পার্ক থেকে পার্ক সার্কাসের লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ পর্যন্ত কলকাতা জেলা সিপিএমের মিছিল হয়েছে লম্বা। ‘চোর ধরো জেল ভরো, গরিবের টাকা ওয়াপস করো’— এই স্লোগান দিয়ে বিমান বসু, সূর্যবাবুরা পা মিলিয়েছেন কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে। মিছিল দেখতে রাস্তার ধারেও ভিড় করেছিলেন অনেকে। ব্রিগেডে বাংলা ও সাঁওতালি ভাষায় চোখা বক্তৃতা করে হাততালি কুড়োনো দেবলীনা হেমব্রমকে দেখা গিয়েছে মিছিলের প্রথম সারিতে।
আলিমুদ্দিনে এ দিন সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকেও এসেছে ব্রিগেড প্রসঙ্গ। প্রায় সব জেলার নেতারাই বৈঠকে জানিয়েছেন, জানুয়ারিতে সাধারণ ধর্মঘট ও ফেব্রুয়ারির ব্রিগেডে সংগঠনের সক্রিয়তায় তাঁরা আশ্বস্ত। সূর্যবাবু বৈঠকে বলেছেন, এ বারের সমাবেশকে ‘ইয়ং ব্রিগেড’ বলা যায়। তরুণদের এই উৎসাহকেই ভোটে কাজে লাগানোর কথা বলেছেন তিনি।