পদযাত্রাই ফের পরীক্ষায় ফেলল সিপিএমকে

মাসদুয়েকের পদযাত্রা মনোবল চাঙ্গা করে দিয়েছে! বিধানসভা ভোটের আগে সংগঠনের মধ্যে এই সাহস ধরে রাখাই এখন নতুন পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে সিপিএমের সামনে!

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৬ ০৪:১৯
Share:

মাসদুয়েকের পদযাত্রা মনোবল চাঙ্গা করে দিয়েছে! বিধানসভা ভোটের আগে সংগঠনের মধ্যে এই সাহস ধরে রাখাই এখন নতুন পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে সিপিএমের সামনে!

Advertisement

তৃণমূলের জমানা শুরু হওয়ার পরে রাজ্যের বেশ কিছু এলাকাতেই একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল বাম সংগঠন। প্রকাশ্য কর্মসূচি বলতে ছিল না তেমন কিছুই। স্বভাবতই ভোটের সময়ে রাজ্য নেতৃত্বের যা-ই হুঁশিয়ারি থাক, শাসক দলের বিরুদ্ধে চোখে পড়ার মতো প্রতিরোধ গড়ে ওঠেনি বহু জায়গায়। বাম গণসংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ বিপিএমও-র ডাকে পদযাত্রা এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের রসদ এনে দিয়েছে আলিমুদ্দিনের সামনে। প্রথমে নভেম্বরে শুরু হওয়া বুথভিত্তিক স্থানীয় জাঠা এবং তার পরে নানা বিধানসভা কেন্দ্র ছুঁয়ে সদ্যসমাপ্ত সিঙ্গুর, হলদিয়া ও বাঁকুড়া থেকে শালবনি পদযাত্রা বিপুল সাড়া ফেলেছে বাম মহলে। দীর্ঘ দিনের জড়তা কাটিয়ে হরিপাল, তারকেশ্বর, আরামবাগ, গোঘাট, চন্দ্রকোনা, কেশপুর বা শালবনিতে বাম কর্মী-সমর্থকেরা আবার ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের এই ‘সক্রিয়তা’ যে কোনও মূল্যে বজায় রাখার লক্ষ্যেই তৎপরতা শুরু হয়েছে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যে।

সামনে ফেব্রুয়ারি মাস জু়ড়ে চলবে পরীক্ষার মরসুম। মাইক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তখন প্রকাশ্যে বড় কর্মসূচি নেওয়া যাবে না। জোর দেওয়া হবে বুথভিত্তিক কর্মিসভায়। কিন্তু টানা পদযাত্রা সংগঠনের মধ্যে যে উদ্দীপনা সঞ্চার করেছে, তা যাতে ঝিমিয়ে না পড়ে— ভাবতে হচ্ছে আলিমুদ্দিনকে! আপাতত তারা ঠিক করেছে, আগামী ২৮ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার জেলা-সদরে বিক্ষোভ কর্মসূচি যথাসম্ভব বড় করে করতে হবে। সেইমতোই জেলাগুলিকে জনসমাবেশের নতুন নতুন লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। অন্যত্র জেলাশাসকের দফতরের কাছে বিক্ষোভ-অবস্থান হলেও কলকাতায় সে দিন হবে ‘লালবাজার অভিযান’। সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা, ফেব্রুয়ারিতে ঘরের মধ্যের কর্মসূচিতে ঢুকে যাওয়ার আগে এই জেলা-সদরের অবস্থানেই দাগ রেখে যেতে হবে!

Advertisement

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলছেন, ‘‘সিঙ্গুর থেকে শালবনি এবং তার পাশাপাশি আরও কয়েকটা পদযাত্রায় রাজ্য বামফ্রন্টের নেতারা সামনে ছিলেন।
কর্মীদের ভয় ভাঙাতে এটা অনেকটা সাহায্য করেছে। সেই সঙ্গেই কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের নজরদারির ফলে পুলিশ-প্রশাসনও খানিকটা সতর্ক আছে। এই পরিস্থিতিকে আমাদের পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে।’’ সিপিএমের একাংশের বক্তব্য, পদযাত্রায় যখন এত সাড়া মিলেছে, পায়ে হেঁটে বা সাইকেল-যাত্রা করে এলাকাভিত্তিতে জনসংযোগের সেই কায়দাই ধরে রাখা হোক। শালবনিতে ‘শিল্প চাই’ পদযাত্রা শেষ হতেই যেমন পূর্ব মেদিনীপুরে তাপস সিংহেরা মন্দারমনি থেকে নতুন পদযাত্রায় বেরিয়ে পড়েছেন। রবিবার যা শেষ হয়েছে ওল্ড দিঘায়।

পদযাত্রা উপলক্ষেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বা বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশ কিছু ‘উপদ্রুত’ এলাকায় ঘুরেছেন। জেলা ও জোনাল নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় সূর্যবাবু, বিমানবাবুরা বারেবারেই জোর দিয়েছেন, বুথ স্তরে সংগঠন সক্রিয় না থাকলে কিছুতেই কিছু হওয়ার নয়! দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘রাজ্যের যা পরিস্থিতি, অনেক মানুষই এখন নিজেদের মনোভাব প্রকাশ করে দিয়ে চিহ্নিত হতে চাইবেন না। আমরাও তেমন প্রত্যাশা করছি না। কিন্তু আমাদের কাজ প্রতিনিয়ত রাস্তায় থেকে মানুষকে ভরসা দেওয়া যে, ল়ড়াইয়ে আমরা আছি!’’

ভয় ভাঙার কিছু কিছু ছোট ছোট ‘সুফল’ ব্রিগেড সমাবেশের সময় থেকেই পেতে শুরু করেছে বামেরা। পদযাত্রার সাহস থেকে এ দিনই যেমন বারাসতের কাছে ছোট জাগুলিয়ায় সেই ২০১১ সালের ১৩ মে থেকে ঘরছাড়া সমর্থকদের ঘরে ফেরানোর দাবিতে মিছিল করেছেন রেখা গোস্বামী, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, দেবব্রত বসুরা। ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা সঞ্জীববাবুর বক্তব্য, ‘‘আগাম জানানো সত্ত্বেও মিছিলের জন্য পুলিশ ছিল না। তবু এলাকার মানুষ যে ভাবে বেরিয়ে এসেছেন, আমরা অভিভূত!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement