ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ভিড়।— নিজস্ব চিত্র।
সবং-এর ক্ষত এখনও সারেনি। তার আগেই সোমবার ছাত্র পরিষদের কর্মী-সমর্থকদের উপর গুলি চালনার অভিযোগ উঠল রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই ঘটনাতেও অভিযোগের আঙুল সেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-এর দিকে। ছাত্র পরিষদের অভিযোগ, প্রায় ৭ রাউন্ড গুলি চলে। তবে, ঘটনায় কেউ গুলিবিদ্ধ হননি। এই ঘটনার জেরে মঙ্গলবার ১২ ঘণ্টা রায়গঞ্জ বন্ধের ডাক দিয়েছে কংগ্রেস।
সবং-এর মতো এই ঘটনার দায়ও শাসক দল তথা সরকার ছাত্র পরিষদের দিকেই ঠেলেছে। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কংগ্রেসের পায়ের তলা থেকে সব জায়গাতেই মাটি সরে গিয়েছে। তাই এখন নানা অছিলায় হাঙ্গামা বাধানোর চেষ্টা করছে তারা।’’ এর পরেই তাঁর কটাক্ষ, ‘‘কিন্তু, সিপিএমের জুতোয় পা গলিয়ে কংগ্রেস ক্রমশ এ রাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার দিকেই এগোচ্ছে।’’
স্থানীয় সূত্র এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন ক্লাস চলছিল। বিকেল তিনটে নাগাদ হঠাত্ই এক দল যুবক বাঁশ ও লাঠিসোটা নিয়ে ঢুকে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। মূল ভবনে গিয়ে তারা কাউকে খুঁজছিল। সেখানে কিছু ক্ষণ খোঁজাখুঁজির পরে তারা পাশের বাংলা বিভাগে গিয়ে হাজির হয়। সেখানে ছাত্র পরিষদের রাজ্য সম্পাদক প্রসেনজিৎ সাহা এবং জেলা সভাপতি নব্যেন্দু গুহকে দেখতে পেয়ে তাঁদের ব্যাপক মারধর করে ওই যুবকেরা। তার পর ওই দুই নেতাকে লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। কংগ্রেসের তরফে জানানো হয়েছে, প্রসেনজিত্ এবং নব্যেন্দু সেই সময় মাটিতে বসে পড়ায় তাঁদের গায়ে গুলি লাগেনি। তাদের দাবি, এই ঘটনায় ৭-৮ জন ছাত্র পরিষদের কর্মী-সমর্থক গুরুতর ভাবে আহত হয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে যাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয় বলে অভিযোগ, সেই প্রসেনজিৎবাবু এ দিন বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন কোনও ছাত্র সংসদ নেই। তবে, এখানে আমাদেরই প্রভাব বেশি। তাই সন্ত্রাস করে ভয় দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দখলের চেষ্টা করছে টিএমসিপি।’’ টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি অজয় সরকারের অবশ্য দাবি, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। কংগ্রেস অহেতুক আমাদের অভিযুক্ত করছে।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ে গণ্ডগোলের খবর খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। যদিও উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেসের সভাপতি মোহিত সেনগুপ্তর অভিযোগ, পুলিশের সামনেই টিএমসিপি সদস্যেরা ছাত্র পরিষদ সদস্যদের মারধর করে। তিনি বলেন, ‘‘শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের তাণ্ডবের সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা নিয়েছিল।’’ দুষ্কৃতীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে এর পর রায়গঞ্জ-শিলিগুড়ি মোড়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ শুরু করে কংগ্রেস। পুলিশ জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা বলেন, ‘‘অভিযোগ এখনও আমাদের হাতে পৌঁছয়নি। তবে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছিল। আমরা তদন্ত শুরু করছি।’’
গত শুক্রবার দুপুরে পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের সজনীকান্ত কলেজের মধ্যে এক ছাত্রকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে। মৃত ছাত্র কৃষ্ণপ্রসাদ জানা ওই কলেজেরই তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।