আর জি করে কোভ্যাক্সিন দেওয়া চলছে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের। বুধবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
করোনার প্রতিষেধক কোভ্যাক্সিন নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা সংশয় তৈরি হয়েছিল। তা কাটাতে, বুধবার প্রথম দিনেই প্রতিষেধক নিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তা এবং চিকিৎসকেরা। শহরের তিনটি মেডিক্যাল কলেজে ওই প্রতিষেধক দেওয়া হয়। আরজিকর এবং এসএসকেএম মিলিয়ে মোট ৪৮ জন কোভ্যাক্সিন নিলেও, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে এক জনও তা নেননি। কিন্তু কেন এমনটা হল তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এ দিন প্রতিষেধক নেওয়ার পরে একজনের মধ্যেও পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি।
রাজ্যের কয়েকটি জেলাতেও পৌঁছে গিয়েছে এই কোভ্যাক্সিন। তবে সেখানে এখনই তা দেওয়া হচ্ছে না বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। স্বাস্থ্য কর্তারা জানিয়েছেন, শহরের তিনটি মেডিক্যাল কলেজের প্রতিটিতে কোভ্যাক্সিন দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছিল ২০ জন করে। ওই প্রতিষেধকের একটি ভায়াল থেকে ২০টি ডোজ়ই হয়। সর্বোচ্চ চার ঘণ্টা একটি ভায়াল খুলে রাখা যায়। তারপরে আর সেটি আর ব্যবহার করা যাবে না। এ দিন সকালেই এসএসকেএমে গিয়ে কোভ্যাক্সিন নেন জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের রাজ্যের অধিকর্তা সৌমিত্র মোহন, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য এবং জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের রাজ্যের আরেক আধিকারিক স্মিতা সান্যাল শুক্ল। কয়েকজন শিশু চিকিৎসকও সেখানে কোভ্যাক্সিন নেন। এসএসকেএমে মোট ১৩ জন ওই প্রতিষেধক নিয়েছেন।
আরজিকরে এ দিন ৩৫ জন চিকিৎসক কোভ্যাক্সিন নিয়েছেন। ওই হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান তথা ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক জ্যোর্তিময় পাল বলেন, ‘‘প্রায় ৫৫-৬০ জন কোভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করলেও অ্যাপের সমস্যার জন্য এ দিন সবাই তা নিতে পারেননি। আমরা শিক্ষকেরা যত কোভ্যাক্সিন নিতে এগিয়ে আসব, ততই অন্যান্যরা সাহস পাবেন।’’ এ দিন এসএসকেএমে একটি এবং আরজিকরে দুটি ভায়াল খোলা হলেও তা পুরো ব্যবহার করা যায়নি।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস জানিয়েছেন, কোভ্যাক্সিন নেওয়ার জন্য তাঁদের হাসপাতালে ৬ জন নাম লিখিয়েছিলেন। কিন্তু ২০ ডোজ়ের ভায়াল খুলে ৬ জনকে দিয়ে বাকি ১৪ ডোজ় নষ্ট করতে চাননি তাঁরা। ওই গ্রাহকদের নাম নথিভুক্ত করে রাখা হয়েছে। ইন্দ্রনীলবাবু বলেন, ‘‘চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মীদের কাছে কোভ্যাক্সিনের উপযোগিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমের বিষয়টিও জানানো হচ্ছে। আশা করছি আগামী দিনে অনেকেই ওই প্রতিষেধক নেবেন।’’
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানান, এ দিনও কো-উইন অ্যাপ বিভ্রাটের ফলে প্রতিষেধক দেওয়ার কর্মসূচীতে মারাত্মক সমস্যা হয়েছে। ৭০-৮০ শতাংশের কাছে বার্তাই পৌঁছয়নি। এ দিন রাজ্যে ৩৫ হাজার লক্ষ্য মাত্রার মধ্যে ১২,৭২৫ জন কোভিশিল্ড প্রতিষেধক নিয়েছেন। পাশাপাশি অন্তত ৪০-৪৫ জনের নাম পোর্টালে না মেলায় তাঁরা কোভ্যাক্সিন নিতে পারেননি। অজয়বাবু বলেন, ‘‘পোর্টাল সমস্যার জন্যই প্রতিষেধক নেওয়ার হার কম হচ্ছে। তবে কোভ্যাক্সিন নেওয়া গ্রাহকদের কারও কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।’’
পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় পাঁচ হাজার ডোজ় কোভ্যাক্সিন পৌঁছেছে। অন্যদিকে ঝাড়গ্রাম জেলায় ১৩,২৮০টি করোনা প্রতিষেধক পৌঁছেছে। এর মধ্যে সাড়ে ১২ হাজার কোভিশিল্ড, বাকি কোভ্যাক্সিন। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেড় হাজার, কালিম্পঙে ৬৪০, দক্ষিণ দিনাজপুরে ১,২৮০ ডোজ় কোভ্যাক্সিন পৌঁছেছে। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে তা দেওয়ার কথা। এছাড়াও পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও বীরভূমেও কোভ্যাক্সিন পৌঁছেছে।