লাগাতার নির্বাচনী বিপর্যয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ার পরে দুর্বল সংগঠন গোছানোর কাজে হাত দিতে চলেছে সিপিএম। আসন্ন রাজ্য প্লেনামকে সামনে রেখে সংস্কার আনা হচ্ছে দলের কমিটি কাঠামোয়। জোনাল ও লোকাল কমিটির এর পর থেকে আর পৃথক অস্তিত্ব থাকবে না। দুই কমিটিকে মিলিয়ে-মিশিয়ে তৈরি করা হবে নতুন আঞ্চলিক (এরিয়া) কমিটি। যেমন আছে অন্য কিছু রাজ্যে।
কলকাতায় প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে বসবে রাজ্য সিপিএমের সাংগঠনিক প্লেনাম। তার প্রস্তুতি হিসাবে আজ, বুধবার থেকে আলিমুদ্দিনে বসছে রাজ্য কমিটির দু’দিনের বৈঠক। প্লেনামের যে খসড়া রিপোর্ট রাজ্য কমিটিতে পেশ হতে চলেছে, সেখানে আঞ্চলিক কমিটি গড়ার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। একেবারে নিচু তলায় শাখা কমিটিগুলির সদস্যদের বয়ঃসীমাও বেঁধে দেওয়া হবে।
৩৪ বছরের সরকারি ক্ষমতা হারানোর পরে গত ৫ বছরে সিপিএমের সংগঠন দুর্বল হয়েছে। এক দিকে যেমন বহু কর্মী-সমর্থক দলের মায়া কাটিয়েছেন, তেমনই দলে বেড়েছে ‘নিষ্ক্রিয়’দের সংখ্যা। সঙ্গে চিন্তা বাড়িয়েছে বিধায়কদের দলবদল এবং পুরসভা ও পঞ্চায়েত হাতছাড়া হওয়ার ঘটনা। এই পরিস্থিতিতে প্লেনামের মাধ্যমে সাংগঠনিক স্তরে কিছু ঝাঁকুনি দিতে চাইছে আলিমুদ্দিন।
খসড়া রিপোর্টে প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে, শাখা কমিটির সদস্যদের বয়স তিরিশের মধ্যে হতে হবে। কমিটির সদস্যসংখ্যা রাখতে হবে অন্তত ৭। বাধ্যতামূলক ভাবে রাখতে হবে মহিলা সদস্য। শাখা ও আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদককে বাধ্যতামূলক ভাবে দলের সর্বক্ষণের কর্মী হতে হবে। সিপিএম রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘নিষ্ক্রিয় সদস্য কমাতে দল এ বার বদ্ধপরিকর। সে জন্যই এই দুই কমিটির মাথায় যারা থাকবেন, তাদের সর্বক্ষণের জন্য ভাবা হয়েছে।’’ দল চাইছে, নিষ্ক্রিয় বা আধা-নিষ্ক্রিয়দের পিছনের সারিতে পাঠিয়ে স্রেফ ‘বন্ধু’ হিসেবে রেখে দিতে। সিপিএমের সংগঠনে লোকাল কমিটির অস্তিত্ব বহু দিনের। কিন্তু রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে দলের কলেবর বাড়ায় জেলা ও লোকাল কমিটির সমন্বয় রাখতে মধ্যবর্তী স্তর হিসাবে জোনাল কমিটি তৈরি হয় আটের দশকে। রাজ্য নেতৃত্ব এখন পর্যালোচনায় দেখেছেন, জোনাল কমিটি রেখে কাজের কাজ বিশেষ হচ্ছে না। পরীক্ষামূলক ভাবে হাওড়া ও মালদহে জোনাল কমিটি আগে তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সার্বিক ভাবে তা অবলুপ্ত হলে জোনাল সদস্যদের কী ভাবে পুনর্বাসন দেওয়া হবে, তা নিয়ে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে বিস্তর আলোচনার পর আঞ্চলিক কমিটির ভাবনা এসেছে।
গণসংগঠনের ভূমিকা যে স্বাধীন, তা নিয়ে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসে আগেই দলিল তৈরি হয়েছে। এখন চাপের মুখে গতে বাঁধা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আটকে না থেকে গণসংগঠন যাতে সামাজিক আন্দোলনেও জোর দেয়, সে দিকেও নজর দিতে বলা হচ্ছে খসড়া রিপোর্টে। টিটাগড়ে মঙ্গলবারই বেঙ্গল চটকল মজদুর ইউনিয়নের (বিসিএমইউ) সমাবেশে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, শুধু কর্মী দিয়েই দল হয় না। দল গড়ে ওঠে মানুষের সঙ্গে সংযোগের মধ্যে দিয়েই।