প্রতীকী ছবি।
টিকার অভাবে রাজ্যে পুরোদমে শুরু হয়নি ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সিদের কোভিড টিকাকরণ। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে করোনার ‘সম্মুখ যোদ্ধা’দের টিকা দেওয়া হলেও বাকিরা এখনও ব্রাত্য। তবে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই শহরের বেসরকারি হাসপাতালের বরাত দেওয়া টিকার ডোজ এসে পৌঁছবে বলে জানাচ্ছেন বেলভিউ, আমরি, মেডিকা, পিয়ারলেস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। টিকা হাতে পেলেই বেসরকারি টিকাকেন্দ্রে সাধারণ মানুষকে টিকা দেওয়া শুরু করে দেওয়া হবে। কোভিশিল্ড, কোভ্যাক্সিন ছাড়াও স্পুটনিক টিকাও পাওয়া যাবে কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে। শুক্রবার ফর্টিস হাসপাতালে শুরু হয়েছে টিকাকরণ। বাকি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে টিকাকরণ শুরু হয়ে যাবে বলে আশা করছেন কর্তৃপক্ষ।
বেসরকারি হাসপাতালে ফেজ থ্রি বা ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সিদের টিকাকরণ চালাতে টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থা থেকে সরাসরি টিকা কিনতে হবে বলে জানিয়েছিল কেন্দ্র। এ নিয়ে নির্দেশিকা জারি করে রাজ্য সরকারও। ইতিমধ্যে ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সিদের টিকার জন্য রাজ্য সরকারও কোভিশিল্ড টিকা নির্মাতা সিরাম ইনস্টিটিউট এবং কোভ্যাক্সিন নির্মাতা ভারত বায়োটেককে প্রায় ২০ লক্ষ টিকার বরাত দিয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় জোগান কম এবং চাহিদা মতো টিকার সরবরাহ নেই। ফলে সরকারি টিকাকেন্দ্রে এখনও সবাইকে প্রথম টিকা দেওয়া শুরু করা যায়নি।
মে মাসের প্রথম থেকেই বেসরকারি হাসপাতালগুলো টিকা কেনার জন্য টিকা প্রস্ততকারী সংস্থা সিরাম ইনস্টিটিউট এবং ভারত বায়োটেকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। কিন্তু পর্যাপ্ত টিকার অভাব এবং সরবরাহে একাধিক সমস্যা দেখা দেয়। ফলে শহরে হাসপাতালগুলো কবে টিকা হাতে পাবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। অবশেষে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই হাসপাতালে টিকা চলে আসবে বলে জানাচ্ছেন একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বেলভিউ ক্লিনিকের সিইও প্রদীপ টন্ডন বলেন, ‘‘স্পুটনিকের ৩০ হাজার ডোজ বরাত দেওয়া হয়েছে। কোভিশিল্ডেরও ৩৬ হাজার ডোজ জুনের প্রথম সপ্তাহেই আসতে পারে।’’ বেলভিউ ক্লিনিকে স্পুটনিক টিকা নিতে ১৩০০ টাকা খরচ করতে হবে টিকা গ্রাহককে। কোভিশিল্ডের দাম হবে ৯০০ টাকা মতো।
বেলভিউ ছাড়াও ১৩ হাজার স্পুটনিক টিকার বরাত দিয়েছে আমরি হাসপাতালও। আমরি হাসপাতালের সিইও রূপক বড়ুয়া বলেন, ‘‘সব ঠিক থাকলে ২ জুন থেকেই আমরা কোভিশিল্ড দেওয়া শুরু করে দেব। আপাতত ঢাকুরিয়া, মুকুন্দপুর এবং সল্টলেকের হাসপাতালে প্রতিদিন ৩০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে। টিকার জোগান বাড়লে প্রতিদিন ৮০০ জন পর্যন্ত টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে আমাদের।’’ এ ছাড়াও ১০ হাজার কোভাক্সিনেরও বরাত দিয়েছে আমরি হাসপাতাল। কোভিশিল্ডের প্রতি ডোজের জন্য ৮৫০ টাকা এবং কোভ্যাক্সিনের জন্য ১৪৫০ টাকা দাম বেধেছে আমরি হাসপাতাল।
মেডিকা হাসপাতালেও জুনের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রায় ৪০ হাজার কোভিশিল্ড আসার সম্ভাবনা রয়েছে। মেডিকা হাসপাতালের চেয়ারম্যান এবং এমডি চিকিৎসক অলোক রায় বলেন, ‘‘কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের দাম ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে রাখা হবে। ভ্যাকসিন হাতে পেলেই আমরা টিকাকরণ শুরু করে দেব।’’
পিয়ারলেস হাসপাতালে প্রথম দফায় ১২ হাজার কোভিশিল্ড আসছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের সিইও সুদীপ্ত মিত্র। তাঁর কথায়, ‘‘সাধারণ মানুষের কথা ভেবে দাম কম রাখার চেষ্টা করা হবে।’’
আইএলএস হাসপাতালের গ্রুপ ভাইস প্রেসিডেন্ট দেবাশিস ধর বলেন, ‘‘আগামী সোমবার কোভিশিল্ড আসতে পারে। প্রথমে আমরা স্টাফদের টিকা দেব। কত টিকা পাওয়া যায় সেটা দেখেই টিকাকরণ প্রক্রিয়া শুরু করব আমরা। তবে আমরা যে পরিমাণ টিকা চেয়ে ছিলাম তার থেকে অনেক কম টিকা পাচ্ছি।’’ টিকা হাতে পাওয়ার পরই দাম ঠিক করবে এই হাসপাতাল।
সরকারি টিকাকেন্দ্রে ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সিদের মধ্যে শুধুমাত্র নির্বাচিত গোষ্ঠীকেই করোনা টিকা দেওয়া হচ্ছে। অপর দিকে, ৪৫ বছরের বেশি বয়সিদেরও প্রথম টিকা পেতে বেগ পেতে হচ্ছে। অনেকেই আবার বেসরকারি টিকাকেন্দ্রে প্রথম টিকা নিয়েছেন। দ্বিতীয় টিকা কোন কেন্দ্র থেকে নেবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। বেসরকারি কেন্দ্রে টিকা বন্ধের পর সরকারি টিকা কেন্দ্রে মানুষের ভিড় ও ভোগান্তি দুই-ই বেড়েছে। জুন এর প্রথম দিক থেকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে টিকাকরণ শুরু হলে সেই ভোগান্তি কিছুটা কমবে।