ফাইল চিত্র।
সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী করোনা বিধি প্রয়োগ ঘিরে কার্যত উভয়সঙ্কটে পড়েছে কিছু জেলা প্রশাসন। বিধি রূপায়ণে কোথায় কতটা কঠোর হওয়া যাবে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি ছিল শুরু থেকেই। কড়া হাতে রাশ ধরার উদ্যোগ শুরু হতেই নবান্নের শীর্ষ মহলের সাম্প্রতিক হুঁশিয়ারি-নির্দেশের পরে বিভিন্ন জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি আরও কিছুটা বেড়েছে বলে অভিযোগ উঠছে।
নবান্নের শীর্ষ স্তর থেকে সম্প্রতি সব জেলা প্রশাসনের কাছে মোবাইল-বার্তা পাঠিয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, দেখা যাচ্ছে, কয়েক জন জেলাশাসক রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণ-নির্দেশিকার অতিরিক্ত কিছু বিধি প্রয়োগ করছেন। নবান্নের কাছে সেই খবর এসে পৌঁছেছে এবং পৌঁছচ্ছে। এই ধরনের বাড়তি পদক্ষেপ করা থেকে তাঁদের বিরত থাকতে হবে।
কিন্তু বিশেষ ভাবে কোন কোন ক্ষেত্রে এবং কেন এই হুঁশিয়ারি, সেটা ওই নির্দেশে পরিষ্কার নয়। ফলে বিষয়টি নিয়ে কিছুটা হলেও ধোঁয়াশায় রয়েছেন অনেক জেলাকর্তা।
কোভিড সংক্রমণ উত্তরোত্তর বাড়তে থাকায় আগের নিয়ন্ত্রণ বিধি পরিমার্জন করে গত ২ জানুয়ারি নতুন নির্দেশিকা প্রকাশ করেছিল রাজ্য সরকার। জেলায় জেলায় নৈশ নিয়ন্ত্রণ বিধি যাতে কঠোর ভাবে প্রয়োগ করা হয়, বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছিল তার উপরে। দরকারে জেলা প্রশাসনগুলিকে কন্টেনমেন্ট ও মাইক্রো-কন্টেনমেন্ট জ়োন বা গণ্ডিবদ্ধ এলাকা তৈরির নির্দেশও দেয় নবান্ন। সেই নতুন নীতি-নির্দেশিকা অনুযায়ী করতে হচ্ছে জেলা-কর্তাদের।
কিন্তু এখন আচমকা নবান্নের ওই নতুন বার্তায় অনেক জেলা-কর্তাই বিস্মিত। কড়াকড়ির নির্দেশ দিয়ে এখন আবার এই বার্তা কেন, তার নির্দিষ্ট কারণ বলতে না-পারলেও সংশ্লিষ্ট মহল জানাচ্ছে, কোভিডের কারণে অনেক জেলাতেই পূর্বনির্ধারিত বিভিন্ন মেলার অনুমতি প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছে। নবান্নের বার্তার নেপথ্যে সেই অবস্থান কাজ করছে কি না, তা নিয়ে চর্চা চলছে জেলা প্রশাসনের অন্দরে।
জেলাগুলির একাংশ অবশ্য জানাচ্ছে, সরকারের স্থির করে দেওয়া নিয়ন্ত্রণ বিধিতে পৃথক ভাবে মেলার কোনও উল্লেখ না-থাকলেও বলা ছিল, সামাজিক, ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক জমায়েতে ৫০ জনের বেশি লোক থাকতে পারবেন না। মেলাও কার্যত সামাজিক বা সাংস্কৃতিক অথবা উভয়ের সঙ্গেই সম্পর্কযুক্ত। ফলে সেই নিয়ম মানতে হলে মেলার আয়োজন করা চলে না। আর করা হলেও কোনও মেলায় সমাগম ৫০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। সেই কারণেই নির্দিষ্ট সব মেলাই বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।
মাস্ক পরার বিষয়টিতে রাজ্য সরকার প্রথম থেকেই বিশেষ ভাবে জোর দিয়ে আসছে। কোভিডের চলতি তরঙ্গে আরও বেশি করে বিধি মেনে চলার ব্যাপারে পরামর্শ দিচ্ছে নবান্ন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে সম্প্রতি জানান, নবান্নের শীর্ষ মহলের দু’টি বক্তব্য ছিল। প্রথমটিতে জানানো হয়েছিল, ‘প্রশাসন জোর করে কাউকে গ্রেফতার করে বা জরিমানা করে মাস্ক পরাতে পারে না। নিজেকে বাঁচাতে মানুষ নিজেরাই সচেতন হতে পারে।’ দ্বিতীয় বক্তব্য ছিল, ‘পুলিশকে কড়া হাতে মোকাবিলা করতে হবে। অনেকেই কথা শুনছেন না। মাস্ক পরছেন না।’
ঘটনাচক্রে এই মাস্ক নিয়েও বেশ কয়েকটি জেলায় কড়াকড়ি শুরু করেছে প্রশাসন। সেই কড়াকড়ি নবান্ন পছন্দ করছে কি না, তা নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে জেলা প্রশাসনের অন্দরে।